Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে যুথিকা সাহা (গল্প - পর্ব ৫)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে যুথিকা সাহা (গল্প - পর্ব ৫)

দাসী

কিছুক্ষন বাদেই বুলির মা টুকি কে সাথে নিয়ে ওদের বাড়ি এল। ও বড় বৌমা কোথায় গো? তা খাওয়া দাওয়া মিটেছে তোমাদের ? ছবি তো বললো দাদাকে খাইয়ে এলাম ।তুমি খেয়েছো তো ? মামিমা আসেন এই পান সাজছিলাম ... ও তাহলে তো আমাকেও একখানা দিও ,কিন্ত তোমার ওই মিষ্টি মশলা দিয়ে নয় ,আমি ওর গন্ধ সহ্য করতে পারি না গো... ঠিক আছে ওটা বাদ দিয়েই দিচ্ছি । আজ এখন শরীর কেমন ? সত্যিই বৌ ওষুধ আনছিল একেবারে ধন্বতরী! সব পরিষ্কার যন্ত্রনা ও নাই। খুব ভালো হয়েছে ,যাক তুমি কাল ওর সাথে গিয়ে দেখিয়ে এসো । তারপর সুযোগ বুঝে কলকাতা যেওক্ষন মা ।এর মধ্যেই বুলি এল -- কি বৌদি যাবে তো আজ ? দাদা তো ঘুমিয়ে গেছে..... বলতে বলতেই এলো টুকির বাবা ... কি বুলি কি খবর তোর ?এই তো দাদা ,তুমি তো এসময়ে ঘুমোও ? নারে আজ ঘুমোবো না । ওই বাজারের সব মিলে ধরেছে যে এই কিছু আলোচনা সভা হবে আর সব মানী লোকেরা থাকবে, থানা থেকে সব বড় অফিসার আসবে, এখন যেতে হবে বুঝলি মা ।নির্মল তো খুব বড় মনের মানুষ বললো, দাদা একসময় তো আপনিই এই বাজারের বড় কর্তা ছিলেন ,এখন নয় সময়ের সাথে সব পাল্টেছে ----তা যাই হোক আপনি না এলে কিন্ত চলবে না আসতেই হবে । আমরা বাজার কমিটির সবাই আপনার নাম লিখেছি ,আর পুরনো যত মানুষ এখানে জড়িত ছিলেন তাদের একটু সম্মান জ্ঞাপন এই আর কি ... ছোট ভাইটার কথা একটু মাথায় রাখবেন । এবার বল না গিয়ে পারি !আরে আমি তো এ কথাই তোমাকে বলতে এলাম। এখুনি তৈরী হও ,আমার দাদা এই তো একটু আগে গিয়েছিল,ওই পাঠালো শিগগির যা দাদা কে বল ওরা ডাকছে । দাদাও যাবে ছবিদির বড় ছেলে ওই তো সব পরিচালনায় আছে গো! ও ভালো বলতে পারে তাই ওকে ওনারা আগে থেকেই বলে গেছেন। হ্যাঁ এই যাবো । আয় টুকি আমার কাছে আয় বাবা ডাকল --- বুলিদের বাড়ি আজ খুব খেলি ? বাবা যেন বুঝতে দিল না কালকের ঘটনা ! বুলির মা বললো আমাদের আজ এক জায়গাতেই রান্না হয়েছে। ওই ছবি আর বুলির বৌদি সব করেছে। ছবির বাড়ির সব আর আমরা ... ওরা সব মজা করে মাংস নিয়ে এল বললো রবিবার সব একসাথে খাব কলাপাতায়,আর যারা মাংস খাবেনা তারা মাছ .. খুব মজা হয়েছে গো বাবা ছেলেপেলের দল ওরা আনন্দ করছে করুক । হ্যাঁ মামিমা ঠিক বলেছেন টুকির বাবা বললো।তাহলে আপনারা সব যাচ্ছেন তো ? ওই কথাই তো বলতে এলাম ,বড় বৌয়ের তো খুব এসবে ঝোঁক আছে। যাবে যাক না ... টুকি -হ্যাঁ মা যাও আমি তো বাড়িতে থাকবো, বাবার খাবার ক‍রে দেব ।