Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৩০)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৩০)

পুপুর ডায়েরি

বিজয়া বললেই আমার মেজ পিসে মশাইয়ের কথা মনে পড়ে। ছোটো বেলায়, যখন আমরা সবে সবে কথা বলে নিজেদের পরিচয় বলার গর্বে ডগমগ হচ্ছি, আমার ফুটফুটে সুন্দর একেবারে পিঠোপিঠি পিসতুতো বোন প্রভা রিনরিনে গলায় কথা বলত। বাবার নাম কি? —- কেউ প্রশ্ন করলেই চাবি দেওয়া ডল পুতুলের মত ঘাড় কাত করে বলত, বিজয়ায়ায়া পদ মুখার্জি। সবাই খুব মজা পেতাম। অনেক বার শুনতাম সবাই। প্রভা ত মুখে মুখে পোভা, তার ডাক নাম ওদিকে, হুরি। আরেকটু বড় হতে, ওদের জামালপুরের বাড়িতে একটা মিষ্টি বাচ্চা এসেছিল, তার খাতিরে, সে হয়ে গেল ক্ষণপ্রভা। তা সে যাই হোক, তার আরও গল্পগাছা আছে বটে। পরে বলি। কিন্তু মোদ্দা কথা আগে আমরা ঘাড়ে ঘাড়ে থাকতাম, আর এখন চুল দু জনেরই সাদা হবার পর পাঁচ সাত বছর পর হয়ত দেখা হয়, তবুও সে সময়ের ফাঁক আমরা টের পাইনা। দেখা হলেই মনে হয়, হ্যাঁ কালই ত একসাথে হ্যা হ্যা করছিলাম। এ মজাটা টিকে আছে। তো, আমার খুব সুন্দর দাদা, যাকে আমার ছেলে মেয়ে ডাকে সুন্দর মামা, বাকি সবাই ভালো নাম সুকুমার বলে ডাকে, সু, আর আমার বাবার মুখের ডাক ধরে আমি ডাকি ভোম্বল দাদা, সে বড় হয়ে হিন্দ মোটরের কাছে বাড়ি করল। ওর ছেলেবেলার একটা ছড়া আবার, আমার ছানারাও আমার বাবার মুখে শুনে বড়ো হয়েছে কিনা। "ভোম্বল লালা, মুরগা পালা, আণ্ডা সফেদ বাচ্চা কালা… " ওর আদরই আলাদা। ত, সেই বাড়িতে দাদা, প্রভা, পিসিমা, মানে আমার বাবা মায়ের আদরের এলু, আর বিজয় পিসেমশাই, সেই যে বিজয়ায়াপদ মুখার্জি খুব আনন্দ করে রইলেন। প্রভা আর আমার চেয়ে বড়ো, দাদার চেয়ে ছোট আমার শোভা দিদি, যাকে কিনা ছোটো বেলায় আমার কাকা বাবার নারকেলের ছোবলা বলত, আর মাথায় ব্যথা পেয়ে নারিকেল ফট হয়ে গেছে বললে সে ব্যথায় চোখের জল নিয়েও হেসে ফেলত, সে তখন বর্ধমানে বরের সাথে থাকতে গেছে। তাদের অনেক গল্প আছে। সে অন্য দিন বলব। তাদের ছেলেটা আমার কলেজেই পড়ে শুনে মস্ত ডাক্তার হয়েছে এখন। সে আর আমি দু জনেই পিসিমার শরীর খারাপ শুনে দেখতে গেলাম। তিনি শুয়ে শুয়েও এক গাল হেসে বললেন, দেখ পোভা, আজ আমার ঘরে দুটো ডাক্তার। দেখেশুনে ফিরে এলাম। মনের ভেতর কাঁটার মত কি খচখচ করতে থাকল। খুব যত্নে আছেন মানুষটি, কিন্তু সময় কমে আসছে মনে হয়। সকাল সকাল প্রতিমা নিরঞ্জন হচ্ছিল সে বছর। আমার বুকের মধ্যে রাখা মোবাইল ফোন নিয়েই মণ্ডপে জলে পুরোহিত মায়ের পা দর্পণে দেখতে বলছেন বলে উপুড় হয়ে দেখে নমো করলাম। চোখ বুজে মাথা ঠেকাতেই ঢাকের আওয়াজে মিশে গেল ফোনের রিংটোন। আমার বুকের মধ্যে কে বলে উঠলো রওনা হয়ে গেলেন পিসিমা। এই বিজয়ার প্রণামের সঙ্গেই। প্রণাম সেরে উঠেই ফোন খুললাম। হ্যাঁ, প্রভার মিসড কল। ফিরে কল করতেই বলল, হ্যাঁ গো রওনা গেয়ে গেল। সেই থেকে, বিজয়ার দর্পণ এ প্রণাম আমার পিসিমা আর পিসেমশাইয়ের কাছেও পৌঁছে যায়। বিজয়ার বিষন্নতা আমার পারিবারিক বন্ধু হয়ে গেছে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register