Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১১)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১১)

পদাতিক

এক পেয়ার কা নগমা হ্যায় মৌজনকি রাওয়ানি হ্যায় জিন্দেগি ঔর কুছভি নেহি তেরি মেরি কাহানী হ্যায়। পুকুরপাড়ের ঘাটলার যে প্রশস্ত চাতাল, তার দুইপাশে দুটো সিমেন্ট বাঁধানো লম্বা চেয়ারের মতো বসার জায়গা। একটু আগে পর্যন্ত ঘাটের ডানদিকের জামরুল গাছের ডালে বেঁধে রাখা টিউবলাইটটা জ্বলছিলো। আশ্রমের ভেতরের রাস্তাগুলোর বাতিস্তম্ভের বাতিগুলোও নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন চারিদিকে আঁধারের রহস্যময়তা। চুপকরে বসে বসে আঁধারের রূপ দেখছিলাম। বেশ কিছুদিন হয়ে গেলো বাড়ি থেকে এখানে এসেছি। বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে । পুষ্করিণীর কালো জলে আকাশটা যেন নাইতে নেমেছে। ঝকঝকে আকাশের বুকে যতো নক্ষত্ররাজি, সবাই যেন বিবসনা হয়েছে এমুহূর্তে। পরিবারের সমস্ত প্রিয়মুখগুলো একে একে এসে যেন ওদের স্নানকরার অবসরে গল্পে মেতেছে আমার সাথে। মান অভিমানের গল্প। দীর্ঘ অদর্শনের বুক ভারী করা গল্প। অভিমানি কথাগুলো যেন হাল্কাহাল্কা নিশ্বাস ছাড়ছে। আর সেই নিশ্বাসেরা পাশের ঝাঁকড়ামাথা আমগাছের কালচেসবুজ পাতাগুলোর বুক চিড়ে গায়ে এসে বিঁধছে। ঠিক এমনি সময় আমার প্রিয় গানের কলিটা ভেসে এলো। বিষাদ প্রতিমার মতো দুই কিশোরী খুব মৃদুস্বরে গানটা গাইছে। ভুল বললাম, দুজন নয় ওদের ভেতর একজন গাইছে। ফর্সা, রোগা, ক্লিষ্ট অথচ উজ্জ্বল দুই কিশোরী। আমি আগেও দেখেছি ওদের। দূর থেকে গাইতেও শুনেছি। বেশ গায় মেয়েটি। পরিষ্কার রেওয়াজি গলা। দুই বোনই হবে নিশ্চয়ই। বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে বলেই মনে হচ্ছে। এই আশ্রমে এ'কদিনে যে কজন শিশুকিশোরকে দেখেছি। এই দুইবোন তাদের মধ্যে বেশ ব্যতিক্রমী। কিশোরীদের ভীড়ে ওদের কখনও দেখিনি। বিকেলবেলা যখন অন্য সবাই গোল্লাছুট বা কুমির তোমার জলকে নেমেছি খেলতে থাকে সে খেলার মাঝে অথবা সবাই যখন দলবেঁধে টিফিন খেতে ডাইনিং এ যায়, তখনও দেখেছি, ওরা কেমন যেন একপাশে গিয়ে বসে। সম্ভবত দুবোনের মুখে কখনও হাসি দেখিনি আমি। কিন্তু একজনকে ছেড়ে কখনোই অন্যজনকে থাকতেও দেখিনি। ওরা যেন দুটো ভিন্ন সত্ত্বা নয়, দুজনে মিলে একটাই সত্ত্বা। কুছ পা কর খোনা হ্যায় কুছ খো কর পা না হ্যায় জীবনকি মতলবতো আনা আউর যানা হ্যায় দো পল কি জীবন সে এক উমর চুরানি হ্যায় জিন্দেগি ঔর কুছভি নেহি তেরিমেরি কাহানী হ্যায়। উচ্চারণে, ভাবপ্রকাশে, সুরসংযোগে এতো গভীরতা কোত্থেকে পেলো কিশোরীটি? লতাজী আর মুকেশজীর গাওয়া গানটা গাইতে গাইতে কতোদিন বালিশ ভিজিয়েছি, বুকের গভীরে কোথায় যে একটা চিনচিনে ব্যথা বাজতো সেই বয়েসে, আজ যেন ফের সেই ব্যথাটা মোচড় দিয়ে উঠলো। কে রে তোরা মেয়ে? এ বয়েসে এতো দুঃখ কিসের তোদের? কীভাবে জানলি যে কিছু পেয়েও হারাতে হয়, এমনও কিছু আছে যেটা হারিয়ে ফেললেই পাওনার ঘর পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে? অন্তরে এ গান অনুভূত না হলে এ গভীরতা আসা সম্ভব নয়। এরা নিশ্চয়ই জীবনকে গভীরভাবে দেখেছে, অনুধাবন করেছে -- জিন্দেগি অউর কুছভি নেহি, তোমার আমার গল্পগাঁথাই জীবন। আমাদের ছোট্ট ছোট্ট সুখ, আমাদের ছোট্ট ছোট্ট দুঃখ, এসব দিয়ে গাঁথা মুক্তোর মালাই তো জীবন। দুদিনের এই অতিথিশালায় এসে কিছু সুন্দর মূহুর্ত চুরি করে নেওয়ার নামই বুঝি জীবন। এটুকুই তো ব্যাস, আর আছেটাই বা কী বলো? খুব ডাকতে ইচ্ছে করছে ওদের। কাছে ডেকে জানতে ইচ্ছে করছে ওদের গহীন গহনের আলোছায়ার কথাকলি। ডাকতে যাবো ঠিক এমনসময়েই ঘটনাটা ঘটলো। দুইবোন এসে পা ঝুলিয়ে আমার মুখোমুখি বসলো। --" আংকেল, স্যরি জ্যেঠু, এখানে একা বসে আছো যে? " কোথায় আমি ভীষণ ভাবে জিজ্ঞাসা করতে চাইছি -- মা রে, কিসের এতো কষ্ট তোদের মনে? সারাদিন এ রকম মুখ কালো করে বিষন্ন প্রতিমার মতো দুইবোন মিলে ঘুরে বেড়াস কেন রে মা? সেখানে কিনা এরা আমার মনের খবরের তত্ত্ব তালাশ জানতে চাইছে! ---" বাড়ির জন্য মন কেমন করছে জ্যেঠু? " কী আশ্চর্য! এরা কি অন্তরের কথা পড়তে পারে নাকি? এই তারাভরা রাতে তো আমি সত্যিই... --" এ জায়গাটা আমাদেরও খুব প্রিয়, ওই পুকুরের জলের ভেতর তারাগুলোকে দেখে খুব যেন আপনার বলে মনে হয়। তোমার বাড়িতে কে কে আছেন? তুমি তাদেরকে ফেলে এখানে কেন এসেছো? জ্যেঠু, আমরা দুজনে কতোদিন ভেবেছি তোমার সাথে একটু গল্প করবো, কিন্তু... ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register