Mon 17 November 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ১২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ১২)

পুপুর ডায়েরি

আমাদের রেললাইনের পাসের, বস্তির ধারের, নিম্নমধ্যবিত্ত গরীব গলিতে আমি একটা আশ্চর্য জীব ছিলাম। না। তারো আগে আমার মা একজন আশ্চর্য সেলিব্রিটি ছিলেন। যাকে সবাই সমীহ করত। ভয় পেতো। দূর থেকে শ্রদ্ধা করত। আবার আদর্শ বাঙালি বউ হিসেবে "আইডোলাইজ" করত। ওখানে, পড়াশুনো জানা, গ্র‍্যাজুয়েট অফিস করা বউ আর ছিলো না। এখন বুঝি, সেই সময়ে, কমই ছিলো। অথচ, সেই বউ কোনো প্রসাধন করে না। অবশ্য দরকার ও ছিলো না। সোনার মত রঙ। মা দুর্গার মতো এত্ত বড়ো বড়ো চোখ। টুকটুকে লাল পাতলা ঠোঁট। এমনকি দাঁতগুলো পর্যন্ত কলগেটের বিজ্ঞাপনের মত। মুক্তো ঝরানো। আর কত চুল। খুলে দাঁড়ালে মেঘের মত, হাঁটু ছোঁয়। একটি বড়ো সিঁদুরের টিপ। শাঁখা, পলা। আর মাথায় লাল পাড় শাড়ির ঘোমটা। অফিস যাবার সময়ও। এমন বউ ওপাড়া আর দেখেনি। হেঁটে যেতেন যখন দুপাশের মানুষ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকত।

তা সেই যে দ্বিতীয়ার চন্দ্রকলার মত ক্ষীণ, লজ্জাপটাবৃত মানুষটি, তাঁকে আশ্চর্য ভাবে সবাই ভয় পেত। আমি ত পেতামই। পাড়ার কাকুরা কোন দিন আমায় কোলেও নিতে সাহস পায়নি। আমি একা ঘরে বড় হয়েছি রেল বস্তির সামনে, কেউ আমার দিকে তাকাতে সাহস পায়নি। ইস্তক রেলের ওয়াগন ব্রেকার চপার হাতে দৌড়ানো টেরর দুলু গুণ্ডাকে দেখেছি, কাঁচুমাচু হয়ে, " না বৌদি ভুল হয়ে গেছে " বলে সরে পড়তে। তারা আমাদের এক কামরার ভাড়াবাড়ির রোয়াকে মাতাল হয়ে মারামারি করতে এসেছিল। মা ক্লাস ওয়ানের আমাকে হোম ওয়ার্ক করাচ্ছিলেন অফিস থেকে ফিরে। ঘোমটা টেনে বেরিয়ে এসে বলেছিলেন , " জানো আমি মেয়েকে পড়াচ্ছি? তোমাদের এই ব্যবহারে তার লেখাপড়ার ক্ষতি হলে কি ঠিক হবে? " আমি তখন ও মায়ের হাঁটু ছুঁই। আঁচলের কোনাটা ধরে পিছনে দাঁড়িয়ে দেখলাম মায়ের মুখটা গর্জন তেলমাখা পাড়ার প্যান্ডেলের মা দুর্গার মত জ্বলছে। দুলুকাকা, হ্যাঁ, আমরা বস্তির লোকেদের ও দাদা কাকাই বলতাম, আমার মতই ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে তাকিয়ে আছে। তার পর, মাথা নীচু করে, " না বৌদি ভুল হয়ে গেছে। " বলে দলবলসহ চলে গেল।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register