Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৩৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৩৭)

পুপুর ডায়েরি

চারু মার্কেট নামক বাজারের মেন গেট দিয়ে ঢুকলে, ডান দিকে প্রথমেই ছিলো রুটি কাকুর দোকান। লম্বা পাঞ্জাবি, সাদাই বেশির ভাগ সময়। আর পাজামা পরা দোহারা শ্যামলা চেহারার মানুষটি। শীতকালে খয়েরী তুষের চাদর পিঠের দিক দিয়ে ঘুরিয়ে ইংরেজি এক্সের মত করে জড়িয়ে থাকত। রোজ, “ এক পাউন্ড দেবেন ” বলা বাবা মশাই আর তাঁতে এই প্রথম দেখাতেই যে অনাবিল হাসি চালাচালি হত, তা আজকালের প্রাণের বন্ধুদের মধ্যে ও দেখা যায় না। এ দোকানে নীচে থেকে ওপর শুধু বেকারির জিনিস। মানে নানা কোম্পানির পাউঁরুটি, কেক, বিস্কুট ইত্যাদি। ক্রিসমাস কাছে এলে কত রকম কেকের বাহার, আর ক্রিম বিস্কিটের প্যাকেট দেখেই মোহিত হতাম। পাউঁরুটি কিন্তু কমলের দোকানেও পাওয়া যায়। কিন্তু না। পাউঁরুটি আমরা রুটি কাকুর দোকান থেকেই কিনি। ঠিক যেমন মাছ কিনি,বিশাল কালো গোলগাল চেহারার সহদেব আর তার ছোটো মতন ভাই লক্ষ্মণের কাছ থেকে। সহদেবের ভাইয়ের নাম কেনো লক্ষ্মণ এইটা জিজ্ঞেস করবেন না। এ রহস্যভেদ করা পুপুর কম্মো নয়। এঁরা বড়ো মাছ বিক্রি করতেন। মাছের নাম জানতাম না। পুপু জানত এই বড়ো বঁটিতে কাটা মাছের নাম, কাটা পোনা। আর বাবা ছোটো মাছের থলি এগিয়ে দিয়েই বলেন, গাদার মাছ দিয়ো সহদেব, পাঁচ টুকরো। তখন ত ফ্রিজ ছিলো না। সকালে তিন জন মাছের ঝোল খাইয়ে। বিকেলে বাবা রুটির সাথে কখনওই মাছ খান না। কাজেই, পুপু মুখস্ত করে রেখেছিল, গাদার মাছ, পাঁচ পিস। কোনো দিন বাবা সকালে না আসতে পারলে, ভীষণ বিজ্ঞের মতো পতির মা -মাসির সাথে গম্ভীরমুখে বাজারে আসত পুপু। মাছের থলি এগিয়ে, আঁশটে গন্ধের খারাপ লাগা চেপে রেখে কাকু দাও, বলে মাছ নিয়ে যেতো। মাছের ঝোল ছাড়া মা ভাত খেতে পারেন না যে। মাছের বাজারে একটু ভেতর দিকে ঢুকলে একটা লম্বা উঁচু বাঁধানো রোয়াক। তাতে নিতাই কাকু বসে। ওর পাশে লোহার বড়ো গোল পাত্রে জল থাকে। তাতে খলবল করে সাঁতার কেটে বেড়ায় অনেক রকম মাছ। রবিবার হাতে সময় থাকে। বাবা এসে, নিতাই কি খবর, বলে মোটা গলায় হাঁক দেন মিটিমিটি হেসে। নিতাই কাকু খুব স্মার্ট লোক। হিলহিলে চেহারা। বুশ শার্ট আর ফুল প্যান্ট পরনে। সামনের দাঁতগুলো একটু বড়ো। সেও উত্তরে যা একখান বিগলিত হাসি দেয় পাশে রাখা গামছায় হাত মুছে, তারপর হাত কচলে। “ আসুন আসুন, দাদা কেমন আছেন?” পাশ থেকে পুপু উঁকি মারলে, “ কি বাবু পড়াশোনা কেমন হচ্ছে? ” মনে হয় বাজার করতে নয়, রবিবার বলে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা হয়েছে। এইবারে নানান রকম মাছ, তার গুণকীর্তন, কেন সেজদার জন্যই নিয়ে নিতাই বসে আছে, দাম ত কোনো ব্যাপারই নয়, দাম কি সে কখনো চেয়েছে? তার সাথে বাবার, নিতাইকে মাছ না বিক্রি করে ডাকাতি করার উপদেশ… পুপু একবার বাবার মুখের দিকে চায়, একবার নিতাই কাকুর দিকে। একেবারে নাটক দেখার মত টানটান উত্তেজনা। চারু মার্কেট নামক বাজারটা আর কোথাও রইল না ; এতে যে কেন এই পঞ্চাশ পেরোনো মনে এত কষ্ট, কেউ কি বুঝবে?
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register