Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৩৯)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৩৯)

পুপুর ডায়েরি :

পু দাদাদের , মানে চঞ্চল বাবুদের বাড়ি থেকে আমরা পাশের বাড়িতে চলে এসেছিলাম । সেটাই পাপুদের বাড়ি । আগের বাড়ির চেয়ে এটা বড় ছিলো একটু । রান্না ঘর ছিলো পিছন দিকে লম্বা গলি দিয়ে গিয়ে । আর তার পাশে বাথরুম।তাতে ছোট পুপুর গলা সমান উঁচু বাঁধানো সিমেন্টের চৌবাচ্চা । আগে তাতে বালতি দিয়ে দিয়ে পাশে থাকা কল থেকে জল ভরতে হত । এ বাড়িতে আসার কিছু দিনের মধ্যেই বাবা প্লাস্টিকের পাইপ আর তার কায়দার মুখ ফিট করে দিলেন কলের মুখে । ব্যস । ভারি মজা । সেই পাইপ দিয়ে রোজ পরিষ্কার জলে ভরতি হতে থাকল চৌবাচ্চা । এক দিন গেলেই মা নিচের দিকের ছিপি খুললে সব জল বের করে দিয়ে ঠিকে কাজের মাসিকে দিয়ে ভেতরে পরিষ্কার করিয়ে রাখতেন । কে সি নাগের চৌবাচ্চার অঙ্ক বুঝতে কোনো অসুবিধেই নেই । ওপরের পাইপ দিয়ে জল ঢুকছে আর নিচে দিয়ে কুলকুল করে বেরিয়ে যাচ্ছে দিব্যি । করো না কত অঙ্ক করবে । আর যারা জল ঘাঁটুনি পাজি বাচ্ছা , বাড়িতে বাবা মা না থাকলে তার কীই আনন্দ ! সে হুরহুর করে জল ভরে । ঝুঁকে পড়ে খলবল করে জল্ ঘাঁটে । তাতে সাবান ফেলে । কাগজের নৌকো বানিয়ে ভাসায় । জামাকাপড় ভিজে চুব্বুড় হয়ে থাকে । সারা দুপুর গড়িয়ে গেলে নিচের প্যাঁচ খুলে জল বের করে দেয় । বিকেলে ফের পরিষ্কার জলে চৌবাচ্চা ভরে নেয় । মা আসার আগে শুকনো জামাটামা পরে ভদ্র হয়ে থাকলেই ত্ হল । খালি কান ব্যথা , গলা ব্যথা , সর্দি , সাইনাসের যন্ত্রণা , জ্বর , টন্সিল ফুলে ঢোক গিলতে কষ্ট । মা অস্থির হয়ে ছুটি নিয়ে কোলে করে বসে থাকেন । বিকেলে ডাক্তার বাবুর চেম্বারে , মানে অরুণ ভট্টাচার্য ডাক্তার বাবুর যে চেম্বার চারু মার্কেটের সামনের দিকে , ঢোকার গেটের পাশেই , সেইখানে নিয়ে যান । ডাক্তার বাবু শুধু ত চিকিৎসক নন , বাবা মায়ের আত্মীয়সম বন্ধু । তিনি ও চিন্তিত হন । আহা, মা গো , আবার ঠাণ্ডা লাগিয়ে ফেললে ? পার্টিশনের ওদিকে সবুজ রেক্সিনে মোড়া রুগি দেখার বিছানা । টক করে লাফিয়ে উঠে শুয়ে পড়ে পুপু । এত নিত্যদিনের কাজ তার । সে জানে লম্বা শ্বাস নিয়ে হয় , স্টেথোস্কোপে পিঠ ও দেখবেন ডাক্তারবাবু । তারপর , জিভ বের করো , অ্য্যা বলো … পিছন দিকে আরেকটা পার্টিশন দেয়া জায়গায় নিজে ওষুধ বানিয়ে দিতেন ডাক্তারবাবু , মিক্সচার , পুরিয়া । তখন এত ওষুধের কম্পানি ছিল না । ডাক্তাররা কম্পাউন্ডিং ও জানতেন । জ্বর হলে কান কটকট করলেও ভাল লাগে পুপুর । মা বাড়িতে । দুপুরে মায়ের কোল ঘেঁষে খাওয়া মায়ের হাতে । জ্বরে নো ভাত । পাউরুটি আর পেঁপে কাঁচকলা দিয়ে মাছের ঝোল । মা খাইয়ে দিলে আদা জিরের ঝোল যে কী ভালো । আর তার সাথে , সর্দি নিয়ে নাকি সুরে , গল্প বলোওঁ , বললে, মা খাওয়াতে খাওয়াতে অনেক গল্প বলেন। আর অনেক গল্পের শেষে মাকে রোজ এক বার বুদ্ধু-ভুতুম বলতেই হয় । নইলে খাওয়া শেষ হয় না ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register