Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৭)

পুপুর ডায়েরী

পরে ওই দোতলার ফ্ল্যাটে দেখা হত সন্তোষ কাকু,দীপালি কাকিমাদের সংগে। এবাড়ির ঠাকুমাকে দেখলে মনে হত মেম সাহেব।ভীষন ধবধবে সাদা গায়ের রং আর নীলচে ধূসর চোখ।অমন চোখ বাংগালির দেখা যায় না। বাংলা করে শাড়ি পড়তেন।খুব মেজাজি গিন্নী। সন্তোষকাকুরা সবাই ওমনিই দেখতে ছিলেন। আমি ছোট বেলায় জন কেনেডির ছবি দেখে ভাবতাম সন্তোষ কাকু। দীপালি আমারো মায়ের নাম।আর দুই বন্ধুর কাছাকাছি সময়ে বিয়ে হয়েছিল। বৌভাতের দিন কাকিমাই সাজিয়েছিল মাকে, সব সময় গল্প শুনতাম। ওনাদের তিন খুদে,সিরাজরা দুই ভাই,এক বোন। বোনটা ছোট্ট বেলায় খুব রোগা ছিল।কিন্তু মুখখানা একে বারে ঠাকুমা,আর ঠিক তেমনি কথা বলতে ভাল বাসত অনর্গল। ঠাকুমা বাড়িতে কথা বলার লোক না পেলে হামেশাই আমাদের বাড়ি চলে আসতেন।সেটা সকালে হলে মা সেদিন অফিসে লেট।কিন্তু তাই বলে গল্প থামানো যাবে না।যা জাঁদরেল মানুষ। দাদু, দিদা দুজনের শেষকাজই ও বাড়িতে হয়েছে। বেশ মনে আছে দিন গুলো। দীপালি কাকিমা ও তাঁর নিজস্ব ক্যারিশমাওয়ালা জাঁদরেল গিন্নী ছিলেন। তাঁকে দেখলে রাশিয়ান সুন্দরীদের মনে পড়ত।লালচে চুল।গোল লাল গাল।গোল গোল হাত পা।খুব ব্যস্ততার মধ্যেই মায়ের সংগে গল্প হত। রাস্তাঘাট বা কখনো কাজের লোকের খোঁজে আমাদের বাড়িতে। মা এক আমাকে নিয়েই অস্থির। অথচ কাকিমা সিরাজ, সৌকত আবার বুইয়াকেও সামলান এই ভেবেই আমি একেবারে যাকে বলে " অ--ড" হয়ে থাকতাম। তার ওপর এক বড় পরিবার, এবং সংসারের সব কাজের দায়িত্ব,বাজারহাট..... কাকিমা সব সময় দৌড়াচ্ছে। বাবা গল্প করতেন যখন মায়ের সংগে কানে আসত, ছেলেমেয়েদের মাটিতে পা দিয়ে চলতে শেখাচ্ছেন। আমার বাবা, তাঁর বাবাকে হারিয়ে ছিলেন ১৮ বছর বয়েসে। মা, ছোট দুই বোন আর দশের ও কম বয়েসী দুই ভাইকে নিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর লড়াই। ঠাকুরদা ছিলেন বিলিতি জাহাজ কোম্পানি, আর.এস.এন এর ক্যাশিয়ার। ১৮ ছোঁয়া ছোট্ট ছেলে, হেড অফ দা ফ্যামিলি হয়ে সেখানেই কাজে ঢুকল। নইলে বাড়ির সবাই খাবে কি? কিং স্কাউট, পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের গাণ্ডা বাঁধা প্রিয় শিষ্য তরুন তবলচী, অলইন্ডিয়া প্রাইজ পাওয়া অভিনেতা,বলাই ভট্টাচার্য অফিস শুরু করলেন। তাঁর বন্ধু প্রমোদ চক্রবর্তী, অরুণ মজুমদার, সন্তোষ মুখার্জি, ডঃ রজনীকান্ত চতুর্বেদী, মানিক ব্যানার্জী যাঁরা কলেজ করছেন, আর কলেজে ডিগ্রী নিয়ে ফেলেছেন, তাঁর হাত ধরে রইলেন। যেন লেখাপড়া বন্ধ না হয়,গান বাজনা অভিনয় আনন্দ থেমে না থাকে। এ বন্ধুবৃত্তের কোন উপমা নেই। এর মিষ্টি উত্তাপ আর নিরাপত্তার ওম নিয়েই আমি বড় হয়েছি। কিন্তু বড় হয়ে, অনাত্মীয় মানুষের এত বড় ভালবাসার সাংস্কৃতিক বন্ধন কমই দেখেছি। আমার গয়নাগাটির মধ্যে এটি এক দুর্লভ মানিক্য।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register