Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৬৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৬৭)

রেকারিং ডেসিমাল

বিয়ের দুবছর। বিবাহবার্ষিকীর দিনই সাধভক্ষণ। বর বউ দুজনের পরিবারেরই আত্মীয়রা সব নিমন্ত্রিত। বাড়ির বড় তরফের ছেলে, অন্য ছেলেমেয়েদের চেয়ে অনেকটাই বড়। তাই সবার দাদা। একেবারে ইউনিভারসাল দাদা যেমন হতে হয়। যা বায়না ; দাদা। কিছু অকাজ করার জন্য ছোটদের বকুনি খাওয়া থেকে বাঁচাতে হবে ; দাদা। সবাই মিলে গভীর রাতের নাইট শোতে যাবার পারমিশন জোগাড় করার মুখপাত্র ; দাদা। বিশেষ অপথ্য কুপথ্য খাবার পয়সা আর সুযোগ করে দেবার জন্য তো বটেই ; দাদা। তার বিবাহবার্ষিকী। সব দেওর ননদেরা লাফাচ্ছে কি কি গান চালিয়ে দাদা বৌমনির চার দিকে ধেই ধেই করে নাচা যায়। এদিকে সাধভক্ষণ দুপুরে। সেটা বড়দের ইভেন্ট। কাকি, জেঠি, মাসি, পিসি, মামি, দিদা, এবং তাদের সঙ্গের পুরুষ মানুষরা, মানে দুই গুষ্ঠির কেউ বাকি নেই। এমনকি বউয়ের রাঙামাসির শ্বাশুড়ি অবধি এসেছেন। যে হেতু সাধ খাওয়া বললেই এক্কেরে মেয়ে মহলের ব্যাপার, এবং বাচ্চা হবার সাথে সম্পর্ক তাই, ছি ছি পুরুষদের এসব উচ্চারণ ও করতে নেই। ( গাইনোকোলজিস্ট হবার চেষ্টায় থাকায় বউ ভাবে, কি জ্বালা, বাচ্চাকাচ্চা সব কি পুরুষ মানুষ ছাড়াই পয়দা হয় তবে? ) বুদ্ধিমতী আগের প্রজন্মের বড় বউ ,শ্বাশুড়ি, তাই একসাথেই বিবাহবার্ষিকী ও বলেছেন। সে বললে ত দোষ খন্ডে যায়। পুরুষ আত্মীয়স্বজনরা নির্দ্বিধায় আসতে পারছেন। মানে সারা দিন হই হই আর বিপুল খাওয়া দাওয়া। বৌ পারশে মাছ খেতে ভালো বাসে। তাই নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পারশে মাছ কিনে এনেছেন বাজারু শ্বাশুড়ি মা। এত লোকের জন্য সরষের ঝাল দেওয়া গোটা গোটা মাছ, চাট্টিখানি কথা না। মাছ ভেঙে গেলে ত চলবে না। ঠাকুর এসেছে রান্না করতে। নাম দুঃশাসন। ছোটরা হেসে অস্থির হয়। বলে,  দুঃশাসন কি? ওর নাম ত দ্রৌপদী হওয়া উচিৎ। যা ভালো রান্না। আহা, ভেবেই জিভে জল এসে যায়। এইসব হুল্লোড়ের মধ্যেই সাজগোজের তাড়া। এই বউ, সাজ সাজ। শরীরে তাল নেই। বড় হয়ে গেছে ভিতরে থাকা মানুষ। টলে যায় ছোট সাইজের মা হাঁটতে হাঁটতে। তাও দুই বাড়ির সব প্রিয় মানুষ আসাতে ভারি আল্লাদ হচ্ছে। একটা জরির চৌখুপি দেয়া সমুদ্র সবুজ তাঁতের শাড়ি বরের সাথে দক্ষিণাপণ থেকে কিনে এনেছিল শ্বাশুড়ি মায়ের অর্ডারে। এনে বকুনি খেয়েছিল অবশ্য। তাঁত?  এই কিনতে বলেছি?  আমার ছেলের পয়সার প্রতি এত মায়া দেখিয়ে আদিখ্যেতা করার দরকার ছিল? কোথায় আমি গেলাম না, কিনা, নিজে পছন্দ করে বরের ঘাড়টি ভাঙুক। সেই ভিখিরির মত পছন্দ করে আনলে? একটা দামি সিল্ক কিনতে পারলে না? চুপ করে থেকে, মিটিমিটি হাসে বউ। সে যে চাম্বালামা এবং ডেনিমের সাথে বাটিকের পাঞ্জাবি সহ শঙখ ঘোষ আওড়ানো বদ। তার কাছে তাঁত মানে আঁতেলেকচুয়াল। গ্লসি সিল্ক একটু খেলো। সে তো মাটির গয়না পরে বিয়ে করতে চেয়েছিল। মা অনেক কষ্টে ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, অন্তত একটা একটা সোনার হালকা গয়না পরো। বাকি যা আমি পরে পৌঁছে দেব না হয়। এখানে ও বকুনি। বরকে ফরমায়েশ ছিল মায়ের। সাধ প্লাস বিবাহবার্ষিকী, সোনার গয়না কিনে দিবি শাড়ির সাথে। পাতলা ফিলিগ্রি করা ছোট্ট ফুল মাঝখানে, ওয়েডিং ব্যান্ডের মত একটা আংটি পছন্দ করে এনেছে বউ। এত হাল্কা গয়না পছন্দসই হয়নি মায়ের। তাও সেই সমুদ্রসবুজ তাঁতের আঁচল ভাসিয়ে, শাঁখা পলা বাঁধানো, চূড়, জড়োয়ার সেট ইত্যাদি পরতে পরতেই হাঁফিয়ে যায় হবু মা। চুল খোলাই রইল। ভাবল,  সবাই আশীর্বাদ করতে বসবে যখন,  হাত খোঁপা করে নেব না হয়। এমন সময় এসে গেলেন ক্ষুদ্র ভাগ্নী। ফ্রক পরা পুটপুটি। মামি মামি, এই দ্যাখো দিদা কি দিলো। ক্লান্ত চোখ তুলে হাসে মামি, কি রে সোনা ? ওমা!! পুচকের হাত ভরা এত্ত লাল টুকটুকে গোলাপ। বর এসে ঘরে ঢোকেন হাতে ক্যামেরা। বউয়ের ক্লান্ত হাসি মুখ,  হাঁটু ছোঁয়া খোলা চুল, আর ভাগ্নীর হাতের দুই ডজন রাঙা গোলাপের আলো, সব ধরা রইল ক্যামেরায়। এত বড় আয়োজন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত মানুষটি এবার ঘর্মাক্ত হয়ে এ ঘরে  ঢোকেন এক ফাঁকে। এই যে বউ.. বউ ভাবে, এইরে, আবার কাজল নেই, লিপিস্টিক নেই, চুল খোলা, খাবো বকুনি রে। কিন্তু না। এলোমেলো চুল, হলুদের দাগ মাখা আঁচল বলে, এক এক বছরের এক ডজন রেড রোজ , বুঝলি কিছু? হুঁঃ লাভ সাইন কি তোমরাই জানো খালি? হাসতে হাসতে লাল হয়ে যায় দু বছরের পুরোনো বউ। শ্বাশুড়ি বলে যান,  এ বেলা একটু শাড়ি পরো কষ্ট করে। বিকেলে আমি নতুন সালোয়ার কামিজ রেখেছি লীলার থেকে । কিন্তু সে আরেকটা অন্য গল্প।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register