Thu 18 December 2025
Cluster Coding Blog

T3 কলমে

maro news
T3 কলমে

ভাঙা হাতে মন জুড়লেন চলন্তিকা! 

একজন পতিতা এক রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে তার প্রাপ্য চাইছে। বলা বাহুল্য, পতিতা নারীটি সৎ কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বটি মোটেও সৎ নয়। 

মেয়েটি স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছে অনেকদিন। একটি সুন্দর সংসারের স্বপ্ন! পেটের দায়ে পতিতাবৃত্তি করে সে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখবে কোন চোখে! তাই সে এখন আর স্বপ্ন দেখে না বরং স্বপ্নকে ভয় পায় ভীষণ। ছেলেটির নাম ভোর। এক সরল সাধাসিধে ছেলে। ভোর এই মেয়েটির প্রেমে পড়ে যায়। তাকে বিয়ে করতে চেয়ে বসে। মেয়েটির বুক কেঁপে ওঠে। এ রাতের অন্ধকারে মুহূর্তের বিদ্যুৎ ঝলক নয় তো! এক পলকের তীব্র আলোর পর আরও গাঢ় অন্ধকার! ছেলেটি মিথ্যে স্বপ্ন দেখাচ্ছে না তো তাকে! 

নাহ্, ভোর যদিও তাকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখায়নি, তবু ভোরকে তার পাওয়া হয় না। নিস্তব্ধ শ্মশান। জ্বলন্ত চিতার আগুন। তার মাও চলে যায় অনন্তের পথে।

তথাকথিত এক 'মন্দ মেয়ে'র চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করলেন এই সময়ের বিশিষ্ট অভিনেত্রী চলন্তিকা গঙ্গোপাধ্যায়। গত রবিবার অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর অ্যাকাডেমি মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল 'হযবরল' প্রযোজিত নাটক 'রাতভৈরো'। রচনা চন্দন সেন, নির্দেশনা ন্যান্সি। মুখ্য চরিত্রে দুলাল লাহিড়ী। এই শিল্পীদের কথা আলাদা করে উল্লেখের দরকার পড়ে না। কারণ, এঁরা নিজ প্রতিভায় ভাস্বর। 

চলন্তিকা এসে দাঁড়াচ্ছেন মঞ্চের সামনে। স্পট লাইট এসে পড়ছে তাঁর মুখে। কে বেশি উজ্জ্বল? স্পট লাইট নাকি চলন্তিকা! এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বড়ই কঠিন দর্শকদের পক্ষে। প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে তাঁর অভিনয়ের আঙ্গিক, পালটে যাচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক স্তর। 

অথচ এদিন এমন দাপুটে অভিনয় তো দূরের কথা, মঞ্চে আসাই ছিল তাঁর কাছে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। ঠিক তার আগের দিন শোয়ের পর পড়ে গিয়ে হাতে চোট পান অভিনেত্রী। অথচ ভাঙা হাত নিয়ে অসাধারণ অভিনয় করে গেলেন, একপ্রকার ডাক্তারের কথা অগ্রাহ্য করে। তাঁর ব্যক্তিগত হাতের যন্ত্রণা হয়ে উঠল চরিত্রের অব্যক্ত বেদনা।

শিল্পী শব্দটির মধ্যে এক অদ্ভুত প্রাণশক্তি নিহিত থাকে। শিল্পী যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস, যেখানে তাঁর আবেগ, চিন্তা ও স্বপ্নের ছবি আঁকা হয়। একজন শিল্পী সব কিছু উপেক্ষা করে অভিনয় করে যান। অভিনয় তাঁর স্বপ্ন, তাঁর বেঁচে থাকার রসদ। যখন তিনি মঞ্চে এসে দাঁড়ান, তখন তিনি সমস্ত কষ্ট, হতাশা এবং উদ্বেগকে পিছনে ফেলে দিয়ে নতুন এক জগতে প্রবেশ করেন। শিল্পী সমাজের দর্পণ। শিল্পী তাঁর কাজের মাধ্যমে সমাজের মুখোশ খুলে দেন। আর অভিনয় একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা সমাজে পরিবর্তন আনার জন্য প্রয়োজনীয়।

চলন্তিকা গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক। সব শেষে ভেসে এল জনৈক দর্শকের সনির্বন্ধ অনুরোধ, এই সময়ের নাট্যজগতের সাফল্যের পিছনে আপনার হাত আছে, কাজেই ওই হাতের যত্ন নিন!

তথাগত দত্ত 

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register