Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১৫)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১৫)

স্ট্যাটাস হইতে সাবধান

এতোদিন বাদে একজন সঠিক মানুষকে ফুলটুসি পেয়েছে। না, ফেসবুক বা মেসেঞ্জার অথবা হোয়াটস এ্যাপে না, এক্কেবারে সামনাসামনি, মুখোমুখি, একেবারে হাতের নাগালে। উফফ্ , ফুলটুসি জাস্ট চিন্তা করতে পারছে না। সুমনের সামনে সেন্টার টেবিলে চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে, ফুলটুসি একছুটে ডাইনিং পার করে বেডরুমের ড্রেসিং ইউনিটের সামনে এসে দাঁড়ালো। আনন্দে একপাক নেচে নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এ মাঃ, কী বদখত দেখাচ্ছে ওকে! ইস্, এটা একটা শাড়ি হলো? একটা আটপৌরে শাড়ি কোনোরকমে শরীরে পেঁচিয়ে রেখেছে, চুলগুলোও ছিঃ, কী বিচ্ছিরি রকমের এলোমেলো হয়ে আছে, দেখলে মনে হচ্ছে যেন, মাথায় একটা কাকের বাসা নিয়ে ঘুরছে। সাদা লিপস্টিকহীন দুটো ঠোঁট, সারাটা মুখে এতোটুকুও মেক আপ নেই। ফুলটুসি দ্রুত নিজেকে সাজিয়ে ফেলা শুরু করলো। ওয়ারড্রব খুলে এক ঝটকায় কাঞ্জিলালের দোকান থেকে সবে কেনা, পাট না ভাঙা শাড়িটাকে নিজের গায়ের ওপর মেলে ধরলো। উফ্, নিজেই যেন নিজেকে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করলো ফুলটুসির। জাম কালারের শাড়িটা যেন ওর জন্যই তৈরী করেছিলো তাঁতঘর। একমিনিট ভেবে নিলো, এরসাথে কোন ব্লাউজটা যাবে। কন্ট্রাস্ট পড়বে? নাকি কালারম্যাচিং? এসময় আবার কে ফোন করছে? ডিসগাস্টিং, ফোন করার আর সময় পেলো না? ডিসপ্লেতে বরুণের নাম। ধুস বরুণ! এখন আর বরুণের পেছনে সময় খরচ করা যাবে না। এখন আর ফোনে ন্যাকার মতো ঘ্যানঘ্যানানি না। একদম মুখোমুখি। আর যে কবিতাটা সুমন মুখেমুখে শুধু ওর ছবি দেখে বানিয়ে ফেললো, তার কাছে বরুণ! ধুস, জাস্ট বাচ্চা। শাড়ি পড়া হয়ে গেছে ওর। ওর ফর্সা হাতের সাথে শাড়িটা যেন কেটে বসে গেছে। মুখে হাল্কা মেকাপ নিয়ে ঠোঁটে আলতো করে গোলাপি লিপস্টিকটাকে বুলিয়ে নিয়ে ফের এক পাক নেচে নিলো ফুলটুসি। আজ ওর স্বপ্ন পুরণের দিন। মেসেঞ্জারে বরুণের কমেন্টের রিপ্লাইটা দেওয়া হয়নি বলে নিশ্চয়ই ফোন করেছিলো বরুণ। ওকে একশোদিন বারণ করেছে ফুলটুসি সময়ে অসময়ে ফোন না করতে। কতবার করে বলেছে যে খুব প্রয়োজন হলে যেন মিস কল দেয়। কে জানে ওই হুমদোমুখো তলাপাত্র কখন যে সাতসকালেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়, আর কবে যে, সারাটাদিন পোষা বেড়ালটার মতো পেছন পেছন ল্যাজ উঁচিয়ে পায়েপায়ে ঘুরে বেড়াবে। একবার তো প্রায় ধরাই পড়ে গেছিলো ফুলটুসি। ওর নির্মেদ পেটে হাত বুলিয়ে তলাপাত্র ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলো -- এটা কার ফোন এসেছিলো গো ফুলু? তোমার সেই রবিঠাকুরের? ফুলটুসিও একটা মুখঝামটায় থামিয়ে দিয়েছিলো স্বামীকে।

-- শুনেছো --- তোমার নজরুল চলে গেলেন। যাওয়ার সময় বলে দিতে বলেছে চায়ের জন্য তোমাকে থ্যাংকস জানিয়েছে।

ফুলটুসির সমস্ত উচ্ছ্বলতা যেন এক নিমেষে ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেলো।

ক্রমশ

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register