ওর বাবা বললো ,কেন তুইও যা ? ওরা সব যাচ্ছে আর আমি তো খাবো সেই রাতে দশটার পর । তোরা তো তার আগেই আসবি । ওরে মেয়ে ওবেলার সব করা আছে ,ছবি সব ক‍রে রেখেছে তোকে চিন্তা করতে হবে না । তুই একবারে খেয়ে বাড়িতে এসে ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়বি ।এবার সব তৈরি হও ছটায় আরাম্ভ কিন্ত,,,,, আগেই যেতে হবে কেমন--- আমি গেলাম গো বৌ ।যাক সবাই তাহলে যাবে খুব মজা বুলি বলে উঠলো.... এই করেই উৎসবের কটা দিন ভালোই কাটল সবার ,গ্ৰামের মানুষ অল্পতেই খুশী ।
কিছুদিন বাদে টুকির মেসো এল । সব শুনে ওর মাকে নিয়ে গেল কলকাতা তার বাসায়। সে যদিও অবস্থাপন্ন নয় ,তবু ছেলেদের নিয়ে থাকতো আর একটা ছোটখাটো প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী করতো । টালির ঘরেই তারা থাকতো ,বাংলাদেশ থেকে এসে ওই চালের বাড়িতে ভাড়া থাকতো । সেখানে সে তার মাকে নিয়ে গিয়ে যেখানে বলেছিল সেসব হাসপাতালে দেখালো। সেখান থেকে তাকে আবার আর এক হাসপাতাল এই করে সব পরীক্ষা করে । এক জায়গা থেকে ডাক্তার বললেন, যে ওষুধ খাচ্ছেন সেটা ঠিকই আছে ,কিন্ত তবু এটা ভয়ের ব্যাপার আছে । কারন ডাক্তার সন্দেহ করছে ক্যান্সার ..!! .সে আরো কত সব পরীক্ষা করতে বলল। টুকির মাকে ভর্তি করে দু একটা পরীক্ষা ও করানো হয়েছিল । ওর মা কলকাতা ঘুরে নাজেহাল হয়ে ভয়ে অস্থির ,বললো বাড়ি নিয়ে চলো কপালে যা আছে হবে --এই রোজ রোজ তোমার ও কি ধকল বাবা... বললো দাঁড়ান দিদি কাল আপনাকে যেতে হবেনা, আমার এক জানা ভীষণ ভালো ডাক্তার আছে তার কাছে রিপোর্ট নিয়ে একবার দেখিয়ে আসি কি বলে দেখি সে নিয়ে গেল সেখানে ডাক্তার বড় ভালো মানুষ আর ডাক্তার হিসেবে তার খ্যাতি ও আছে । উনি বললেন ,আমি যা দেখছি ওনাকে এত সব পরীক্ষা করে খুঁচিয়ে ঘা বাড়িয়ে লাভ নেই ,এখনো তেমন ভয়ের কিছু নেই শুধু ইউটেরাসটা বাদ দিলেই যে সমস্যায় ভুগছেন তা নির্মূল হয়ে যাবে । উনি যেখানে থাকেন একজন ভালো গাইনি সার্জেনও বসেন ,আগে নীলরতন হাসপাতালের বড় ডাক্তার ছিলেন । আমার বন্ধু স্থানীয় , আমি লিখে দিচ্ছি সেটা নিয়ে যাবেন মনে হচ্ছে ওখানেই কাজ হয়ে যাবে। যাক ওর মেসো ও যেন একটা স্বস্তি পেল ,কারন হাসপাতালে নানা ডাক্তারের এত মতামত ,তারপর কি করবে ঠিক করে উঠতে পার ছিল না ! বাড়িতে এসে বলতেই ওর মা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো .....এর মধ্যেই তার কলকাতার সেই বড়লোক মেয়ে জামাই ও শাউড়ি এল হঠাৎ করে!