Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব - ১৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব - ১৮)

সীমানা ছাড়িয়ে

ঠিক আছে তাই হবে।তোকে অনেক ধন্যবাদ।

----বন্ধুকে, শালা ধন্যবাদ জানানোর কি আছে?যা, তাড়াতাড়ি যা।একসঙ্গে বাড়ি যাবো।

তারপর বিজয় একটা দাঁইহাটের টিকিট কেটে ম্যাগাজিন কিনে মহানন্দে বাড়ি চলে এলো। বন্ধুও তার বাড়ি চলে গেলো।

বাড়িতে এসেই বিজয় বৌকে বললো,বেশ ভালো করে আদা দিয়ে চা করো তো। একটু রসিয়ে সব গল্পগুলো পড়বো।বিজয় ভালো করে বিছানায় বসলো।

বিজয়ের বৌ মুন চা করে কাপ দুটি টেবিলে রাখলো।তারপর বসলো বিজয়ের পাশে। গল্পে ডুব দিয়েছে বিজয়।

মুনের মন ফিরে গেলো, পাঁচ বছর আগে কলেজ জীবনে।তখন ওরা দুজনে দুজনকে চিনত না। একদিন কলেজের কমন রুমে বিজয় বসে আছে। এমন সময় মুন গিয়ে বসলো তার পাশে। একবার মুখ তুলে তাকিয়ে বিজয় আবার নিজের কাজ করতে লাগলো।মুন বললো,আপনি কোন ইয়ার?

------ থার্ড ইয়ার, বাংলা।

------আমারও বাংলা। ফার্ষ্ট ইয়ার।

-----ও তাই। কোথা থেকে আসেন।

------টিকিয়াপাড়া।

------ও আমি পটুয়া পাড়া থেকে।

-----তাহলে তো একই দিকে। খুব ভালো হলো একসঙ্গে যাওয়া আসা করা যাবে।

-----অবশ্যই।

তারপর থেকে ওরা একসাথে ওঠাবসা করতো।ভালোলাগা ক্রমশ ভালোবাসায় পরিণত হলো। তারপর বিয়ের। বিয়ের পরেই একটা ফার্মে চাকরী।এখন ওরা ঘর ভাড়া নিয়ে সুখে আছে।

মুন একটা গান গাইছিলো। বিজয়ের জামাটা আলনা থেকে টেনে গন্ধ শুঁকে দেখলো কাচতে হবে কি না। কাচতে হবে, তাই পকেট হাতড়ে টাকা পয়সা কাগজ বের করে টেবিলে রাখলো।মুন দেখলো,কাগজের সঙ্গে একটা রেলের টিকিট। মুন ভাবলো,অফিস তো সাইকেলে যায় তাহলে দাঁইহাটের টিকিট কেন? দাঁইহাটে আমাদের সাতকুলে কেউ থাকে না। তাহলে ওখানে কেন? কই বিজয় তো বলে নি, সে ওখানে গিয়েছিলো? তাহলে কি বিষয়টা বলার মত নয় বলে এড়িয়ে গেছে। সন্দেহ দানা বাঁধলো মুনের মনে। গান থেমে গেছে। অকারণে থালা, বাটি, গ্লাস ফেলে আওয়াজ করছে। বিজয় বললো,আস্তে কাজ করো।গল্প পড়ছি। ----আমি খেটে মরবো আর তুমি বাবুমশাই বসে গল্পের বই পড়বে?

---- কি হলো, অইভাবে কথা বলছো কেন?

----না বলবে না। আমি একা একা বাড়িতে থাকি আর উনি হিল্লি দিল্লি করে বেড়াচ্ছেন।

-----কি বলছো,বুঝতে পারছি না। পরিষ্কার করে বলো।

-----দাঁইহাট কেন গেছিলে।কার কাছে। নিশ্চয় প্রেমিকার কাছে। আমাকে তবে বিয়ে করলে কেন?

----আরে দাঁইহাটে কেন যাবো?

