Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১)

স্ট্যাটাস হইতে সাবধান

খুদকুঁড়ো, পোকালাগা গম, ভাঙা ভুট্টার দানা, অরহর ডাল, পোকায় কাটা ফুটো হয়ে যাওয়া ছোলা এইসব হাবিজাবি দিয়ে কিলো দুয়েকের ঘ্যাট বানিয়ে পাড়ার কুকুরগুলোকে ডাক পাড়া মাত্রই এগলি ওগলি সেগলি থেকে গোটা বিশ পঁচিশটা নেড়ি এসে রোজ ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষান্তমাসির পায়ের কাছে। কয়েকভাগে ভাগ করে রাখা সেই অখাদ্যগুলোকে এসেই গবগব করে গিলতে থাকে কুকুরগুলো। হপ্তায় মাত্র একদিন শুক্কুরবার পাড়ার সুজনির দোকান থেকে মুরগীর পায়ের পাতা, ডানার শেষপ্রান্ত, কাটাঠোঁট এইসব ফ্যালানো উচ্ছিষ্ট এনে একসাথে সেদ্ধ করে তারপর ডাক পারেন -- আয় আয় তু তু তু তু --- বছরের শীতগ্রীষ্ম বারোমাস ক্ষান্তমাসি এই অতিথিসেবা চালিয়ে যান। কেউ কেউ কখনও কখনও ক্ষান্তমাসির এই কাজকে সামাজিক মূল্যবোধের জ্বলন্ত অনুপ্রেরণা বলে রঙ্গ ব্যাঙ্গ করেন, কিছু অর্থসাহায্য করবেন কিনা জিজ্ঞাসা করেন, কেউ কেউ খাবারের মান নিয়ে ফুড কন্ট্রোলে জানাবেন বলে ক্ষান্তমাসির কানের গোড়ায় এসে লাউডস্পিকার লাগান। কিন্তু ক্ষান্তমাসি নির্বিকার। মেসো কর্পোরেশনে কনজারভেন্সির গাড়ি টানে। ভ্যাট থেকে ডাম্পারে নোংরা চালাচালি করেন। কাজেই ক্ষান্তমাসি নিশ্চিত জানেন যে ওদের সংসারে যা আয়ের অবস্থা সেটা করে এরচাইতে আর ভালোকিছু খাওয়ানো ওর পক্ষে অসম্ভব। পাড়ার ফুলটুসি বৌদি ক্ষান্তমাসির কাজকারবার প্রত্যেকদিন লক্ষ্য করেন। কয়েকদিন অর্থ সাহায্যের কথা বললেও মাসির কানের গোড়া পর্যন্ত সে কথা পৌঁছোয় নি। অবশেষে ফুলটুসি বৌদি একদিন গিয়ে হাজির হন সুজানির কাউন্টারে। কিলো দুয়েক মেটে, গলা, পাখনা, মাথা, খাওয়ার থলি কিনে বাড়ির রান্নার বৌকে দিয়ে বেশ করে কষিয়ে এসে পথে দাঁড়িয়ে ডাক ছাড়েন ----- আয় আয় তু তু তু তু... নেড়ি গুলো যে এতোটা বেইমান ফুলটুসি বৌদি সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন নি। খাবারের গন্ধে বৌদির পর্যন্ত নোলা গড়িয়ে জল বেরিয়ে আসছে কিন্তু ওই হারামি কুত্তাগুলোর সেদিকে কোনো তাপ উত্তাপ নেই। দুচারটা কুকুর এসেছিলো ঠিকই কিন্তু গন্ধ শুঁকে পেছনের দুঠ্যাঙের মধ্যে লেজটাকে ঢুকিয়ে সেই যে কুঁই কুঁই করতে করতে দৌড় লাগালো ব্যাস, আর কোনোদিনও তাকে ওখানে দেখা গেলো না। ফুলটুসি বৌদি এ পাড়ায় বৌ হয়ে এসেছেন প্রায় বছর সাতেক হলো। নতুন নতুন পাড়ার ছেলে ছোকরাদের বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে নেওয়া ঝাড়ির কোনো প্রতিঝাড়ি দিতেন না ঠিকই তবে ভালোই এনজয় করতেন। কখনও সন্ধ্যের পর বিভিন্ন ঠেক টপকে যখন তার আঁচল রাস্তা ঝাঁট দিতে দিতে পথের ওপর উড়তো তখন অনেকের বুকেই যে জগঝম্প বাজতো সেটা আশপাশের থেকে উড়ে আসা শব্দরাই জানান দিতো বৌদিকে। পরবর্তী সময়ে কবিত্রী ফুলটুসি খাসনবিশের কবিতার ছত্রেছত্রে সেই সব শব্দেরাই যে অনুপ্রেরণার যোগানদার হয়েছে সে সম্পর্কে কোনোরকম সন্দেহ নেই। সে যাই হোক গে, আসল কথায় আসা যাক। আসল বিষয়টা হচ্ছে গিয়ে স্ট্যাটাস। একজন কর্পোরেশনের নোংরা বওয়া হাজব্যান্ডের বউ, ক্যালাস মার্কা, ক্ষয়াটে শরীর, ছেঁড়া শাড়ি ছেঁড়া ব্লাউজ, কালি ভূতি, ঝিমার্কা ক্ষেন্তির কাছে হার মানাটাকে মোম পিছল আঠাশের মেদহীন পেট, দুইঞ্চি ব্লাউজের হার না মানা পিঠ, টসটসে আঙুর ডোবা নাভি, সুতোটুকুর বাঁধনে বাঁধনহারা কাঁধের মালকিন, অলিগলির উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের হার্টথ্রব ফুলটুসি বৌদি সামান্য কুত্তাপ্রেমে হেরে যাবেন সেটা কী করে সম্ভব?

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register