Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৭)

বাউল রাজা

তৃতীয় খন্ড (সপ্তম পর্ব) এ আঁধারের একটা আশ্চর্য রূপ আছে। অনেকটা যেন ঠিক ঘোমটা পড়া নারীর মতো। চোখমুখের কোনো স্পষ্টতা নেই কিন্তু এমন একটা অবয়ব আছে যে চোখমুখ নাক সবকিছুই যেন প্রতীয়মান। শরীরের ঘনত্ব যেখানে মনের কপাটকে বন্ধ করে দেয় এ অন্ধকার ঠিক সেরকমটা না হলেও মনে হয় যেন মনকে দুহাত দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখে, আগলে রাখে শরীরকে। -- একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো বাউলদিদি? -- সে আবার কী কতা গো ঠাকুর, কবে তুমি আমায় শুদিয়ে পশ্ন করেচো কও দেকি? --- না, আসলে একটা কথা আমার খুব মনে হয় জানো, অনেকবার ভেবেচি তোমায় জিজ্ঞাসা করবো কিন্তু সত্যি বলতে কি -- এই যে তোমরা বলো কুহক, অনেকের মুখেই শুনেছি তারা তোমাকে কুহকিনী বলে ভাবে, সেটা কতদূর সত্যি? তোমার সাথে মিশে তো আমার কখনওই তোমাকে কুহকিনী বলে মনে হয় না। যে সত্যি অকপট না, দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ না, যে সত্যিকে লুকিয়ে বেড়াতে হয়, সেটা সত্যি না গো ঠাকুর, তুমি হয়তো মনে করবে --- এ তো আমি নিজের চক্ষে দেখলুম, কিন্তু সেটাকে শুধু তুমি দেখলেই হপে নাকো, সে দেখার মদ্দ্যে কপটতা লুইকে আচে গো। তুমি হয়তো ভাববে -- এ তো আমি নিজের হাতে কল্লুম, কিন্তু তুমি যতোই নিজের হাতে করো না কেন, সে সত্যিকে যদি নিজের মদ্যে গোপনে লুইকে রাকতে হয় তাহলে সেটাও সত্যি নয় গো, সে মিথ্যা, সে ছলনা, সে সত্যি আপাত সত্যি, চিরকালীন সত্যি নয় গো। যে দুধেতে দুধের অংশ কম, জলের অংশ বেশী তাকে কি তুমি দুধ বলপে, বলো দেকি? সেরকমটাই যে সত্যিতে সত্যির পকাশ নেই গো, সেটাও সত্যি নয়, অনেকটা বলতে পারো সাঁঝের বেলার মতো, আলো থেকেও নেই, আঁধার থেকেও নেই, যেন একটা কুহক। --- তাহলে ওরা তোমাকে বদনাম করে কেন? হঠাৎ মনে হলো পাশের নয়ানজুলির ভেতর যেন একটা রাজহাঁস জলের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে পড়ে দুডানা ঝাপটে জল ঝাড়া দিয়ে উঠলো। না, এটা ঠিক হলো না, আসলে একদমই অতিপ্রাকৃত কিছু না আবার বিশ্বাস্যও না এরকম একটা হাসির তরঙ্গ বাউলনির শরীর ধরে ঝাঁকুনি দিলো। -- তোমায় কী বলে যে বোজাই বলো দেকি! তুমি তো একনও মনের কুঁড়িই মেলোনি গো। হীরে দেকেচো, আমরা যে হীরে দেকি সে হীরেকে অনেক কেটেকুটে তোয়ের করতে হয়। মানুষের চরিত্তির হলো সেরকমই একটা হীরের ঢেলা, ভগবান সে ঢেলাকে কেটেকুটে দেকেন, কে সেই কাটাকুটি সহ্যি করতে পারেন আর কে মাজপতেই ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যায়। যে ছুরি দে তিনি চরিত্তিররে কাটেন সে ছুড়ি হলো গে বদনামের ছুড়ি। তুমি জানো না গো ঠাকুর, আমার গোঁসাই যে আমারে কত্তভাবে পরিক্কা করেচেন, কতোভাবে কেটে কেটে আমার মনে রক্ত ঝইরেচেন সে শুদু তিনিই জানেন আর আমি জানি। আর সে কাটাছেঁড়া করেচেন বলেই আমি এতো নিশ্চিন্তে তোমার সাতে এই আঁদার রাতেও পাশাপাশি হাঁটতে পারতিচি গো ঠাকুর। অন্ধকারে যেখানে আলোর প্রবেশাধিকার নেই, শব্দের সেখানে অবাধ যাতায়াত। দূর থেকে একটানা ঘণ্টাধ্বনি ভেসে আসছে। বাউলনি এক মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে পড়লেন। অন্ধকারের মধ্যেই দুহাত জড়ো করে মাথায় ঠেকিয়ে আপনমনে বলে উঠলেন -- জয় মা তারা, জয় গুরু বামদেব। বুঝলাম মন্দিরে সন্ধারতির পালা চলছে। ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register