কবিতায় কোয়েল তালুকদার
প্রস্থানের দিনে
মনে করো, এই যে আমি কবিতা লিখছি, গল্প লিখছি-
আমি যদি আর না লিখতে পারি!
একদিন আকাশ দেখব বলে বেরিয়ে গেলাম।
যদি আর ফিরে না আসি।
যদি আকাশের তারাদের কাছে যেয়ে বসে থাকি।
এই যে দেয়ালে রবীন্দ্রনাথের ছবি টানানো আছে,
ওটা নামিয়ে দিয়ে নজরুলের মতো ঝাঁকড়া চুলের
আমার ছবিটি কি তুমি ওখানে লাগাবে?
সন্ধ্যার বুকে নিভে যাওয়া আলোয় দেখবে কি
ছবির মূখ খানি?
তুমি কি সেই ছবিতে ফুল দেবে?
টেবিলের উপর কবিতার খাতাটি পড়ে থাকবে,
হিবিজিবি কাটাকাটি করা অনেক কিছুই লেখা,
পাতা উল্টালেই দেখতে পাবে- রাত জেগে কত প্রহরে
তোমাকে নিয়ে কত কথা লিখে রেখেছি-
কত ভালোলাগা, কত গ্লানি, কত অভিমান আর দীর্ঘশ্বাসের কথা,
তুমি কি পড়বে সেই সব কথা ?
বিছানার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে এলমেল হয়ে থাকবে তারাশঙ্কর ও বিভূতিভূষণের বই,
পুরনো হয়ে যাওয়া ‘খোয়াবনামা’ ও ‘ক্রীতদাসের হাসি’। হুমায়ুন আহমেদের ‘মাতাল হাওয়া’ পৃষ্ঠা খোলা অবস্থায় পড়ে রবে এক কোণে,
অ্যাশট্রের ছাই উড়বে ফ্যানের বাতাসে... লগআউট করা থাকবে না ল্যাপটপ, মুঠোফোনও ডিফল্ট হয়ে থাকবে...
লাস্ট ডায়াল কলটাও হয়ত তোমাকেই করা থাকবে …
খুব কী মনখারাপ হবে তোমার?
তুমি সেদিনও আমাকে ভালোবাসবে কি?
নাকি মোমবাতি জ্বেলে আধো অন্ধকারে পড়বে তোমাকে নিয়ে লেখা ‘আরক্ত সুন্দর মুখে’র এই কয়েকটি চরণ —
‘একদিন মনখারাপ হবে খুব,
অথচ কান্না নেই
সে মুখোমুখি এসে দাঁড়ানোর পর হয়ত কান্না এসে যাবে
বড্ড অচেনা লাগবে তখন পৃথিবী,
একদিন সবকিছু ফুরোবার আগেই আমিও হারিয়ে যাবো..
তখন কারও চোখে আমার কান্না
রয়ে যাবে।
কোন্ আলোয় দেখেছিলাম তার মুখখানি!
ক্ষণকালের দেখায় চিরকালের ভালোবাসা হলো
তার সেই আরক্ত সুন্দর মুখ।
কেন যে কিছু মুখে পৃথিবীর মায়া লেগে থাকে
কেন যে কিছু মুখে পাই শুকপাখির পালকের ঘ্রাণ
কেনই আবার দুঃখ কাতরতা দেখি সেই মুখখানিতে।
সেই মুখেই —
জীবন থেকে মৃত্যুর খেয়া পারাপার দেখি।’
0 Comments.