-----আবার মিথ্যে কথা। আমার কাছে প্রমাণ আছে।

----কি প্রমাণ। কই দেখাও।

মুন দাঁইহাটের টিকিট এনে খাটে ফেলে দিলো।বিজয় হেসে উঠলো জোরে। বললো,আজ বই কিনতে প্ল্যাটফরমে গেছিলাম।প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম দশ টাকা। আর দাঁইহাটের টিকিট পাঁচ টাকা। টিকিট একটা থাকলেই হলো। তাই পাঁচ টাকা বাঁচাতে দাঁইহাটের টিকিট কাটলাম। সুমন আমার সঙ্গে ছিলো। ওকেই জিজ্ঞাসা করো। তারপর মোবাইলে সুমনকে ধরে ফোনটা দিতে গেলো বিজয়। মুন ফোনটা কেটে দিয়ে হাসিমুখে বললো,আমার বুঝতে ভুল হয়েছে। তারপর বিজয়ের গলা পেঁচিয়ে ধরে বললো,তুমি এমনি করেই শুধু আমার হয়ে থেকো চিরকাল।

সবুজ মায়ের কাছে শিক্ষা পেয়েছে সততার। সৌম্যর সঙ্গে তার খুব ভাব।মনে পরছে তার মায়ের কথা। সে আপন মনেই বলে চলেছে তার মায়ের কথা। মা রক্ষাকালীর পুজো দিতে দিতে গেয়ে উঠতেন ভক্তিগীত। নিরামিষ মা কালীর আশীর্বাদ মাথায় রেখে ছেলেদের নিয়ে সংসার চালাতেন ছন্দে। অভাব থাকলেও কোনোদিন তার ছাপ পরেনি মায়ের চোখেমুখে। আসল মূল্যবান রত্নের সন্ধান তিনি পেয়ে গেছিলেন পুজোর আসনে বসে। কোনোদিন তার কথায় প্রকাশ পেতো না সেসব কথা। তার চলনে, বলনে ফুটে উঠতো মাতৃরূপের জলছবি। মাকে দেখেই মাথা নত হয়ে যেতো সকলের। দাদু মাকে, মা বলেই ডাকতেন। তিনি সময়ে অসময়ে মাকে রামপ্রসাদী শোনাতে বলতেন। মায়ের গান শুনতে শুনতে একদিন চলে গেলেন পরপারে তৃপ্ত মুখে। একবার বৈশাখি ঝড়ে আম গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়লো। মা বললেন,তোদের দাদুর আত্মা মুক্তি পেলো। অই ডালে বাঁধা ছিলো দাদুর মুক্ত হবার লাল চেলি। অবশ্য এটা ছিলো এক সাধুবাবার তুকতাক। বুড়ি ঠাকুমা সেদিন কেঁদে উঠেছিলো জোরে। ঠাকুমা বলে উঠলেন,চলে গেলো,ও চলে গেলো। কোনো কিছুই আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না। তবু কিছু ঘটনা বার বার তার অস্ত্বিত্বের কথা স্বীকার করে নেয়। একটা দেশি কুকুর আমাদের বাড়িতে থাকতো ছোটে থেকে। তোমরা বিশ্বাস করবে কি না জানি না? সে অমাবস্যা,পূর্ণিমায় কিছু খেতো না। রক্ষাকালী পুজোয় উপবাস করতো। তার সামনে খাবার দিয়ে দেখা গেছে সে খাবারের ধারের কাছে যেতো না। শুধু কথা বলতে পারতো না। কিন্তু ভাবে, ভঙ্গিমায় সব বেঝাতে পারতো মানুষের মতো। মা বলতেন,পূর্বজন্মে তোর সঙ্গে কোনো আত্মীয়তা নিশ্চয় ছিলো। তাই তোর আমাদের বাড়িতে আগমণ। যেদিন জিম দেহ রেখেছিলো সেদিন ওকে মাটি চাপা দিয়ে ধূপ আর ফুলে শেষ বিদায় জানিয়েছিলো সারা পাড়ার বাসীন্দা। তাহলে কি বলবে তুমি এই ঘটনাকে। কোন যুক্তিতে অস্বীকার করবে তার সারা জীবন ধরে পালন করা ব্রত,উপবাস। বলবে,কাকতালীয়। সেসব তো এক আধবার হয়। সারাজীবন ধরে নিয়মিত হয়।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register