Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে নীল মিত্র

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে নীল মিত্র

কর্ণের জীবন গাঁথা

মহাভারতের কর্ণের জীবনটা তোমার কেমন লাগে? বিশাল হঠাৎ বৈশাখীর কাছে জানতে চাইলো। বৈশাখী বলতে লাগল - কর্ণ আমার ভীষণ পছন্দের চরিত্র। ওর মতো বীর, সাহসী যোদ্ধা খুব কম ছিল তখন। অন্যদিকে ও দানবীর ছিল। বিশাল বললো - যদি তুমি কর্ণের মতো কাউকে পাও তবে তাকে বিয়ে করবে? কর্ণের জন্ম, তার পরিচয়, তার জীবনের অন্ধকারময় কাহিনী আছে, বৈশাখী একটু চিন্তায় পরে গেলো। সমাজের কটাক্ষ ও সমালোচনার ব্যাপার ও আছে। যদি এমন কোন ছেলেকে বিয়ে করতে হয় তবে বৈশাখীকে অনেক বাঁধার মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের সমাজে আজকের যুগেও বংশ পরিচয় নিয়ে মাতামাতি করা হয়। স্কুলে ভর্তি করার সময় বাবার নাম লিখতে হয়। কর্ণ তো সূর্যপুত্র ছিল, কিন্তু সূর্য কখনও তার নামের পরিচয় কর্ণকে দেয়নি, কর্ণ পালনকর্তার নামেই সূতপুত্র নামে পরিচিতি পেয়েছে। ওর মা কুন্তি, হস্তিনাপুরের মহারানী, কিন্তু সেও জন্মের পর পুত্রকে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়েছিল নিজের মান সম্মান যাতে নষ্ট না হয়। বৈশাখী আর বিশাল এর সাথে পরিচয় এফ.বি. থেকে, কথা বলতে বলতে ওরা একে অপরের মনের কাছাকাছি চলে এসেছে। তাই আজ প্রথম দিন ওরা দেখা করতে এসেছে কফি হাউসে। বৈশাখী তুমি সময় নিয়ে ভেবে উত্তর দিও। তারপর দুজনে কফি আর কাটলেট-টা শেষ করে উঠে পড়ল। বৈশাখী ভাবতে লাগল বিশাল ওকে কেনো এমন অদ্ভুত প্রশ্ন করলো। বিশাল ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের অফিসার, ওর ভয়ে দেশের শত্রুরা কাঁপে। উচ্চশিক্ষিত আর দেখতে সিনেমার নায়ক এর মতো। ওর মতো ছেলেকে সব মেয়েই পেতে চাইবে স্বামী হিসেবে। সারারাত বৈশাখী চিন্তা করে বিশালকে লিখে পাঠালো আমি পরের সপ্তাহে তোমার সাথে দেখা করতে চাই। পুরো একটা সপ্তাহ বৈশাখী ভাবলো তারপর দেখা করতে গেল সেই কফি হাউসে। বিশালকে দেখে আজ ওর কেমন যেন মনে হলো, যেন ওর উপর দিয়ে অনেক চাপ গেছে। বিশাল বললো আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো, তাই তোমাকে আমি ঠকাতে পারব না। আমার বাবা আর মা প্রেম করেছিল, তাদের প্রেমের ফলস্বরূপ আমার জন্ম। কিন্তু বাবা পরিবারের ভয়ে পিছিয়ে গেলো, আর মা তার মান সম্মান বাঁচাতে জন্ম তো দিলো কিন্তু কুমারী মা পরিচয় দিতে পারল না। আমি দিদিমার নামে পরিচিতি পেলাম। কথাটা শুনে বৈশাখীর দু'চোখ ভরে এলো। এতো কষ্ট সয়ে বিশাল বেঁচে আছে! কিন্তু ওকে দেখে তো মনে হয় না ওর জীবনে এতো বড়ো ঝড় সব তছনছ করে দিয়েছে। বৈশাখীর মনে হচ্ছিল বিশালকে বুকে জড়িয়ে ধরে ওর সব কষ্ট জুড়িয়ে দেবে। বাড়ি ফিরে অনেক চিন্তা ভাবনা করে একটা ম্যাসেজে লিখলো - বিশাল আমি খুব ভালোবাসি তোমাকে, মন চাইছে তোমাকে বিয়ে করে তোমার জীবনের সব না পাওয়া গুলো পূরণ করে দেই। কিন্তু সমাজ ও পরিবার এটা মেনে নেবে না। আমার এতো সাহস নেই যে সারা পৃথিবীর সাথে লড়তে পারবো। তুমি ভালো থেকো আর কর্ণের মতো বীরের জীবন কাটিও। উত্তরে বিশাল শুধু এটুকু লিখে পাঠালো - আমাদের সমাজে সব কর্ণদের জীবন একরকমের হয়, তাদের লড়াই তাদের একাকি-ই লড়তে হয়।।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register