তারা তো সেখানে ঢুকতেই যেন ঘেন্না পাচ্ছিল মুখের ছিড়িও করছিল তাতেই বোঝা যাচ্ছিল !! ঢুকেই বললো বাব্বা কি করে যে এলুম এখানে তা ঈশ্বর জানে !! আমাদের ড্রাইভার তো ঠিকানা নিয়ে জিজ্ঞেস করতে করতে এই এঁদো গলির খোঁজ পেল । ওর মাসি মেসো বললো হ্যাঁ তা তো হবেই... আপনাদের সাথে আমাদের তুলোনা বলুন! যাক এসেছেন আমাদের সৌভাগ্য ,একটু সেবা করার সুযোগ দিন । না না বাপু আমার গলা দিয়ে কিছু নামবে না ,নেহাত ছোট বৌমার মা তাই এলুম ,আমার ছেলে আসতে আসতে বলছিল ,মা মনে হয় বস্তি-টস্তি হবে ! এসে দেখচি তাইই .. তা কবে এসেছেন বেয়ান? আজ দশদিন ... ওওওওও আমরা তো এই দুদিন আগে শুনলুম ,তাই আজ এলুম । আমাদের আবার সব এই নানা জায়গায় অনষ্ঠানে যেতে হবে । ছেলে বৌমাদের তো পার্টি লেগেই আছে ,বড় অফিসার তো ! তা থাকবেন তো ?আপনাদের তো একটা স্ট্যাটাস আছে মেসো বলে উঠলো ! টুকির মা বললো কাল চলে যাবো । কেন অপারেশন করাবেন না ? কোন নার্সিং হোম ক্যালকাটা হসপিটাল, না বেলভিউ ? না না এই তো মেডিক্যাল, চি‌ত্তরঞ্জন এসব জায়গায় দেখিয়েছি ওখানে ! সে তো খোয়ার খানা ভালো ডাক্তার আছে সেখানে !! এ কথা সেকথা যত চিমটি কাটা কথা বললেন । কিন্ত একবারো বলল না চলুন আমাদের বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করবেন । না জামাই, না নিজের মেয়ে ---এক পয়সাও মায়ের হাতে মেয়ে দিল না! চুপ করে দিলে কে দেখতো শুনি ? কিছুই খাবেন না ? বললো না না না গন্ধে আমার গা গুলিয়ে উঠছে গো চলি .. ছেলে বললো মা সাবধানে সামনে দেখে ,সে আবার মাকে কথায় কথায় গড় করে । মেয়ে যাবার সময় আস্তে করে বলে গেল ,তোমাকে দেখতে এসে আমার মান সম্মান গেল । এখানে ভদ্র লোকেরা আসে ! যতসব ছোটলোকের বাস .....মা চুপ করে রইলো।
যথারীতি ওর মাকে মেসো দিয়ে গেল তার বাড়ি। সব তার ছেলেকে. বৌমাকে খুলে বলে গেলো। বড় মেয়েকেও সব জানিয়ে গেল। আমি এখন আমার ভাইয়ের বাড়ি যাবো কাল চলে যাবো । বৌমা বললো খেয়ে দেয়ে যাবেন । এখন এই অসময়ে গলা দিয়ে খাবার নামবে না গো মা ,আর সময় ও নেই ভাই বাজারের মোরে দাঁড়িয়ে আছে । দিদি কে দায়িত্ব করে দিয়ে যেতে পারলাম তোমাদের কাছে এটাই বড় ,আসি ভালো থেকো তোমরা ।দিদিকে প্রণাম ক‍রে বললো আর তো ভয় নেই এখানেই সব হয়ে যাবে। কটাদিন আমাদের বাড়িতে যা কষ্ট হল আপনার । দিদি -কি বলছো? তুমি তোমার কাজে ছুটি নিয়ে কদিন যা করলে বাবা আর যে যাই বলুক আমি ভুলতে পারি বল ...!!কারো কথায় কিছু মনে কোরনা ওদের হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি গো ..... ওর মেসো বললো,আমার তো তেমন সামর্থ্য নেই কি আর করি বলুন ----+দেশে তো সব ছিল বাংলাদেশের গন্ডগোলের জন্য সব হারিয়ে আজ আমরা এই অবস্থায় আছি । আমরা খুব বড় ঘরের মানুষ ছিলাম ,সেসব গল্প এখন। এই কঠিন বাস্তবকে মেনে নিয়েই মরেও বাঁচতে হচ্ছে ..! কথাগুলো বলতে বলতেই তার চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে গেল .... তিনি চলে গেলেন।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register