Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে উজ্জ্বল দাস

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে উজ্জ্বল দাস

পারফিউম

রিস্ট ওয়াচটা বলছে- সন্ধ্যে সাতটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। ভিক্টোরিয়ার সামনে, স্ট্রিট লাইটটার আবছা আলো- তোর চেনা থুতনিটা ক্রমশ অচেনা হয়ে উঠছে আমার কাছে। মনে হচ্ছিলো এই অর্ঘ্যকে তো আমি চিনি না। এত টাফ? আমার অর্ঘ‍্য? চোয়াল শক্ত করে আঁচ করেছিলাম- ঝড়ের পূর্বাভাস। ঝাঁ চকচকে পরিচিত রাজপথ যেন তমশাসাচ্ছন্ন। বাড়ি ফিরে এলাম। এতদিনের গভীর সম্পর্কে কি তাহলে বিরাট কনো ফাটল? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যেন রাত পেরিয়ে গেছে। পরের দিন ভোরবেলা বেজে উঠলো ল্যান্ড লাইন। কানে ধরতেই তোর ঝাঁঝালো কন্ঠস্বর। একটা মাত্র শব্দ খরচা করেছিলাম "আচ্ছা" আজ আমি সাকসেসফুল সিঙ্গলমাদার। তুই কী ভেবেছিলি? তোর দেওয়া মাংস পিন্ডটা... আমি নষ্ট করে ফেলবো! আমি অমানুষ ছিলাম না! আজ বুঝি... তুই আসলে, আমার যোগ্যই ছিলিস না।   টিং টং (কলিং বেল /আর দরজা খোলার শব্দ) -কেমন আছিস শতরূপা ? -আরে অর্ঘ্য? তুই? ডুইং ওয়েল। তুই কেমন আছিস? হোয়াট আ সারপ্রাইস...! হঠাৎ? -কেন? আসা উচিত ছিল না? -কেন? আসা উচিত বলে মনে হয় তোর? -আজ অন্তত এভাবে বলিস না। - ঠিক কী ভাবে বললে খুশি হবি? - দেখ সেদিন... -না অর্ঘ্য, আমি কিছুই শোনার জন্য প্রস্তুত নই আজ। আজ তুই হঠাৎ সতের বছর পর... জানিনা তোর কী অভিসন্ধি আছে। তবে এটুকু জানি তোর উপহার দেওয়া ভ্রুণটা একটা কন্যা সন্তান। সে আজ ভালো আছে। ভালো রাখতে পেরেছি তাকে। - কিন্তু বিশ্বাস কর... - - আমি সেই শতরূপা নেই আর। তাই বিশ্বাস করার প্রশ্নও নেই অর্ঘ্য। - মানে! - মানেটা খুব সিম্পল। বিশ্বাস করা ছেড়ে দিয়েছি - রূপা... -শতরূপা, শতরূপা চ্যাটার্জি। র‍্যাদার প্রফেসর শতরূপা চ্যাটার্জি। - শতরূপা। -নাউ, সাউন্ডস কারেক্ট। বল কী নিবি, ঠান্ডা ওর কফি। -না’রে, থ্যাংকস রূপা, সরি, শতরূপা। -আর কিছু বলবি? -প্লিস প্লিস... এভাবে বলিস না। -ঠিক কিভাবে বললে খুশি হবি? -শুনুন, ম্যাডাম শতরূপা চ্যাটার্জি, -বলুন মিস্টার অর্ঘ্য সেন। -শতরূপা, আমাকে শেষ কিছু কথা বলে যেতে দে। -বলে ফেল। -সেদিন ভিক্টোরিয়ার আবছা আলোয় তুই যে অর্ঘ্যকে চিনেছিলি, তা ছিলো অভিনয়। -হোয়াট দ্যা.. (দাঁতে দাঁত চেপে) -ট্রাস্ট ওয়ান্স। -এখন তুই যে পারফিউমটা ইউজ করেছিস তার নাম জানতে পারি? -নট ইম্পরট্যান্ট, বাট... -লেট মি কন্টিনিউ- -ওকে, ক্যারিওন