Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ২৪)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ২৪)

পদচিহ্ন (দ্বাবিংশতি পর্ব)

শরৎকালের শেষভাগ। হাইওয়ের দুপাশের বিস্তীর্ণ জমিতে কার্তিকের সবুজ ধানের চারারা সব উদ্ধত শীষেদের বুকে নিয়ে অহংকারে ভোরের বাতাসে দোল খাচ্ছে। এসময় রাস্তা জুড়ে শুধু শালিখপাখিদের ভীড়। দুপায়ে বিজ্ঞের মতো হেঁটে হেঁটে রাস্তার ধারে কীসব যেন খুঁটেখুঁটে খাচ্ছে পাখিগুলো। -- বিয়ে করোনি? -- আমি? -- এখানে তুমি আর আমি ছাড়া আর কে আছে? আমি তো নিশ্চয়ই আমাকে জিজ্ঞাসা করবো না কথাটা! দীপঙ্করের মুখটা সামান্য রক্তিম হয়ে উঠলো। বুঝলাম সামান্য হলেও লজ্জা পেয়েছে। -- না জেঠু, বিয়ে করিনি এখনও, মানে আর কি করবো, কিন্তু... -- ও তাহলে মেয়ে দেখা হয়ে রয়েছে? কবে করবে বিয়ে? তোমার গার্লফ্রেন্ডকে বুঝি? --- না, মানে ইয়ে আর কি, আসলে, আমি মানে আমরা... --- কোথায় আলাপ হলো তোমাদের? পাঁউশিতেই? লজ্জার ঘেরাটোপের বাইরে কিছুতেই বের করে আনা যাচ্ছেনা ওকে। মনে ভাবলাম একটু প্রসঙ্গ পালটে দেখা যাক নাহয়। -- আচ্ছা দীপঙ্কর, ময়না একজন শিক্ষিকা হিসেবে কেমন ছিলো? -- জেঠু, ময়নাদি কোনোদিনও আমাদের কোনো ক্লাশ নেননি। সেটা দুহাজার সাত সাল। ময়নাদি কলকাতা থেকে পাঁউশি ফিরে এলেন। সম্ভবত তখন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে এসেছিলেন। যারা স্কুলে পড়াতেন ময়নাদি তাদের কাছ থেকে সবার পড়াশোনা নিয়ে খোঁজখবর নিতেন, পরীক্ষাগুলোর রিপোর্ট নিতেন, তাছাড়া বাচ্চাদের খাওয়াদাওয়া, ওষুধপত্তর, জামাকাপড় এসবের খেয়াল রাখতেন। ---- কিন্তু সে তো দুহাজার আটে! --- সেটা কীকরে হবে? আমার পরিষ্কার মনে আছে, দুহাজার আটে যে বন্যা হয়েছিলো সেসময় ময়নাদি এখানে। -- এখানে খুব বন্যা হয়েছিলো বুঝি? -- বাব্বা, ইয়াসের ঝড় আর দুহাজারআট সালের বন্যা আমি কোনোদিনও ভুলতে পারবো না জেঠু, সেসময় ময়নাদি আর আমাদের দিদি ছিলেন না গো জেঠু আমাদের সবার মা হয়ে গেছিলেন। বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন আমাদের আশ্রমকে। দীপঙ্কর আরও কীসব যেন আপনমনে বলে যাচ্ছিলো কিন্তু সেসব কথার একটা বর্ণও আমার কানে ঢুকছিলো না। আমার কানে একটা কথাই বেজে চলেছে -- " সেসময় ময়নাদি আর আমাদের দিদি ছিলেন না গো জেঠু, আমাদের সবার মা হয়ে গেছিলেন... " একজন ষোড়শী কিশোরী, তার স্বপ্নকে পূরণ করতে, পরিবারকে আর্থিক অসচ্ছলতার অগৌরব থেকে মুক্ত করতে নিজের পিত্রালয় ছেড়ে কলকাতা রওনা হলেন এক দম্পতীর পালিতা কন্যা হয়ে, তার স্বপ্ন ছিলো একজন ডাক্তারের পরিবারে থেকে নিজেকেও একজন ডাক্তার হিসেবে গড়ে তুলবেন, ডাক্তার হয়ে নিজের গ্রামের হতদরিদ্র মানুষদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন। কিন্তু ইশ্বরের সে অভিপ্রায় ছিলো না। ময়নার পালক মা ডাক্তার মিসেস দাসের দুটো কিডনিই মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ায় মাঝপথেই ফের নিজের গ্রামে ফিরে আসতে হলো ময়নাকে। ইতিমধ্যেই তার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া হয়ে গেছে। অষ্টাদশী ময়না করণ গেছিলেন আশ্রমিকদের বড়দিদি হয়ে ফিরলেন আশ্রমিকদের বুকে আগলে রাখা একজন মায়ের মতো হয়ে। ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register