Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - এগারো

maro news
সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - এগারো

টুকরো হাসি - এগারো

লজ্জা করছে

প্রবাল বাজার করে বাড়ি ঢোকার আগেই বোনকে ফোন করল। বোন খুশি হয়ে বলল দাদা, ‘আমি নতুন ফোন কিনেছি। বাড়িতে থেকেই পড়াতে হয় তো তাই।তুই লাইনটা কেটে দে আমি ভিডিও কল করছি।’
প্রবালের মন ভালো হয়ে গেল। তার বোন যে বলেনি, বউদি তোকে ফোন করার পারমিশন দিল এতে সে কৃতার্থ হয়ে গেল।
বোন বলল,‘দাদা বাবার সঙ্গে কথা বল।’
বাবাকে দেখে কেমন অচেনা লাগছে।টাক মাথায় পিছনের চুল লম্বা হয়ে পিঠের দিকে রওনা দিয়েছে।দাড়িও যেন প্রধানমন্ত্রীর দাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে।
বাবা বলল,‘ভালো আছিস?সাবধানে থাকিস।’প্রবাল কি বলা উচিত বুঝে উঠবার আগেই বোন বাঁচিয়ে দিল।বলল, ‘নে মায়ের সঙ্গে কথা বল।’
মা চোখ মুছল।বলল,‘তোর মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন বাবা?ভালো করে খাওয়া দাওয়া করিস তো?অযথা বাড়ির বাইরে থাকিস না।করোনা রোগটা খুব সাংঘাতিক।আমার তোর জন্য চিন্তা হয়।’
কী জবাব দেবে বুঝে উঠতে পারল না প্রবাল।মাকে ছেড়ে রুচিরাকে নিয়ে আলাদা হয়ে আসার পর থেকে তার ভিতরে কষ্ট ও লজ্জা একই সঙ্গে কাজ করে।মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে বাজার থেকে এত মালপত্র টেনে আনতে হলে শুকনো তো লাগবেই।প্রবাল কি করে বলবে রুচিরার মাসির রান্নায় মনে হয় জগৎ সংসার বুঝি তেলে ভাসছে।বুকে অম্বলের খোঁচা।অযথা বাইরে না থেকে তার উপায় নেই।রুচিরার আপনজনেরা বাড়িটাকে করোনা প্রবেশের পথ করে রেখেছে।তাদের মোচ্ছবের শেষ নেই।
মা বলল,‘তোর কথা শুনতে পারছি না বাবা।’আবার বোন বাঁচাল।বলল,‘দাদা আমার পড়ানো শুরু হয়ে যাবে।পরে কথা বলিস।’
আজ ছুটির দিন রুচিরা সবার সঙ্গে মিলেনিয়াম পার্ক হয়ে আরও অনেক জায়গায় ঘুরবে।কালই হাজারটাকা নিয়ে বলেছে, ‘এতে আর কী হবে কাল আরও হাজার দিও।তুমি তো সঙ্গে থাকবে না।তোমার যে আবার নিমন্ত্রণ আছে।’
স্নান করে প্রবাল বসতেই রুচিরার মেসো ঘুম থেকে উঠে ঢুলু ঢুলু চোখ নিয়ে বলল,‘তুমি আমাদের সঙ্গে চল বাবা।ঘুরতে ঘুরতে তোমার সঙ্গে একটু আলোচনা করতাম।’
আলোচনা শুনে ঢোক গিলল প্রবাল বলল,‘আমার কাজ আছে।আমি যেতে পারব না।’
মেসো দমে না গিয়ে বলল,‘আচ্ছা বাবা এই যে গোটা রাজ্যে রাজনীতির ভিতর পলিটিক্স ঢুকে যাচ্ছে এ বিষয়ে তোমার কি মনে হয়?আরও একটা কথা মাঝে মাঝে মনে হয়।এই যে মাঝে মাঝে শুনি বাংলার মানুষ সব জানে।এই বাংলার মানুষেরা কারা? তুমি তাদের চেন বাবা।’
প্রবাল পাগল হওয়ার আগেই রুচিরা ডাকল।বলল, ‘তুমি কখন বেরুবে?’
‘আমি কোথাও যাব না।’
‘সে কী! ভূষণদা তার বউয়ের শ্রাদ্ধে নিমন্ত্রণ করে গেল তুমি সেখানে যাবে না!’
‘এর আগে প্রথম বউয়ের শ্রাদ্ধে যখন যেতে বলেছিল তখন তো গিয়েছিলাম।আজ আর যাব না।আমি বিশ্রাম করব।খেয়ে বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকব।’
‘তুমি খাবে!তোমার নিমন্ত্রণ আছে তাই তোমার জন্য তো রান্নাই হয়নি।’
‘আশ্চর্য!’ প্রবালের মাথা থেকে যেন আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত লাভা বেরুচ্ছে।
রুচিরা বলল,‘এত আশ্চর্য না হয়ে শ্রাদ্ধ বাড়িতে যাও।ওখানে কবজি ডুবিয়ে পেট পুরে খেয়ে নেবে।’
একেই মাথা গরম।তার জন্য রান্না হয়নি শুনে আরও চটে গেল প্রবাল।যা হয়েছে সেখান থেকে প্রবালকে কি খেতে দেওয়া যেত না?
সে চিৎকার করে বলল,‘আমি ভূষণের বউয়ের শ্রাদ্ধে যাব না।এটা ফাইনাল।ও দু’জন বউয়ের শ্রাদ্ধে দু’বার নিমন্ত্রণ করল আমি একবারও ওকে আমার বউয়ের শ্রাদ্ধে নিমন্ত্রণ করতে পারলাম না।আমার যেতে লজ্জা করছে।’
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register