ইয়োর স্টোরি। -দিস ইস ট্রুথ। নট দ্যা সো কল্ড স্টোরি। তোর মনে আছে নিশ্চয়ই, আমাদের দোতলা বাড়ির গ্রাউন্ড ফ্লোরে সদ্য একটা সুগন্ধীর গোডাউন করেছিলাম। -ইয়েস, ট্রু। -আই রিমেম্বার, দেন? -ভিক্টোরিয়ায় শেষ দেখা করার দিন সকালে, একতলার গোডাউনে হঠাৎই আগুন লেগে যায়। আজও তার কারণ জানি না। -সিমপ্যাথি ক্রিয়েট করার চেষ্টা করিস না, লাভ হবে না। -কোনো ক্ষতিও হবে না, পুরোটা বলে আমিই তোর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাব। তারপর ডাকলেও আর ফিরে আসবো না। -ওহ, সো সুইট, ক্যারি অন। -নিচের গোডাউনে লেগে যাওয়া আগুন নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত সুগন্ধীর গায়ে। এমনকি দোতলায় পৌঁছে যায় তার আঁচ। আমি খবর পেয়ে বাড়ির দিকে দৌড়ে যাই, ততক্ষনে অগ্নিদেব সিঁড়ি বেয়ে দোতলার বেডরুমে ঢুকে পড়েছে। পুড়িয়ে দিয়েছে অথর্ব বাবার পিঠ, ডান পা। -ওহ মাই গড! -তখন দমকলের শব্দে কিছুটা স্বস্তি পেলেও সুগন্ধীর ব্যবসার সমস্ত ইনভেস্টমেন্ট পুড়ে শেষ। বাবাকে কোনরকমে হাসপাতাল নিয়ে যাই। তুই যা জেদি, এসব সেদিন বললে বিশ্বাস করতিস না, তাই বাবাকে হাসপাতালে রেখে তোর সঙ্গে দেখা করতে এসে ছিলাম। যদি বোঝাতে পারি, যদি পিছিয়ে দিতে পারি বিয়েটা। -অর্ঘ্য! -হ্যাঁ ঠিক তাই, সবটা বলবো বলবো ভেবেও যখন বলতে পারলাম না, তখন স্থির করলাম তোর সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানাটাই বেস্ট, -কারণ? -কারণ, মন খুলে যার সঙ্গে সুখ দুঃখ আলোচনা করতে গেলে দুবার ভাবতে হয়, আর যাই হোক, সে কখনো লাইফ পার্টনার হতে পারে না। -অর্ঘ্য! এবার থাম অন্তত... -তারপর দাঁতে দাঁত চেপে সিদ্ধান্ত নিলাম পরের দিন সকালে। হাসপাতালে পৌঁছে দেখলাম সুগন্ধীর সুগন্ধে বাবা তখন অনন্তলোকের পথে যাত্রা করেছে। মাতৃহারা অর্ঘ্যের পকেটে কানাকড়িও নেই, কপর্দকহীন হয়ে তোকে শেষবারের মত ফোন করে জানিয়েছিলাম... -আচ্ছা... -বেনিয়াটোলা লেনের বাড়ি ছেড়ে চলে যাই চন্দননগরে মামার বাড়ি। -তারপর? -তারপর, সমস্ত পুড়ে যাওয়া স্বপ্নগুলোকে জড় করে শুরু করি নিজের পারফিউম ফ্যাক্টরি। -আবার! -হ্যাঁ, আবার। প্রায় সতের বছরের জার্নি। আজ তোর বাড়ি ঢুকতেই আমার কোম্পানির তৈরি পারফিউমের গন্ধ নাকে আসে, তাই তোকে পারফিউমের নাম জিজ্ঞাসা করি। এটা আমার লেটেস্ট অ্যাডিশান, “দ্যা লাস্ট ঈগনিশন” (দরজা খুলে বেরিয়ে যাবার শব্দ) -অর্ঘ্য...অর্ঘ্য.... প্লিস স্টপ... অর্ঘ্য।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register