Mon 17 November 2025
Cluster Coding Blog

ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন - ১১

maro news
ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন - ১১

দুই পা ফেলিয়া

পূর্ব প্রকাশিতের পর...

কটেজ ছাড়িয়ে আবার নাচতে নাচতে চলা। তবে গরম চা আর বেশ খানিকটা চলা ফেরার সুবাদে অনেকটাই সচ্ছন্দ সকলেই। তাছাড়া ঘন্টা দুই আড়াই কেটে গেছে, রাস্তার ঝাঁকুনির সাথেও মোটামুটি মানিয়ে নেওয়া গেছে। তাই এবার সবারই মনোনিবেশ আশেপাশের দৃশ্য তে। প্রকৃতি যেন উজার হস্তে সাজিয়ে তুলেছে চারপাশ। নিস্তব্ধ জংলি পরিবেশ, মাঝে মাঝে দু একটা নাম না জানা পাখির ডাক। চলেছি তো চলেছি সৌন্দর্যে ডুবে, হঠাৎ চটকা ভাঙলো মোহন ভাইয়ার কথায়। মা জি, আপ বৈঠে রহিয়ে, বাকি সব মেহরবানি করকে উতর যাইয়ে। কেন? প্রশ্ন করায় আঙুল দেখালো সামনে। একটা বাঁক, সেখানে গাড়ি পার করতে গেলে, পিছনের অংশ দুলতে থাকে খাদে। যতোটা সম্ভব কম ওজন নিয়ে জায়গাটি পেরোতে হবে। তাই আরোহীদের নামতে বলা। আমরা টপাটপ নেমে পড়লাম, জেঠিও সাহস পেলেন না বসে থাকার। চোখের সামনে দেখতে পেলাম এক শ্বাস রুদ্ধ করা দৃশ্য।
বাঁকের সামনে গিয়ে মোহন আস্তে আস্তে গাড়ি ব্যাক করালো। এতোটাই যে সামনের সিট বাদে, বাকি অংশ খাদের ওপর দুলছে। পিছনের চাকা শুন্যে। দাঁড় করিয়ে একটু দোলালো গাড়িকে। তারপর দুম করে স্পিড বাড়িয়ে এগোলো। জায়গাটি আবার কাদায় ভর্তি। সামনের চাকা ঘুরছে কিন্তু গাড়ি এগোচ্ছে না, এগোচ্ছে না, তারপর আরো স্পিড বাড়ালো। পাঁচ মিনিট এই করার পর গাড়ি বাঁক পেরোলো।চার চাকা আবার রাস্তার ওপর, কপালের ঘাম মুছে, একগাল হেসে মোহন বললো আব আ যাইয়ে। গাড়িতে উঠে ভেবেছিলাম কি অসীম ধৈর্য আর সাহস মানুষটির। এতো বছর পরেও যখন মনে আসে, তখনো মনে মনে কূর্ণিশ জানাই ঐ মানুষটিকে আর ঐ রুটের অন্য সব গাড়িচালক কে। এতো বছর পর জানিনা, তবে শুনতে পাই রাস্তা অনেক ভালো হয়েছে। কে জানে মোহন ভাই এখনও ঐ রুটে গাড়ি চালাচ্ছে কি না।
আরো ঘন্টা দুই চলার পর যখন সান্দাকফু পৌঁছলাম, তখন মেঘ এসে দিনের আলো চাপা দিয়ে দিয়েছে। আমাদের বুকিং ছিলো না, আর তখন থাকার জায়গা বলতে একটি সরকারি, একটি ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট রেস্টহাউজ আর স্হানীয় লোকেদের দুটি বাড়ি। সরকারি ভর্তি থাকায়, আর ফরেস্ট বাংলোতে পরেরদিন কোন বড়ো সাহেব আসবেন বলে জায়গা না দেওয়ায় আমরা স্হানীয় একটি লোকের আউট হাউসে উঠলাম। আমাদের ঘরে ঢুকিয়ে সে বলে গেলো চায়ে পিনে কে বাদ আপলোক তুরন্ত ঘুম কে আইয়েগা, আজ স্নোফল হোনে কা মাহল হ্যায়। আরিব্বাস বলে কি। স্নো ফল। লাইভ। এ যে মেঘ না চাইতেই জল। আমার উৎসাহ দেখে কে। সবাই চা খেতে গেলো, আর আমি বারান্দার ধারে এসে বসলাম।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register