- 4
- 0
সম্পাদকীয়
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস
হেমন্ত এসে গেছে, “ঝরা পাতা গো, আমি তোমারই দলে…” হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে যখনই এই গানটি শুনি, এই সময়ের কথা মনে পড়ে। সমাজে এমনই এক শ্রেণী আছে, যাঁরা ঝরা পাতার মতোই, নীরবে কাজ করে যখন নিঃস্ব রিক্ত হয়ে যায়, তখন সে অবহেলিত। প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস—একটি দিন, যাকে অনেকে এখনো মনে করেন অপ্রয়োজনীয়; আবার অনেকে বলেন, পরিবর্তনশীল সামাজিক বয়ানের মাঝে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকেই মনে করেন পুরুষ তো বিশেষ সুরক্ষা, সুবিধা— এসবের দাবিদার নয়। কিন্তু বাস্তবতা অন্য কথা বলে।
সমাজের কঠোর প্রত্যাশা, মানসিক চাপ, “শক্ত হওয়ার” বাধ্যবাধকতা, আবেগ লুকিয়ে রাখার চাপ— এসবই বহু পুরুষকে নীরবে সহ্য করতে হয়। পরিসংখ্যান বলছে, পুরুষদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা ও আত্মহত্যার হার বিশ্বের বহু দেশে উদ্বেগজনকভাবে বেশি। তাই পুরুষদের মানসিক সুস্থতা, সামাজিক দায়িত্ব ও ইতিবাচক পুরুষত্বকে সামনে আনার জন্য এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।
সাহিত্যে পুরুষ কখনো নায়ক, কখনো নায়কের বিরোধী, কখনো আবার সাধারণ মানুষ— যে হারায়, লড়ে, ভেঙে পড়ে ও আবার উঠে দাঁড়ায়।
রত্নাকর থেকে বাল্মীকী, বা মাইকেল মধুসূদন দত্তের “মেঘনাদ”, শরতচন্দ্রের শচীশ, বিভূতিভূষণের অপু– সবাই মিলে পুরুষচরিত্রকে মানবিক ও গভীর রূপে তুলে ধরেছে। বাংলা সাহিত্যের সৌন্দর্য এখানেই— পুরুষকে শুধু শক্তির প্রতীক হিসেবে নয়, অনুভূতি ও ভঙ্গুরতার বাহক হিসেবেও প্রকাশ করা হয়েছে। প্রেম, দ্বন্দ্ব, বন্ধুত্ব, ব্যর্থতা—প্রতিটি রসেই পুরুষচরিত্রের ছাপ গভীর।
আজকের দিনে এই সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গি আরও প্রাসঙ্গিক। কারণ সমাজ এখন “টক্সিক ম্যাসকুলিনিটি”-র বাইরে বেরিয়ে “হিউম্যান ম্যাসকুলিনিটি”— অর্থাৎ মানবিক পুরুষত্বের ধারণাকে গ্রহণ করছে।
হেমন্ত ঋতুর আকাশ যেমন স্বচ্ছ, তেমনই হওয়া উচিত আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি— পুরুষদের ভূমিকা, সমস্যা ও মানসিক চাহিদা সম্পর্কে। সমাজের ভারসাম্যের জন্য পুরুষ যেমন অপরিহার্য, তেমনি প্রয়োজন তাদেরও নিরাপত্তা, স্বীকৃতি ও আবেগ প্রকাশের স্বাধীনতা।
এ পৃথিবীর বুকে পুরুষ মানে পুরুষ ও নারী উভয়ে, একে অপরের পরিপূরক। পুরুষ নারীর সাথে প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতায় বিশ্বাসী। তাই পুরুষ দিবস উপলক্ষে কোন পুরুষ বিষয়ক লেখা থাকছে না। পুরুষ দিবসে শুধু পুরুষের লেখাও থাকছে না। পুরুষ দিবসে আমরা সকলের সবরকমের লেখাই পড়বো। আসুন… দেখে নিই আজকের সৃষ্টিগুলি গুণীজনদের লেখনীতে…
সায়ন্তন ধর
0 Comments.