Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব - ১৯)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব - ১৯)

সীমানা ছাড়িয়ে 

সবুজের মনে পড়ছে,

বিজয়ার সময় আমার মা জিমকে প্রথম মিষ্টিমুখ করাতেন। ধান রাখার গোলার তলায় একবার গোখরো সাপ দেখে, ঘেউ ঘেউ শব্দ করে জিম আমাদের দেখিয়ে দিয়েছিলো সাপটা। তারপর সাপুড়ে ডেকে সাপটি বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। বড়দার বিছানার মাথার কাছে সে শুয়ে থাকতো। কোনো বিপদ বুঝলে ঝাঁপিয়ে পরতো নিঃস্বার্থ ভাবে। প্রত্যেক প্রাণীর কাছে আমাদের শেখার আছে অনেক কিছু।

সবুজ ভাবে,মা ছোটো ভাইয়ের কাছে ভালো থাকতো। ভাইরা সবাই ভালো। শুধু আমি হয়তো খারাপ। তাই মা আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। আর তার দেখা পাই না।। মন্দিরের ঘরে যেতে ভয় লাগে।

তার মনে পরছে বাল্য জীবনের স্মৃতি।

তেঁতুলতলার মাঠে এসে ঢিল মেরে পেরে নিতাম কাঁচা তেঁতুল।একজন বহুরূপী হনুমান সেজেছিলো।আমাদের এক বন্ধু তার লেজে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেলো।

আর হনুমান লাফিয়ে শেষে জলে ঝাঁপ দিলো। চারদিকে প্রচুর লোকজন ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। তারা মজা দেখছে আর হাততালি দিচ্ছে।আমরা সবাই ওকে চাঁদা তুলে পাঁচশো টাকা দিয়েছিলাম।

তাল গাছের কামান হতো হেঁসো দিয়ে। মাথার মেথি বার করে কাঠি পুঁতে দিতো তাড়ি ব্যাবসায়ী। আমাদের ভয় দেখাতো, ধুতরা ফুলের বীজ দিয়ে রাকবো। সকালের তালের রস খেলেই মরবে সে। চুরি করা কাকে বলে জানতাম না। একরাতে বাহাদুর বিশুর পাল্লায় পরে রাতেসকালের তালের রস খেতে গেছিলাম। কারণ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তালের রস তাড়িতে পরিণত হয়। মদের মতো নেশা হয়। বিশু বললো, তোরা বসে থাক। কেউএলে বলবি। আমি গাছে উঠে রস পেরে আনি। তারপর গাছে উঠে হাত ডুবিয়ে ধুতরো ফুলের বীজ আছে কিনা দেখতো। পেরে আনতো নিচে। তারপর মাটির হাঁড়ি থেকে রস ঢেলে নিতাম আমাদের ঘটিতে। গাছেউঠে আবার হাঁড়ি টাঙিয়ে দিয়ে আসতো বিশু। সন্ধেবেলায় হাড়ি রসে ভরে যেতো। ব্যাবসায়ির কাছে গিয়ে বলতাম, রস দাও। বুক ঢিপঢিপ চাঁদের গর্ত। অবশেষে প্রাপ্তিযোগ। যেদিন রস পেতাম না তখন মাথায় কুবুদ্ধির পোকা নড়তো। তাতে ক্ষতি কারো হতো না। কোনো পাকামি ছিলো না।সহজ সরল হাওয়া ছিলো। ভালোবাসা ছিলো। আনন্দ ছিলো জীবনে। শয়তানের বাপ পর্যন্ত আমাদের সমীহ করে চলতো। কোনোদিন বাল্যকালে আত্মহত্যার খবর শুনিনি। সময় কোথায় তখন ছেলেপিলের। যম পর্যন্ত চিন্তায় পরে যেতো বালকদের আচরণে, কর্ম দক্ষতায়। হাসি,খুশি সহজ সরল জীবন।সবুজ বলে চলেছে তার প্রিয় বন্ধু সৌম্যকে।

