Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৯৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৯৭)

রেকারিং ডেসিমাল

স্টেশন থেকেই ফোন করলেন বাবা। গাড়ির ড্রাইভার এসে জিনিসপত্র সব তুলে নিয়ে গেল। মানুষরাও ঊঠে পড়ল মারুতি ভ্যানের মধ্যে। জানলায় দুই ছানা মুণ্ডু বাড়ায়। সঙ্গে বড়রাও কৌতূহলের দৃষ্টি বাড়ান। অজস্র পুরোনো বাড়ি। মন্দিরের স্থাপত্য। সারি সারি দোকানে কতকিছু রঙিন জিনিস। পানের সারি, তাতে রুপোলী তবক চকচক করছে। এদিকে ওদিকে গেরুয়া কাপড়, কারো সাথে লম্বা দাড়ি, জটাজুট। কারো বা শুধুই গেরুয়া। আর কত গরু। খানিক পরেই ঠাকুমা চেঁচান, ওই ত জল, দেখ দেখ, আরে দেখো সবাই মা গঙ্গা যে!! ওই ত দেখা যাচ্ছে! মা কপালে হাত ঠেকান, পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গে। ছোটদের ও নমো করতে বলে দেয়া হয়। তারা গম্ভীর হয়ে নমো করে। ব্যাংকের হলিডে হোমে রুম বুক করা ছিল। একেবারে মন্দিরের গায়ে লাগা। বেরিয়ে নীচে এলেই মন্দিরের দরজা। মেন রোডের থেকে মন্দির বেশ খানিকটা দূরে। আর সেই সরু রাস্তা দিয়ে কোন গাড়ি ঢুকতে পারে না। বাবা বিশ্বনাথকে খুব কাছ থেকে ভালো করে পুজো করতে এসেছেন ঠাকুমা, তাই বাবা অনেক খুঁজে পেতে এই বাড়ি এবং এর দ্বায়িত্ব নিয়ে থাকা মিশ্রজীকে জোগাড় করেছেন। মিশ্রজীকে ফোন করতেই তিনি স্বাগতম জানিয়ে পৌঁছবার হদিস দিয়ে দিলেন। দুই বাচ্চা, তিন সুটকেস, বাবা মা, এক পিস বৌ এবং তার মস্ত কাঁধের ঝোলা, এই নিয়ে বাবা এবার ল্যাজেগোবরে। গাড়ি ত মেন রোডের পাশে দাঁড়িয়ে রইল। এই লম্বা গলি, আর তার অজস্র বাঁক। কি হবে? মা বললেন, ফোনটা আমায় দাও, আমি শুনে শুনে লিখে নি। লাগলে আবার না হয় কল করবো ভদ্রলোককে। বেশ কয়েক বারই ফোন করলেন বাবা। আঁকাবাঁকা গলি দিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে মন্দিরের দরজায় আসতে অনেকটাই সময় লেগে গেল। তবু মন্দিরের তোরণের সামনে দাঁড়িয়ে ঠাকুমা চওড়া হাসি হাসলেন। বাবু, এসেছি রে। যাক। কপালে হাত ঠেকান তিনি । কত দিনের স্বপ্ন বিশ্বনাথ দর্শন। ছানাদের শক্ত করে দু হাতে ধরে মা মনে মনে মুখস্ত করেন। প্রথম ডানদিকের পর উঁচু রক ওয়ালা বাড়ি, তারপর দু বার বাঁ দিকে ঘোরা। তারপর জিলিপির দোকান পাশে রেখে কাঁচের চুড়ির পরপর দোকান। তারপর ডান দিকে ছোট্ট গণেশ ঠাকুর খুদে মন্দিরে। তিনটে বাড়ির পর বাঁ হাতের গলি দিয়ে কাত হতে হবে। ব্যস। মন্দির কম্পলেক্স। পেঁড়া আর ফুলের দোকানের ফাঁক দিয়ে গলে গেলেই মিশ্রজীর বাড়ির উঠোনে ঢোকার কাঠের কাজ করা মেন গেট। এই অবধি পৌঁছে যেতেই মিশ্রজী, আইয়ে আইয়ে বলে, অমায়িক হেসে বেরিয়ে এলেন। মনে হল কত দিনের চেনা।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register