Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

স্বাধীনতার স্মৃতিচারণে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক

maro news
স্বাধীনতার স্মৃতিচারণে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক

স্বাধীনতা!

      সেদিন  সালটা ছিল ১৯৪৭; ১৪ই আগষ্ট,  রাতের অন্ধকারে, বিক্রম রায়,স্ত্রী রত্না আর দুই  শিশু সন্তান ও এক বারো বছরের সন্তানকে নিয়ে নিঃশব্দে ঘরের দরজা বন্ধ  করে পথে নেমেছেন,পথে নেমেছেন বুকভরা যন্ত্রণা
আর অনিশ্চিতের সংশয় নিয়ে; হিন্দুস্থান হয়েছে হিন্দুর  দেশ,আর ওনার এ জন্মস্থান, সাতপুরুষের ভিটে,খুলনা হয়ে গেল পরদেশ,হয়ে গেল মুসলমানদের  দেশ;সঙ্গী-সাথীদের চোখ-মুখ গেল পাল্টে,হয়ে গেছে হিংস্র;না, এ দেশে থাকলে ধর্মের সঙ্গে প্রাণটাও চলে যাবে,হা ভগবান!
     গ্রামের  পথ ছেড়ে,জমির  আল ধরে নিঃশব্দে এগুচ্ছেন;দূরে মানুষের উচ্ছ্বাস  শোনা যাচ্ছে,আর চোখের জল ফেলে সস্ত্রীক  বিক্রম রায়,ধর্মও প্রাণ বাঁচাতে  অনিশ্চিতের  পথে।রাত গভীর, পথ দেখা দুষ্কর,তবু পরিকল্পনা মত এগোচ্ছেন। ছোটো বাচ্চাটা জল,জল করছে,রত্না,ওর মুখে হাত চাপা দিয়ে আছে;নাঃ!এত অপদার্থ  পিতা,সন্তানের মুখে জলটুকুও দিতে পারছে না।  একটা গ্রামের শেষে বটগাছের আড়ালে ওদের অপেক্ষা করতে বলে,বিক্রমবাবু,গ্রামের  ভিতরে টিবওয়েল থেকে জল আনতে গেলেন;স্ত্রী,রত্না,ছেলেদের নিয়ে রয়েছে উৎকণ্ঠায়;সময় চলে যায়,লোকটা এখনও এলো না; বড় ছেলেকে বললো,"যা না বাবাএকটু এগিয়ে,দেখ তো,তোদের বাবা তো এখনো এলো না।"
 বড় ছেলে গভীর  উৎকণ্ঠায়,চুপি চুপি গিয়ে দূর থেকে দেখে,টিবওয়েলের সামনে  গাছের ডালে বাবাকে  উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখেছে, নিথর দেহটা থেকে টস টস করে রক্ত  ঝরছে। কিছুটা সময় স্থাণুর মত থেকে,সম্বিতে  ফিরে,সে চোখের জল মুছে মা'র কাছে ফিরেছে। বাবার কথায়, সে বলে,"বাবা বললো, তোরা এগিয়ে যা,আমি পরে তোদের  সঙ্গে মিলবো।"এদিকে আকাশ  ফর্সা হয়ে আসছে,ছেলেটি আর বিলম্ব না করে, মা ও ভাইদের নিয়ে
দূরের বিলের দিকে যায়। বিলটায় ফুটে রয়েছে শত-সহস্র পানা-ফুল।বিলের জলে দু'ভাই  ও মাকে নিয়ে দিনের বেলা পানার মধ্যে আত্মগোপন করে থাকে,আবার  সন্ধ্যায় হয় পথ চলা। এভাবে দু'দিন  চলার পর ওরা মেন রাস্তায় উঠে;সেখানে মিলিটারী টহল রয়েছে;ঐ সশস্ত্র  বাহিনীর  লোকেরাই  অজ্ঞান  ভাই 'র জ্ঞান ফেরায়,ওরাই  ওদের উদ্বাস্ত  ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়।তারপর, এ ক্যাম্প  ও ক্যাম্প; মা রত্না ছেলেকে বাবার  কথা জিজ্ঞেস  করলে,ছেলের,উত্তর," বাবা বলেছে,তোরা এগেয়ে যা,তোদের সঙ্গে পরে দেখা হবে।" পঃ বাংলার ক্যাম্পে,ক্যাম্পে তখন,বুকচাপা কান্না আর অনিশ্চতয়ার  উৎকণ্ঠা। দেশের অন্যত্র,স্বাধীনতার   উচ্ছ্বাস আর পঃ বাংলায় হাহাকার। দেশ, স্বাধীনতা পেয়েছে।
     তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক  জল বহে গেছে;প্রায় ছ'মাস  পরে ছেলেটি বলে,"মা! বাবা আর নেই, বাবাকে মুসলমানরা মেরে ফেলেছে,বলে,হাউ,হাউ করে কেঁদে ফেলে" ;এতোদিন  যে যন্ত্রণা  বুকের মধ্যে জমা ছিল,পথ পেয়ে বন্যার জলের মত বাঁধনহারা হয়েছে।মা,রত্নার বিধবা সাজ তাকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ করেছে। শুরু হয়েছে জীবন  সংগ্রাম।
    কঠোর জীবন সংগ্রামে ছেলেটি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত  করেছে;ভাইদের লেখাপড়া শিখিয়েছে। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের   বাণিজ্য বিভাগের  অধ্যাপক  হয়েছে;অবসরকালের পরই আক্রান্ত  হলো মারনরোগে, হোলো ক্যান্সার। ছাত্ররা,তাদের আদর্শ  শিক্ষককে  বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ  চেষ্টা করলেও,শিকড়-হারা চন্দন বৃক্ষও যায় শুকিয়ে,কেবল  সে রেখে যায় স্নিগ্ধ সুবাস,নতুন প্রজন্মের কাছে   রেখে যায় নিজের অভিজ্ঞতার  ঝুলি,রেখে যায়
কর্মপন্থা,রেখে যায়জীবন-সংগ্রামের আলেখ্যে দৃঢ়তা।
    সরকার  থেকে দেওয়া জায়গায়,ছিটেবেড়া দিয়ে ঘরে  স্বাধীন  ভারতের প্রজন্মদের
 জীবন শুরু, আজও অব্যাহত,আজও চলছে স্বাধীনতার  হাড়িকাটে হিন্দু-বাঙালী নিধন ,জয় হো স্বাধীন  ভারত!
সাম্প্রদায়িকতার কথা বললে তুমি হও
মানবতাবিহীন, তুমি অপরাধী। শালা! লাগাই তোদের মুখে জুতি।
(ভাতৃপ্রতিম অরুণ বসুর স্মৃতিচারণ  করতে গিয়ে লেখকের এ অভিব্যক্তি)
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register