- 90
- 0
কৈলাসে কী কাণ্ড!
কৈলাস থেকে বঙ্গের উদ্দেশে রওনা দেবার আগে ভাই বোনেরা সব চমৎকার সাজুগুজু করেছে। লক্ষ্মীর সাজটা একটু বেশি। তাই দেখে কার্তিক ফুট কাটল, লক্ষ্মী দিদিরই এবার বাজার। তাই শুনে নন্দি বলল, তা আর হবে না, এবার যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে হৈচৈ পড়ে গিয়েছে। ফ্যান্টা ফ্যাবুলাস। এত পপুলার আর কোনো স্কিম হয়নি। ভৃঙ্গি সরস্বতীর দিকে ইঙ্গিত করে বলল, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডটাও চমৎকার। কিন্তু অতো পপুলার হল না কেন কে জানে!
কার্তিক বলল, না বোঝার আবার কী আছে গো! বঙ্গে স্কুল কলেজে পড়ে আর চাকরি পেতে হচ্ছে না। চাকরির সুযোগ আর নেই। তাই লোকেরা ছেলেপিলেদের পড়াশুনা করতে আর বলে না। স্টুডেন্ট না হলে আর ক্রেডিট কার্ড নিয়ে করবে টা কী?
নন্দি বললে, ওই তোদের এক দোষ। জানিস, সারা ভারতে লাখখানেক স্কুলে মোটে একটা করে মাস্টার। শুধু বঙ্গের দোষ দেওয়া কেন বাপু?
ভৃঙ্গি তাকে মুখ ভেঙচে বলল, সারা ভারতে হচ্ছে বলে বঙ্গের দোষটা খাটো হয়ে যায় কি?
লক্ষ্মীর লিপস্টিক ঘষা তখনো শেষ হয় নি, মা দুর্গা তাড়া দিলেন, এই এক মেয়ে হয়েছে বাপু, ঘণ্টাখানেক ধরে লিপিস্টিক ঘসছে তো ঘসছেই।
গণেশ বলল, মা, কথাটা লিপিস্টিক নয়, লিপস্টিক। লিপ মানে ঠোঁট।
দুর্গা রেগে বললেন, তোমাকে আর মায়ের ভুল ধরে বাহাদুরি দেখাতে হবে না। রাজ্যিশুদ্ধ লোকে তোকে গোবরগণেশ বলে, তা জানিস?
ভৃঙ্গি বললে, মা গো, সে দিন আর নেই। বাংলায় এখন জোরদার গণেশ পুজো হয়। মহারাষ্ট্রে প্রচুর বাঙালি করে খায় কিনা, তাই দেখাদেখি শিখে নিয়েছে।
কথা ঘোরাবার ছলে তিনি সরস্বতীর দিকে তাকিয়ে বললেন, সরো মা, তোর আবার কি হল, চোখ ছলছল করছে কেন? জ্বরটর বাধিয়ে বসিস নি তো?
নন্দি বললে, মা সরোদিদির চোখে বালির কুঁচি পড়েছিল।
সরস্বতী রেগে উঠে বলল, কে তোমাকে ফুট কাটতে বলেছে বলো দেখি? কে বলেছে আমার চোখে বালি পড়েছিল?
নন্দি বললে, তা তুমি চোখ মুছছিলে যে?
সরস্বতী বললেন, সে আমি অমনি অমনি মুচছিলাম। আমার চোখ, আমার ইচ্ছে করলে হাজারবার মুছব।
ভৃঙ্গি বললে, তা মুছো। রুমাল লাগলে বোলো, এনে দেব 'খন। আমরা ভাবছিলাম দিনের পর দিন স্কুল খোলে না, ঝাঁটপাট পড়ে না। তাই বুঝি তুমি কাঁদছ।
দুর্গা বললেন, কাঁদিস না মা, সাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
সরস্বতী বললেন, ওমা, কাঁদব কোন্ দুঃখে? ইশকুল বন্ধ তাতে কি? অনলাইনে পড়া চলছে তো।
গণেশটা বলল, তা খুব চলছে, সব ছেলেপিলে অনলাইনে পড়ে উলটে যাচ্ছে। বঙ্গে এখন সব অনলাইন। পোর্টাল ঘুরছে তো ঘুরছেই। খুব উন্নতি হচ্ছে কি না!
