Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - দশ

maro news
সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - দশ

টুকরো হাসি - দশ

কালই তো নখ কাটলাম

বাড়িতে গঙ্গাসাগরের মেলা।রুচিরার মা, মাসি, মেসোমশাই, মাসতুতোভাই, বোন সবাই এসে হাজির।সে এক এলাহি কাণ্ড।
এই অতিমারির সময় রুচিরা প্রবালকে বাবা,মা,বোনের সঙ্গে দেখা করতে যেতে দেয়নি।বলেছে,‘গোটা রাস্তা ভিড় বাসে যাতায়াত করে বাবা মাকে কি করোনা উপহার দিতে যাবে।এতই যদি ভক্তি উথলে ওঠে তবে ফোনে কথা বল।পরে ওটাকে স্যানিটাইজ করে নিলেই হবে।আর কথা বলবার সময় মাস্ক পরে নিও।ওদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে যদি তোমার করোনা হয় তবে তো আমিও রেহাই পাব না।’
রুচিরার মা যখন সদলে বিনা মাস্কে হ্যা হ্যা করতে করতে এল প্রবাল না বলে পারল না,‘কেউ মাস্ক পরেননি কেন?’
মেসোমশাই হলুদ দাঁতে হেসে বলল,‘তুমি কোথায় আছ বাবা।এখন আর টিভিতে কাউকে রাস্তায় গোল গোল দাগ কাটতে দেখ?কেমন করে হাঁচি দেবে তা আর কেউ শেখায়?এখন অ্যাম্বুলেন্সে উঠতে নামতে গিয়ে পটল তোলা,বডি নিখোঁজ হওয়া দেখতে পাও?হুক দিয়ে ডেডবডি টেনে গাড়িতে তোলা কতদিন দেখনি বল তো?পুজোতে,বড়দিনে মানুষ তাই না না করে ঘুরল।সঙ্গে ভোটের  লারেলাপ্পা লারেলাপ্পা লারেলাপ্পা লা।দেখনি মুখের মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে মরণকালে হরির নামের মিথ্যে গপ্পের লুঠ।তোমার এসব নজরে পড়ে না বাবা।ওদের কিছু হয়েছে?এখন করোনাও এসব দেখে ভয় পেয়েছে।’
একটু থেমে দম নিয়ে  বলল,‘বুঝলে সবাইকে নিয়ে সংগীতমেলায় গিয়েছিলাম।চারিদিকে দেখি একজনেরই ছবি।ভাবলাম ওই একজনই বুঝি রোজ গান গেয়ে ভুবন ভরিয়ে দেবে।পরে বুঝলাম,পরের পাইয়া ধন, অবিরাম কেত্তন।আমার দেওয়া ট্যাক্সের পয়সায় নিজের ছবি ঝুলিয়েছে।আর আমি বিড়ি টেনে মরছি।
মেসো কেন এত কথা বলছে বুঝতে পারছে না প্রবাল।সব দেখে বুঝে লোকটা কি পাগল হয়ে গেছে? তার মাথা ঝিমঝিম করছে।
মাসি বলল,‘শোনোনি হাসপাতালে ফুসফুস ভালো রাখার কোটি টাকার যন্তর পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।ওটা চালাবার লোকের যেন চাকরির দরকার নেই।’
রুচিরা ইশারায় ডেকে বলল,‘বাজারে যাও।ওরা কিছুদিন থাকবে।মাসি দারুণ রান্না করে।বেশি করে সব নিয়ে এস।নিজের হাতের রান্না খেয়ে খেয়ে আমার তো ঘেন্না ধরে গেল।’
সারাদিন ধরে সবাই কাটা সৈনিকের মতো যে যেখানে পারছে শুয়ে বসে থাকছে।মেসোমশাই প্রবালকে কাছে পেলেই একুশে কি হবে,কারা আসবে বলে ঢালাও প্রশ্নপত্র ফেলে দিচ্ছে সামনে।প্রবাল যত পারছে অফিসের পরে ফালতু রাস্তায় ঘুরে দেরি করে বাড়ি ফিরছে।রাস্তাতেও শান্তি নেই।পতাকা হাতে নানা কিসিমের দল প্রবালের ভালোর জন্য মাস্ক খুলে দু’হাত তুলে পরিত্রাহি চিৎকার করতে করতে হামলে পড়ছে।সবাই বলছে আমরাই আসব।
বাড়িতেও চোরের মতো লুকিয়ে থাকছে।ঘুমাবার চেষ্টা করছে।পারছে না।শোনা যাচ্ছে বিলেত ফেরত লোকের সঙ্গে করোনা নতুন স্ট্রেন নিয়ে ঢুকে পড়েছে শহরে।নানান ভয়।
অফিস যাওয়ার আগে দাড়ি কামাবার সময় মেসোমশাই এল।কিছু বলার আগে তাকে আটকাবার জন্য প্রবালই প্রথমে কথা বলল,‘বুঝলেন মেসো আজকাল কোম্পানিগুলি খুব যাচ্ছেতাই হয়েছে।কালই নতুন ব্লেডে দাড়ি কামিয়েছি আজ আর কাটা যাচ্ছে না।
রুচিরা বলল,‘তুমি মেসোমশাইকে সরল সাধাসিদা লোক পেয়ে ভুল বুঝিও না।কাল তো ব্লেডে ভালোই ধার ছিল।মেসো তো ওই ব্লেডেই দাড়ি কামাল।তারপর আমি,মা,মাসি ভাই বোনেরা সবাই মিলে ওই ব্লেডে কালই তো নখ কাটলাম।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register