- 92
- 0
শহরতলির ইতিকথা
পরের বছর থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ,নতুন শিক্ষাক্রম চালু করতে চলেছে ;স্কুলগুলোতে হায়ার সেকেণ্ডারি অর্থাৎ দশ ক্লাসের পরিবর্তে এগারো ক্লাস চালু হবে; অবশ্য যারা এ বছর স্কুল ফাইন্যাল পরীক্ষায় ফেল করবে,তারা আরও বেশ কয়েকবার ঐ পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে।রমা,এখনো তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে; রবার্ট ব্রুসকেও সে, ধৈর্যের পরীক্ষায় অতিক্রম করে গেছে,এবার সে নবম প্রচেষ্টার সম্মুখীন।
পাড়া-প্রতিবেশীরা, আর তার পরীক্ষা সম্পর্কে কৌতূহল প্রকাশ করে না।নিভাননীদেবীও আর কোনো মন্তব্য করে কী না,তা জানা যায় না;তাঁরও শরীরটা ঠিক যাচ্ছে না।আত্মীয়দের সঙ্গে তাদের সম্পর্কটা একটু গভীর হয়েছে।রমার ভাই ফোঁটায়,ভাই'র সংখ্যা ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে,মিউনিসিপ্যালিটির কর্তা ব্যক্তিরাও এখন ওর ভাই'র তালিকায় সংযোজিত হয়েছে,সুতরাং শাখেঁ-ফুঁ'র শব্দও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়ত হয়ে চলেছে।পরীক্ষায় পাস দিয়ে,মিউনিসিপ্যালিটির প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করতে চায় রমা;চেয়ারম্যান,তাকে কথা দিয়েছে,পরীক্ষায় পাস করতে পারলেই,ওর চাকরি পাক্কা; ভাই ফোঁটার ভাই'র পাওনা হবে হয়তো এটাই;তারপর তো বিয়ে, বর তার তো ঠিক করাই রয়েছে; এখন শুধু বিয়ে করবে না বলেই যেতে হবে,সবাইকে এ কথা বিশ্বাস করাতে হবে।মক্ষী রাণির
মত সবাইকে, বিলোল আঁখির চাহনিতে, সবাইকে নিয়ন্ত্রণে রাখার মণ্ত্রে, এখন সে সিদ্ধহস্ত;যুবক- মহল,তার ভাই'র দল, তো নিয়ন্ত্রণে।
ছোটো মেয়ে,শান্তির বিয়ের কথাবার্তা চলছে;ঐ আত্মীয়দের একজনেরই মেয়ের দেওরের সঙ্গে; ওরাই এ বিয়ের উদ্যোগ নিয়ে, সেটা সম্পন্ন করলো;বড় থাকতে,ছোটোর বিয়ে হচ্ছে,কথা উঠলেও,ওদের মধ্যস্থতায় তা স্থিমিত হয়েছে।রাধাকান্তবাবুও,যথাসাধ্য মেয়ের বিয়েতে খরচ করলেন,পরের বছরই তার কর্মজীবনের সমাপ্তি হতে চলেছে।
রাজীব,সেই ভোরবেলায় ট্যুইশান সেরে,চোখে-মুখে গুঁজে ট্রেন ধরে, হাওড়া স্টেশন হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস করছে,অঞ্চলের বিশেষ কোনো সংবাদ তার কানে আসে না।বাড়িতেও সে গভীর রাতে ফেরে। তার কাছে পাখির চোখ, যে করেই হোক,পোস্ট-গ্রাজুয়েশন- এ ভালো ফল করতে হবে;
বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির বই-ই কেবল তার ভরসা।রোজ, প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেই, উপর তলার সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে গিয়ে বই'র রিকুইজেসন দিয়ে,বই সংগ্রহ করে, টেবিলে রেখে,silence লেখা কাঠের paper weight চাপা দিয়ে এসে, নীচে ক্লাস করা। ক্লাসের চেয়ে লাইব্রেরি অনেক বেশি সহায়ক।শিক্ষকদের অধিকাংশই পার্ট-টাইম বা অতিথি শিক্ষক। মহসীন কলেজে পড়া,স্কুলের সহপাঠীও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ভর্তি হয়েছে,ওদের ক্লাসও ঐ আশুতোষ বিল্ডিং-এ হয়,তবে সময়ের হেরফেরে,দেখা-সাক্ষাৎ মাঝে মাঝে হয়।ওদের ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক নিশীথবাবুই তখন আর্টস ফ্যাকালটির ডীন; কমার্স ডিপার্টমেন্টও আর্টস ফ্যাকালটির অন্তর্ভূক্ত ,সুতরাং সেই প্রতিথযশা ইতিহাসবিদের সান্নিধ্যে,রাজীব,নিজেকে ধন্য ভাবে।কলেজ জীবনের বাংলার অধ্যাপক সাহিত্যিক সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ঐতিহাসিক নিশীথরঞ্জন রায় মহাশয়ের ব্যক্তিত্বের প্রভাব রাজীবের জীবনের গতিপথকে যে প্রভাবিত করবে,এতে আর আশ্চর্য কোথায়! নিজের ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক মণিসান্যাল মশাই'র মনীষাওছাত্র-প্রীতি,
রাজীবকে, শিক্ষক হয়ে ছাত্র গড়ার সংকল্পকে সুদৃঢ় করে;শিক্ষক হতে গেলে,নিজেকে গড়তে হবে,অতএব,'করেঙ্গেআউর মরেঙ্গে'-ই হয়ে উঠলো তার মন্ত্র।
সজীবের স্ত্রী,দু'টো মেয়েকে নিয়ে
সংসারে নাস্তানাবুদ হচ্ছে;একদিকে হৈমবতীর বাক্যবাণ,অন্যদিকে আর্থিক সঙ্কটের জন্য হাজরামশাই'র সঙ্গে সজীবের প্রায় রোজই বাদানুবাদ,বাচ্চাদের দুধের সংস্থানের জন্য খরচা-বৃদ্ধিই অন্যতম কারন হয়ে,"ঘোঘ"কে প্রকট করে তুলেছে; ঘর আর ঘর নেই,হয়ে উঠেছে,নরক-কুণ্ড;অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ,ফল-স্বরূপ,সজীবের স্ত্রীর পক্ষে এ সংসারে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠলো। রাজীবের সাবধানবাণী আজ অক্ষরে,অক্ষরে ফলে যাচ্ছে। বাড়ীতে বৌদির উপর যে মানসিক নির্যাতন চলছে,তা বোঝার মত অনুভূতি তার কম নয়। তার কিছুই করার নেই,কারন,সে এখন আর বাড়িতে অর্থ দিতে পারে না,আর,অর্থ না দিলে,সংসারে তারও অবস্থা, দূরছাই, গুমরে, গুমরে থাকা ছাড়া,আর কিছু করা বা বলার কিছু নেই, নিরুপায়,নিজের লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত,নিজেকে অন্য ভাবনা থেকে দূরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে।জুটমিলের চাকরি-কালে,অর্থ দিয়েছে,এখন তো আর তা হচ্ছে না তাই--------
চলবে
0 Comments.