Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১২)

পদাতিক

ছোটবেলায় খঞ্জনী বাজিয়ে একজন বোষ্টুমী আসতেন বাড়ি বাড়ি। গোল মুখের ভেতর ঢলঢল করতো দুটো গাল। কপাল বেয়ে খাঁড়া নাকের ডগা পর্যন্ত আঁকা থাকতো রসকলি। চূড়ো করে বাঁধা চুল থেকে মুখের দুপাশে লতিয়ে পড়া অলকগুচ্ছ মুখশ্রীকে আরও লাবণ্যময় করে তুলতো। আমাদের বাড়ি এলে মাধুকরী সংগ্রহ করে দাওয়ার ওপর দু'পা ঝুলিয়ে বসে মায়ের কাছে পানের ডিবে চেয়ে নিয়ে পান সাজতে বসতেন। নিজের জন্য দুচার খিলি বানানোর সাথে সাথে মায়ের জন্যও সেজে রাখতেন দুচার খিলি। এই সময়টুকু সবজি কুটতে কুটতে মা ও বসে দুদন্ড গল্প জুড়তেন ওঁর সাথে। সেই বোষ্টুমীকেই একদিন বলতে শুনেছিলাম -- কেউ কাউকে ফেলে থাকতে পারে না গো ঠাকরুন। সবাই সব্বাইকে সাথে নিয়েই বাঁচে। ছেলেপুলে বিদেশ বিঁভুইএ থাকলে ওদের জন্য মায়ের মন যেমন পোড়ে, ঠিক তেমনি ওদেরও বাড়ির কথা, দেশের কথা, মনে পড়ে পোড়ার মন পুড়তে থাকে গো। যদি দূরে যাওয়া মানে ফেলে যাওয়া হতো তাহলে মন পুড়বে কেন কও তো দেখি? -- " তুমি কী সুন্দর করেই না বলো গো বোষ্টুমীদি। আমারও তাই মনে হয় জানো, এই যে ছেলেবেলার খালবিল বাওড়, ধানক্ষেত, আমবনের কথা এখনও কেন যে মনে পড়ে সেটাই ভাবি। লোকে বলে বটে ছেড়ে এসেছি, ফেলে এসেছি, কিন্তু সত্যিই কি তাই গো? কিছুই তো ফেলে আসতে পারিনি, সবই তো মনের আঁচলের খুঁটোয় করে বেঁধে এনেছি বলো? কখন যে কোন কথায় কোন কথা মনে করিয়ে দেয়! কোন বাতাসের ঝাপটা এসে কোন জানালা দেয় খুলে সেটাই তো বুঝে উঠতে পারিনি এ বয়সেও। মনে হলো বলি, ফেলে আসতে পারিনি রে মা, মনের আঁচলের খুঁটে সবাইকে বেঁধে নিয়ে চলছি। কিন্তু এসব কথা কী ওই দুই কিশোরী বুঝবে? নিশ্চয়ই বুঝবে না। মুখে বললাম -- আমার? সবাই আছে, ছেলে - মেয়ে স্ত্রী সবাই। মেয়ের বিয়ে হয়েছে, ওর কোলজুড়ে ফুটফুটে নাতি আছে, জামাই আছে, ছেলে আছে, চাকরি করছে, তোমাদের জেঠিমা আছেন। আমি কাউকে ফেলে আসিনি। শুধু নিয়ে আসিনি কাউকে। তোমাদের মায়া আমায় আটকে দিয়েছে। বেঁধে ফেলেছে আমাকে এই আশ্রমের সাথে। ওরা দুবোন দুবোনের দিকে চাইলো। সে চাউনিতে কোনো জিজ্ঞাসার বিনিময় হলো কিনা, সেটা এই অন্ধকারে ঠাহর করতে পারলাম না। এরপর নিজের সম্পর্কে আর কীইবা বলা যায়? চোখদুটোকে ওদের দিক থেকে সরিয়ে অন্ধকারের দিকে ঘোরালাম। -- আচ্ছা জেঠু, একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো? এ কথার কোনো উত্তর হয় না। মুখ থেকে আচমকাই অস্ফুটস্বরে লাইনদুটো বেরিয়ে এলো -- " জিন্দেগী অউর কুছ ভী নেহি তেরি মেরি কাহানী হ্যায় " প্রায় অনুচ্চারিত শব্দের মতোই একটা শব্দ শুনতে পেলাম -- বাঃ ফের কিছু নীরব মুহূর্ত। এসময়টাতে তো জোনাকিপোকা দেখা যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু পুকুরটার ওপারে গাছপালার ভেতরে বেশকিছু জোনাকি আলো জ্বেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। -- তোদের ভেতর কে গান করিস? -- আমি। আমি শুনলাম নিশ্চয়ই শব্দটা, কিন্তু এ দুজনের মধ্যে চেহারার এতোটাই মিল যে আমি স্থির নিশ্চিত, এরপর দেখা হলে বুঝতে পারবো না, এই আমিটা আসলে কে? -- গান শিখতিস? -- হ্যাঁ, শিখতাম। -- কার কাছে শিখতিস? এই আলো অন্ধকারেও পরিষ্কার দেখতে পেলাম, মেয়েটি কানের লতিতে আঙ্গুল ছোঁওয়ালো। -- রীতা সেনজী। ওর কাছে ক্লাসিকাল শিখতাম। আমরা যখন পুনেতে থাকতাম, তখন। পুনেতে থাকতাম মানে? এতোক্ষণে বুঝলাম ওদের কথার ভেতর হাল্কা একটা অবাঙালী টান আছে, তাহলে কী ওরা বাঙালী নয়? পুনে শব্দটা যেন ওদের সম্পর্কে কৌতুহলটা আরও বাড়িয়ে দিলো। ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register