Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || সমবেত চিৎকার || 26য় নবকুমার মাইতি

maro news
T3 || সমবেত চিৎকার || 26য় নবকুমার মাইতি

তুমি কি সেই স্বাধীন ভারত

তুমি কি সেই স্বাধীন ভারত যার জন্য এত রক্তগঙ্গা, এত তাণ্ডব নৃত্য শুধু তোমাকে দেখার জন্য স্বাধীনতা সাজানো বাগান তছনছ হয়ে গেল কপাল ভাঙলো কত মা-বোনের, হিসেব মেলানো ভার! ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে কত মন্দির মসজিদ দালান কামার কুমোর, জেলে, কারখানার শ্রমিক লক্ষ-কোটি শিক্ষিত তরুণ আজ বেকারত্বের খাতায় বিস্ময় বিমূঢ় হয়ে বসে থাকি তুমি কি সেই স্বাধীন ভারত যাকে পাওয়ার জন্য কাজা হয়ে গিয়েছিল ভোরের আজান, শত সহস্র মা-বোনের সম্ভ্রম ধূলোয় ভূলুণ্ঠিত, অনিদ্রায় অনাহারে অগণিত মানুষ ভিটে হারা, হারিয়েছে পড়শি স্বজন চারিদিকে ছড়িয়ে ছিল মৃত্যুর বীভৎস গন্ধ দগ্ধ, রক্তাপ্লুত যারা নির্বিচারে গণহত্যা করেছিল বারবার সেই ব্রিটিশ বেনিয়া ইংরেজ। আজ যন্ত্রণা' স্বজাতির উনিশ’ শ সাতচল্লিশের ভূমিষ্ঠ শিশু আজ বৃদ্ধ, বুকের কলিজার ক্ষত, আজও অক্ষত তুমি কি সেই স্বাধীন ভারত যার জন্য মুছে গেছে কত মায়ের সিঁথির সিঁদুর স্তব্ধ হয়ে গেছে কত বোনের ভাতৃদ্বিতীয়া সদ্য যুবতী বধুর স্বামীহারা আর্তচিৎকারে গগন বিদীর্ণ হয়ে গেছে, পরনে সাদা থান নিষ্পাপ দুধের শিশু ঝাঁপিয়ে পড়ে পিতামাতার লাশের উপর সজনের দগ্ধ দেহ দু'পায়ে মাড়িয়ে যায় হিংস্র বুটের তলায় মেহনতী মানুষের ঘাম ও রক্তের বিনিময়ে আমরা কি চেয়েছিলাম এই মেকি স্বাধীনতা ? বেইমান-বিশ্বাসঘাতক এর শাণিত রক্তচক্ষুর আস্ফালন উঞ্ছবৃত্তিপরায়ণ মানুষ আজ দণ্ডমুণ্ডের কর্তা আসমুদ্রহিমাচল আজ তস্করের রাজত্ব! বিশ্বাস করো আমরা এদেশ চাইনি , আমরা এ স্বাধীনতা চাইনি! আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ঙ্কর কৃষ্ণপক্ষ সেঁটে দিয়েছিল, তাদের ক্ষমা করবে কে? তাদের কবর দেখে যাবে না অসীম কালের স্রোতে! এই স্বাধীনতা আমাদের কাম্য নয়, এই দেশ মাতৃকা আমাদের উপাস্য দেবী নয়। রাক্ষসী ডাইন ঘুরে বেড়ায় চারিদিকে রক্ত শোষণের উন্মুক্ত উল্লাসে এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আড়ষ্ট কুমারী ভারত জননী! নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দোলে মাংসের তুফান নির্মম নির্লজ্জ সত্য, ড্রাগ ও ড্রাগনের স্পর্শে কলুষিত পৃথ্বী এ গ্রহের জীব পালাবে কোথায়, কোথায় পাবে শান্তির অমৃত আস্বাদ? মাটিতে বজ্র কিট ক্রমশ কুরে খায় জৈবিক মেধা ও মনন! দেশপ্রেমিক স্থিতধী মানুষের আজ বড়ই আকাল, বাইরে বর্ণাঢ্য ক্যানভাস তুমি কি সেই স্বাধীন ভারত এই স্বাধীনতার জন্য কি রেবা ও রাবেয়া মন্দিরে মসজিদে বুড়ো শিবতলায় মানত করেছিল ভালোবাসার নৈবেদ্য অন্তরের আকুতি, ভুবন সোম আর ইসমাইল গাজী একে অপরের দুঃখ ভাগ করে নিয়েছিল ভারত জননীর ছিন্ন বস্ত্রের কালিমা মোছাতে, নেভাতে জননীর জঠরাগ্নি কারখানার গনগনে তাপে ঝলসে যাওয়া শ্রমিক পীরের দরগায় সিন্নি দিয়েছিল ভারতের কল্যাণ কামনায় আজ পিতা-মাতার চিতার সামনে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে! তুমি