Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গদ্যে স্মিতা ভট্টাচার্য্য

maro news
গদ্যে স্মিতা ভট্টাচার্য্য

আরাবুল ও মেয়েটি 

সবাই তাকাতে জানে না স্মিতা।সবাই বোঝাতেও পারে না ঘুম আসার আর ঘুম ভাঙার মাঝে সে কতো বড়ো দুনিয়া ঘুরে এলো। আমাদের দেশের বাড়িতে একটা কুয়ো ছিলো,জানো? মাসির বাড়ি গেলে টিভিতে হিন্দি কথা শুনতাম,টিভিতে সুইমিং পুল দেখতাম।বাড়ি ফিরে কুয়োর ভিতর লাফাতে থাকা ব্যাঙগুলোকে দেখে আমার খুব হিংসে হতো। আমার ঠাকুরদা আমার সাথে আরাবুলের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।আরাবুল আর আমি অসমবয়সী। আমি যখন আট,আরাবুল ষাটেরও ওপারে। আরাবুলকে একদিন কুয়োর ব্যাঙগুলোর প্রতি আমার হিংসার কথা জানাতে ও হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেছিলো,ওর একমাত্র ছেলে নাকি ছোটবেলায় কুয়োর ব্যাঙ ধরতে গিয়ে কুয়োর ভিতরে পড়ে মারা গেছে। তারপর আমার দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো। ওই দৃষ্টি আমি তখন বুঝিনি ঠিকই,তবে অ-আ-ক-খ এর মতোই মনে রেখে দিয়েছি।
সেবারের বইমেলায় একখানা 'বঙ্কিম রচনাবলী' হাতে নিয়ে সাদা ওড়না গায়ে মেয়েটা দাঁড়িয়েছিলো। আমি তাকে যে কী মুগ্ধ চোখে দেখছিলাম,কী বলবো। মেয়েটা কাজল পরেনি,টিপ পরেনি...তবুও ওকে শিল্পীর মতো লাগছিলো। ওকে দেখে আমার বোনের কথা মনে পড়ে গেলো। ভুল বোঝাবুঝিতে দীর্ঘকাল কথা নেই। ও আমার দিকে এগিয়ে এসে বলেছিলো," প্লিজ কিছু মনে করবেন না,আমার দাদা,বেঁচে নেই আর,হুবহু অপনার মতো দেখতে জানেন!..."
আমি মেয়েটির সঙ্গে প্রথমবারের মতো আরাবুলের সেই দৃষ্টিটা মিশিয়ে ফেললাম।
আমি শুধু ভাবি, এই পৃথিবীতে "ও চলে গেলো,ও আমাকে ভুলে গেলো,আমি ওকে ভালোবাসি,আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে..."-এর বাইরেও কতো বড়ো একটা মায়া আছে। না?
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register