Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গদ্যের পোডিয়ামে রাহুল ঘোষ

maro news
গদ্যের পোডিয়ামে রাহুল ঘোষ

অশ্রুকথন ছাড়া এখনও কোনো ইরেজার নেই

গোধূলির আস্তাবল থেকে ধুলো উড়িয়ে ছুটে গেল যে অশ্বক্ষুরধ্বনি, আমি তার নাম জানি না। এইভাবে সময় চলে যায়। চলে যাওয়া সময়কে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে দেখি, অনুভবের তরঙ্গ একই সুরে বাজলে, তাকে অনেকটাই ফিরিয়ে আনা যায়। কিন্তু পুরোটা হয়তো কিছুতেই নয়! তবুও আমার মধ্যেই প্রাণিত হয়ে কাটা-ছেঁড়ার টেবিল থেকে অনায়াসে উঠে আসো তুমি। আমি ভাবি, এভাবেই একদিন দূর হয়ে যাবে যাবতীয় কলঙ্কভার। কিন্তু ক্ষোভের পারদ অলক্ষে জমে থাকে। কখনও তাপমাত্রা বাড়লে বুঝি — আমার অক্ষরে লেখা অজস্র কাটাকুটি, গাঢ়তর অন্ধকার হয়ে বসে আছে ওই মনের শরীরে। তাকে মুছে দেবো, এমন ইরেজার আমার কাছে এখনও পর্যন্ত নেই!

অতএব এইসব ফিরে আসা দিনেও নিদারুণ প্রদাহ নিয়ে আসে অনিবার্য উষ্ণায়ন। সঘন শ্বাসের বেলা এলে, আপাতত ভুলে যাও আঘাতের চিহ্নসমূহ। নাভিদেশ থেকে উঠে আসা আশ্চর্য কম্পন জেনে নিতে-নিতে, চরাচরে গোধূলি আসে। দুপুর পেরিয়ে এলোমেলো গড়িয়ে যাওয়া এই সময়টা তোমার আজও খুব প্রিয়। তীব্র রাতের মতো; অথবা তার থেকে বেশি। আমি ভাবি, আদরের নৌকা বুঝি এইভাবে এনে দিচ্ছে ছলাৎ জলের প্রলেপ। একদিন আবার এইভাবেই এনে দেবো অমলিন মেঘের নিবিড়।

এমন আশা নিয়েই ফিরেছিল এই শারদবরণ। বিজয়ের আনন্দে যেন কতদিন এইভাবে মাতেনি চরাচর! কোজাগরী-কালে তুমি উন্মুখ হলে, ত্রয়োদশী চন্দ্রকলায় মোড়া রাতের কথা মনে পড়ে। এইসব একদিন ফিরিয়ে আনবো বলেই, কবে থেকে যেন লিখে যাচ্ছিলাম আক্ষেপ আর অপেক্ষার কথামালা। সময়ের নিটোল কাব্যে তবু্ও তো ছন্দপতন ঘটে! মঞ্চের মাঝখান অনেকটা বদলে গেলেও, মহড়াকক্ষের চলমান কর্মশালায় এখনও অনুশীলিত হয় যাবতীয় পুরোনো চরিত্রায়ন। কাছে-দূরে ধূসর নাটুয়াপাড়া এখনও তৈরি করে অজস্র মুখোশ! তাদের হাতে লাগানো গাছ থেকে মাঝেমাঝে উঁকি মারে বিষফুল। শীতলতার প্রয়োগে তাদের বিষহীন করে দিতে-দিতেও তো মাঝেমাঝে ক্লান্তি আসে! এমন আবহে তুমি হতোদ্যম হলে, লাভাস্রোত খুলে যায়। এভাবেই তোমার ভারসাম্যের রূপ ও রূপক নড়ে গেলে, মনে পড়ে — আমিও তো এককালীন রেখে গিয়েছিলাম গরলের অনেক নমুনা! এখনও কিছু-কিছু হেমন্তসন্ধ্যা তাই বিষণ্ণ চাদরে নিজেদের মুড়ে রাখে।

অতএব তোমার প্রতিটি অগ্নুৎপাতের পরে নিজেকে বলি, আরও সংযত হও। ভুলে যেতে চাই, কাছাকাছি হলে আমারও তো উজাড় করে দেওয়ার ছিল যাবতীয় দুঃখশোক! কিন্তু তোমার সর্বোচ্চ প্রত্যাশাকে আত্মঘাতী অক্ষরের জঙ্গলে হারিয়ে ফেলেছে যে, সমর্পণ ছাড়া তার আর কিছু থাকতে নেই। ওইসব ফেলে আসা অক্ষরসমূহ তোমাকে এখনও ঝাঁঝরা করতে থাকলে বুঝি, সম্পূর্ণ ফেরার পথ এখনও কতটা বাকি! সেই পথটুকু তাই জড়ো করতে থাকি বিশল্যকরণী। কেন-না, অশ্রুকথন ছাড়া এখনও আমার কাছে কোনো ইরেজার নেই!

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register