ছোটোবেলার কার্তিক পুজো,গণেশ পুজো বেশ ঘটা করেই ঘটতো । পুজোর দুদিন আগে থেকেই প্রতিমার বায়নাস্বরূপ কিছু টাকা দিয়ে আসা হত শিল্পী কে ।তারপর প্যান্ডেলের জোগাড় । বন্ধুদের সকলের বাড়ি থেকে মা ও দিদিদের কাপড় জোগাড় করে বানানো হত স্বপ্নের সুন্দর প্যান্ডেল । তার একপাশে বানানো হত আমাদের বসার ঘর । সেই ঘরে থেকেই আমরা ভয় দেখাতাম সুদখোর মহাজনকে।সুদখোর ভূতের ভয়ে চাঁদা দিতো বেশি করে। বলতো, তোরা পাহারা দিবি। তাহলে চাঁদা বেশি দেবো।

এখন তার বৌ পরকীয়ায় মত্ত। ভেতরে ছিলোএকটা খাম, মুখ খোলা। চিঠিটা বের করে দেখলো বৃন্দাবনের চিঠি।লেখা আছে, এবার বিয়ে হয়ে গেছে,কি মজা বলো। মনে পড়ে প্রথম নরম অনুভবের কথা। সবুজ আর পড়লো না। রেখে দিলো। এই বয়সে এইসব হয়। কিন্তু বিয়ের পরে মেয়েটা বলছে ক্ষতি করবে। বিয়ের পরে তো সব ঠিক হয়ে যায়। সুমন ভাবে আমিও তো পিউকে ভালোবাসতাম। ওর বিয়ে হওয়ার পরে তো আর দেখা করি নি। কিন্তু সবাই তো এক রকমের হয় না। তারপর খাওয়া দাওয়া করে শুতে রাত দশটা বেজে গেলো। সুমনা বিছানায় উঠেই বললো,মন শরীর ভালো নেই। শুয়ে পড়ো। সবুজ সুযোগ পেয়ে বললো,মন খারাপ কেন? তুমি কোনো ছেলেকে ভালোবাসতে?

------কি হবে এসব কথা শুনে?

------না, বলো না

-----হুঁ

------কি নাম ছেলেটার?

-----বৃন্দাবন

-------ও আজকে ছেলেটা এসেছিলো না কি?

-----হ্যাঁ, এসেছিলো

----আচ্ছা ও তোমাকে কিছু করেছে?

-----কিস করেছে

------আর কিছু

------আর একটা ছেলে, সিনেমার হলে বুকে হাত দিয়েছিলো।

-----ও আর কিছু

-----আর শুনতে হবে না। শুয়ে পড়ো।

সবুজের সারারাত ঘুম এলো না। ভাবলো,শালা জালি মালটা আমার কপালেই জুটলো।

সুমনা খুব সরল সহজ মেয়ে। তার সরলতার সুযোগে দু একজন খারাপ ব্যবহার করেছে। কিন্তু তার জন্য সুমনার মত মেয়েদের কোনো দোষ নেই।প্রয়োজনে জটিল হতে হয়।সংসারের সুখের জন্য মিথ্যা কথা বলার শিল্পটা জানতে হয়।তা না হলে বিপদ প্রতি পদে পদে।

কিন্তু বিষফল পুঁতে দিলো সংসারে সুমনার সরলতা। সে মনে ভাবে, এত সরল হওয়ার প্রয়োজন নেই,যে সরলতা সমস্ত সুখ কেড়ে নেয়।

পরের দিন সবুজ বৃন্দাবনকে বাজারে ধরেছিলো।বলেছিলো,শালা বিয়ের পরে হারামীগিরি আমি সহ্য করবো না। এরপর যদি দেখি তোকে তাহলে তোর বৌ কে তোর বিয়ের পিঁড়ে থেকে তুলে সকলের সামনে শালা...। আর বললাম না। বৃন্দাবন জোড় হাতে ক্ষমা চেয়ে পালিয়েছিলো।সে দেখেছিলো পরে বৃন্দাবন আর একটা সুন্দরী মেয়েকে পটিয়েছে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register