Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

|| রথযাত্রা স্পেশাল - এ || লিখেছেন শতদ্রু ঋক সেন

maro news
|| রথযাত্রা স্পেশাল - এ || লিখেছেন শতদ্রু ঋক সেন

রথ স্পেশাল

কাকার ডেকরেটিং বিজনেসের মালপত্র বাঁধার মোটা নারকেল ছোবড়ার দড়ি। সেই ছিল রশি। আর কখনো দোতলা কিংবা তিনতলা কাঠের রথ। কালীঘাট বাজারের মুখ থেকে বাজার করে ফেরার সময় বাবার কিনে আনা। মার্বেল পেপার দিয়ে বেস, আর তার উপর মার্বেল পেপার দিয়ে নানা রকম নক্সা করে দিত দাদু। ছোটো ছোটো তিনটে মূর্তি। পোটোপাড়ায় দেদার বিকোতো। ছোট্ট একটা স্টিলের বাটি, তাতে ঠাকুরঘর থেকে আনা কয়েকটি নকুল দানা আর বাতাসা। একটা পুঁচকি গ্লাসে জল, তাও সেটা পুরো ভর্তি নয়। রথ টানলে জল চলকে পড়ে যাবে তো। এত সব সাজাতে সাজাতে দুপুর পার হয়ে যেত। একটু বিকেল বেলায় খেলার সাথীদের সাথে আমাদের গলির মধ্যে রথ টানা। এর ওর রথের প্রসাদ হিসেবে বাতাসা নকুল দানা খাওয়া। মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করে এর ওর রথের ঠোকাঠুকি। সন্ধ্যা নামলে বাড়ি ঢুকে মুড়ি আর সাবুদানার পাঁপড় খাওয়া। আর মনে মনে ভাবা, কখন রাসবিহারীর রথের মেলায় যাবো। তখন রাসবিহারীর রাস্তায়, বিশাল করে মেলা হতো। সাতদিন হৈহৈ রৈরৈ কান্ড। মনে মনে ছকে নেওয়া কি কি কিনবো। সাবান জলের বুদ্বুদ আর একটা খেলনা তীর ধনুক অবশ্য কেনার লিস্টে থাকতো। তখন রামায়ণ মহাভারত রমরম করে চলছে। রথের পরের রবিবার, শীতলা মন্দিরের চাতালে থামের আড়ালে লুকিয়ে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ ছিলো রুটিন। মাঝে মাঝে পটুয়া দের কাছে বকাও খেয়েছি, রথের দিন থেকেই ওখানে মায়ের কাঠামো তৈরীতে হাত পড়তো যে। ও হ্যাঁ, রথের মেলায় কেনার লিস্টে আমাদের বয়সীদের টপ মোস্ট প্রায়রিটি থাকতো টিনের নৌকা কেনা। কোনো কোনোবার জুটতো, কোনোবার জুটতো না। চৌবাচ্চার জলে তুফান তুলে যখন সেটা গোঁ গোঁ করে চরকিপাক খেতো, তখন নিজেদের বেশ কেউকেটা লাগতো। আমার মা আমাকে আনতে যেত স্কুল থেকে। বাড়ি আর স্কুলের মাঝখানে রাসবিহারীর মেলা পরতো। সকালে অধিকাংশ সময়ে অন্য দোকান বন্ধ থাকলেও, গাছের দোকানগুলো খুলতো। মা আর আমি গাছ কিনে এনে লাগাতাম উঠোনের পাশটিতে। মা চলে যাবার পরেও বেশ কবছর পরেও মায়ের গাছের ফুল মাকে মনে করাতো। আমার ছোটোমা ( কাকিমা) বিয়ে হয়ে আসার পর রাসবিহারীর মেলাতে প্রথম বছর দেখাতে নিয়ে গিয়ে অনেক জিনিসের পাশাপাশি, এক বোতল কোল্ড ড্রিংকস আদায় করেছিলাম, চলনদার হিসেবে। এখন কতগুলো বছর কেটে গেছে। আর রথ টানা হয় না, রাসবিহারীর মেলা তো বন্ধ হয়ে গেছে কবেই। তাও আজকের দিনে, পাঁপড়ভাজা খাওয়া হয় এখনও, আর বিকেলে বেরিয়ে রাস্তায় যখন চোখে পড়ে ছোটো ছোটো রথ, সংখ্যায় নগন্য হলেও, মন ভালো হয়ে যায়। অনেক হারানোর মাঝে, তাও তো কিছু ফেরত পাওয়া, অন্তত ফেলে আসা ছেলেবেলাকে একটু হলেও তো ছোঁয়া হয়... তাইনা??

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register