Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

রম‍্যকথায় মৃদুল শ্রীমানী

maro news
রম‍্যকথায় মৃদুল শ্রীমানী

পঞ্চপাণ্ডব আর কুকুর

কুকুরের সেই আরেকটা গল্প ছিল। সেই যে যুধিষ্ঠির সশরীরে স্বর্গারোহণ করছেন। তার সাথে রয়েছেন আর চার পাণ্ডব। আর সেই যে সব দুঃখ কষ্টের ভাগীদার দ্রৌপদী কৃষ্ণা যাজ্ঞসেনী । হেঁটে চলেছেন সস্ত্রীক পঞ্চপাণ্ডব। সঙ্গে চলেছে সেই কুকুর। পথ চলতে চলতে পড়ে গেলেন পাঞ্চালী যাজ্ঞসেনী কৃষ্ণা। পড়ে গেলেন, আর ওঠেন না। উঠবেন না। সমস্ত কিছুর অবসানে চিরকালের মত থেমে থাকা দ্রৌপদীর । মধ্যম পাণ্ডব অস্থির হয়ে বললেন, কেন মহারাজ, কেন, কোন পাপে পতন হল কৃষ্ণার ? অবিচলিত মুখে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির বললেন ভীমসেন, শ্রবণ করো, যাজ্ঞসেনী তোমাকেই বেশি ভালবাসতেন । আকস্মিক ব্যথায় বিকৃত হয়ে গেল ভীমসেনের মুখ। এই কি সেই রাজা, যিনি ধর্মপুত্র? সহসা ভীমের মনে হল সেই অজ্ঞাতবাস পর্বে বিরাট রাজার রাজবাড়িতে ভীম নিয়েছেন বল্লভ পরিচয়ে পাচকের কাজ। আর অন্য ভাইরা আছেন কেউ কঙ্ক নামে রাজার বয়স্য হয়ে দ‍্যূতক্রীড়া করেন, কেউ গ্রন্থিক নামে গোসেবা, গোপালন, গোরক্ষা করেন। কেউ তন্ত্রীপাল নামে ঘোড়ার দেখভালে ব্যস্ত। তৃতীয় পাণ্ডব কিরীটি ধনঞ্জয় নারীসুলভ বেশ নিয়ে বৃত হয়েছেন বৃহন্নলা বৃত্তিতে। আর বিরাট রাণী সুদেষ্ণার কেশ কবরী দাম সাজাবেন বলে রয়েছেন সৈরিন্ধ্রী । ভায়েরা সব দ্রৌপদীর জন্য কোড নেম নিয়েছেন, জয়, জয়ন্ত, এই সব। ভীম সেন সেই কোড নেম এ জয়ন্ত । তার পর কীচকবধের কথা মনে পড়ে গেল ভীমের। ভীমের মনে পড়ে গেল একবস্ত্রা রজঃস্বলা পাঞ্চালী যাজ্ঞসেনীকে কৌরবসভায় বাজি রাখলেন ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির। দ্রৌপদী প্রশ্ন তুলেছিলেন, রাজা যুধিষ্ঠির কাকে আগে বাজিতে হেরেছেন, নিজেকে না বধূকে? রাজা যদি নিজেকে আগে বাজিতে হেরে থাকেন, তাহলে তিনি কৌরবের দাস হয়েছেন আগে। দাস হবার পর যাজ্ঞসেনীকে বাজি রাখার নৈতিক অধিকার নেই যুধিষ্ঠিরের । কৃষ্ণা তাঁর স্ত্রী হলেও দাসত্ব প্রাপ্তির পর তিনি স্ত্রীর উপর অধিকার হারিয়েছেন। কিন্তু, কুরুসভায় তখন কারো মিনতি শোনার ইচ্ছে নেই ধার্তরাষ্ট্রদের। ওই কথা বলা, যুক্তিবিচারের ফুরসৎ না দিয়েই গুরুজনদের সামনেই কৃষ্ণার কাপড় ধরে দুর্জন সুলভ দুঃসাহসিক দুঃশাসনিক টান। সর্বসমক্ষে বিবস্ত্রা হয়ে দ্রৌপদী কাঁদছেন । যুধিষ্ঠির নতমুখে বসে। ভীম তখন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন অগ্রজের পাশা খেলার হাত। অর্জুন তখন কোনোমতে ভীমকে শান্ত করে। সেই রাগ পুষে রেখেছেন আজো এই ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির? যে মেয়ে নিজের জীবন বার বার বিপন্ন করে তাদের সকলকে সঙ্গ সেবা দিয়ে গিয়েছে, তার মৃত্যুতে এই রকম অপবাদ দিতে বাধলো না ধর্মপুত্রের? গা ঘিন ঘিন করতে থাকে ভীমের। এ কাকে তিনি অগ্রজ সহোদর বলে জানতেন? এক সময় ভীমসেনও পড়ে গেলেন। বললেন, রাজা, বলে যাও আমার মতো অনুগতের পতন হল কেন? নির্বিকার মুখে এগিয়ে যেতে যেতে ধর্মপুত্র বললেন, ভীমসেন শুনে রাখো, তুমি একটু বেশি খেতে। আমাদের সকলের চাইতে তুমি বেশি খেতে। সেই তোমার অপরাধ। সেই দোষে আজ তোমার এই পতন। ভয়ানক মনোকষ্ট পেলেন ভীমসেন । একজন ব্যক্তি তো তাঁর দেহের ওজন অনুপাতে খাবেন! দেহগঠনের সাথে খাদ্যের পরিমাণ নিবিড় ভাবে জড়িত । ভীম যে কতবার কত রাক্ষসের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন সপরিবার রাজাকে, সে তো সেই অতিপ্রাকৃত দেহগঠনের জোরেই! সেই বিপুল ভীমদেহের জন্য উপযুক্ত আহার লাগবে না? খাওয়া নিয়ে খোঁটা দিলে দাদা? খাওয়া নিয়ে? তুমি পারলে দাদা খাওয়া নিয়ে খোঁটা দিতে? তোমার বাধল না? কথা আর বেরোলো না ভীমসেনের। রাজা এগিয়ে গেলেন আরো আগে। সাথে রইল শুধু একটা কুকুর।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register