কি সেই স্বাধীন ভারত যার জন্য অগণিত তরুণ তুর্কি নওজোয়ানের রক্তে মাতন ধরেছিল, জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে পথ চলার হাজার হাজার বোম বন্দুক ট্যাংক টর্পেডো মাইন কামান বিশ্বযুদ্ধে জাপানের এটম বোমের ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ আস্ত একটা জাতি আজ বিকলাঙ্গ হয়ে পথ হাঁটে অগণিত অাতুড়ে নবজাতক হতাশার প্রহর গোনে মাটিতে দগদগে রক্তের দাগ, চালের গোডাউনে তবু জমা হয় লক্ষ-কোটি অনাহারী মানুষের হাড়! আত্মজার বুকের ভয়ঙ্কর ক্ষত। স্বজনের দগ্ধ কালশিটে দেহ অত্যাচারের জীবন্ত দলিল উদ্বাস্তু মানুষের ভিড় নাগরিকত্ব হারানোর যন্ত্রণায় ক্ষত বিক্ষত ঘুম আসেনা, তন্দ্রাহীন বিনিদ্র রজনী, শুধুই অনুশোচনার দহন মুখে উন্নয়নের ফুলঝুরি, রাষ্ট্রপ্রধানেরা একে অপরের চরিত্রহননে ব্যস্ত সীমান্তে মুহুর্মুহু রণভেরী,সমাধান সুদূর পরাহত এরপরেও কি বলবে আমরা স্বাধীন ভারতের নাগরিক ! তুমি কি সেই স্বাধীন ভারত যেখানে ছমছমে নিবিড় নিশুতি রাতে ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি তন্দ্রার ভেতরে সেই কবে ভুলে গেছি সাথী নক্ষত্রের আলো বাড়ির ঈশান কোণে বকুল গাছটা আচমকা কেঁপে ওঠে মনে পড়ে সেই হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর মাটিতে ওঁয়া ওঁয়া কেঁদেছিল সভ্যতা .................... আজকের দিনে সভ্যতা-সংস্কৃতি, মানবতা সাইনবোর্ড সর্বস্ব। চারিদিকে সন্ত্রাস মারণ ভাইরাস খরা ও প্লাবন, বেনোজলে ভেসে গেছে কাঙ্খিত কত আশা স্বপ্ন পদাবলী, বঙ্গবধুর ঠোঁটের সুমধুর হাসি নিসর্গের হাতছানি, শরতের শুভ্র আকাশ আমার প্রিয় স্বজনের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল নেই ,কিছু নেই ,কেউ নেই আত্মার স্বজন যারা ছিল দুঃখের দরিয়ায় একমাত্র শান্তি ও সান্তনার আশ্রয় , দেশের মা ও মাটি রক্ষার শেষ সম্বল সে অার ফিরবে না কোনদিন- যে রাখাল উদাস দুপুরে তার বাঁশির মোহন সুর ছড়াতো বাতাসে সে অার ফিরবে না কোনদিন- যে নারী সিঁথায় লাল সিঁদুরের স্নিগ্ধ প্রেমে এঁকেছিল মুগ্ধনীল সে আর ফিরবে না কোনদিন- দেশরক্ষায় রাইফেল হাতে গর্জে ওঠা তাহিতি যুবক! বিস্তৃতির বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে রয়েছি একা মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠে সুতীব্র যন্ত্রণা আগ্রহের উর্বর চাষাবাদে নিমগ্ন আমি সময়ান্তরে আশঙ্কা ছুঁয়ে যায়, ব্যথিত চিবুক হয়তোবা নিভে যাবে আশার প্রদীপ সন্দেহের দমকা হাওয়ায়, ক্রমাগত অস্তিত্বহীনতার মাথা গোঁজার ঠাঁই, ভিটেমাটি, আর সব আজ এই জীবন -মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমাদের নিতে হবে সৌভ্রাতৃত্ববোধে বিশ্বাত্মার শপথ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এক জাতি, অভেদ আত্মা আমরা একই বিশ্বপিতার সন্তান, আল্লাহ ও ভগবান দেশ ও জননীর পদতলে আমাদের সমবেত প্রার্থনা - 'তুমি নির্মল কর,মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে ।'
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register