কার্তিক বললে, তা বেশ একটু উন্নতি হল বৈকি। ম্যাগাজিন এখন ছাপতে হচ্ছে না। ই ম্যাগাজিনে কাজ সারা। ই বুক বেশ বিকোচ্ছে। সরকারি মিটিং এখন ইটিং ছাড়াই হচ্ছে। সন্ধে নামলেই ভিসি।
দুর্গা বললেন, ইশশ, হিসি?
গণেশ হেসে বললে, হিসি নয়, হিসি নয়, ভিডিও কনফারেন্স, ভি সি।
দুর্গা বললেন, কিসের এত কনফারেন্স, বুঝি না বাপু। স্কুল বন্ধ, রান্নার তাড়া নেই। রয়ে বসে করো। আর দুয়ারে রেশন। ডিলাররা মুটে সেজে ঘাড়ে করে রেশনের মাল বাড়িতে দিয়ে যাবে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আছে। কর্তা রোজগার করতে না গেলেও চিন্তা নেই। মিঞা বিবি একসাথে বসে লুডো খ্যালো, ব্যস্। নো দুশ্চিন্তা, ডু ফুর্তি।
কার্তিক হেসে বলল, আর দু পাত্তর মাল। কুড়িটাকা পাউচ। অঢেল সরকারি বন্দোবস্ত।
দুর্গা চোখ পাকিয়ে বললেন, গুরুজনের সামনে কি করে কথা বলতে হয়, এই লকডাউনে সব ভুলে মেরে দিয়েছ দেখছি!
গণেশ বলল, মা গো, রাগ কোরো না, ওই কাজ কম্ম না করে ফোকটে পয়সা পেলে মানুষ মাল টাল বেশি খায়। মাল খেলে বুদ্ধি টসকে যায়। লোকেরা বেসামাল হয়ে থাকে।
নন্দি বলল, জুয়োও খেলে। লুডো অবশ্য নির্দোষ। তবে তাসের জুয়ো বেশ চলে। লটারির বড় রমরমা হয়েছে। ও একরকম জুয়োই হল।
কার্তিক বলল, ফোকটে পয়সা পেলে জুয়ো আসবেই। পাণ্ডবদের যদি কোদাল বেলচা নেড়ে খেতে হত, তাহলে জুয়োর খপ্পরে পড়তে হত না।
ভৃঙ্গি বলল, পাঞ্চালির কাপড় ধরেও টান দিতে সাহস করত না। অন্ততপক্ষে বিরোধিতাটুকু হত।
বঙ্গে বিরোধিতা জিনিসটা চিরশান্তিতে শয়ান। বিদ্রোহী রণক্লান্ত।
এমন সময় শিব এসে দাঁড়ালেন। বললেন, তোমরা এখনো রওনা হওনি যে ! ওদিকে পুজো যে উদ্বোধন করা হয়ে গেল। টিভিতে দেখাচ্ছে!
দুর্গা বললেন, বললেই হল? প্রতিমা মণ্ডপে পৌঁছল না, তার আগেই পুজো উদ্বোধন হয় কি করে?
শিব দুহাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে বললেন, তিনি চিন্ময়ী, ব্রহ্মস্বরূপা। সকলই তাঁর ইচ্ছে।
দুর্গা রেগে উঠে বললেন, তুমি না বামদেব? বাম মানে বিরোধিতা। বাম হয়ে বিরোধিতা ভুলে গেলে?
শিব গঞ্জিকা আরক্ত ঢুলুঢুলু নয়নে বললেন, আমি বামেও আছি, রামেও আছি।
দুর্গা হুঙ্কার দিয়ে বললেন, এবার আর বঙ্গে যাব না। আমি না পৌঁছতেই পুজো উদ্বোধন! মজা টের পাওয়াচ্ছি। অ্যাই বাচ্চারা। এবার আর যাওয়া হচ্ছে না। কৈলাসে তুমুল সোরগোল পড়ে গেল।
0 Comments.