Wed 24 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || ১লা বৈশাখ || 26য় গৌতম বাড়ই

maro news
T3 || ১লা বৈশাখ || 26য় গৌতম বাড়ই

বিপজ্জনক সম্পদ

ঐ দূরন্ত সময়ে আমরা বন্ধুরা বলা নেই, কওয়া নেই হারিয়ে যেতাম তরাই আর ডুয়ার্সের অপূর্ব গন্ধমাখা ফালাকাটা বালাসুন্দর রাঙ্গালীবাজনার প্রান্তরে- প্রান্তরে। আমাদের সে জীবনের পায়েমাখা ধুলো এখনও ঝেড়ে ফেলতে পারিনি । খুব মনে পড়ে বুকের মধ্যিখানে জমিয়ে রাখা অমর ছবির সেই রহস্যময় স্মৃতি ।

একরাতে, ভয়ানক এক জীবন কাটাব বলে, লিসনদীর বিস্তীর্ণ বালুচরে পাঁচবন্ধু মিলে বিকেলের আলোয় এসে পৌঁছালাম শিলিগুড়ি থেকে। অনেক উপরে বাগ্রাকোটের পরিত্যক্ত কয়লা খনি, নদীর তিরতির বয়ে চলা, অজানা পাখির ডাক, লিসের স্রোত যেন গিটারের মোহময় এক ধ্বনি তুলেছে। আধোআলোর এই রহস্যে, লিসের জলে স্পষ্ট দেখলাম বোরোলী আর গুতুমমাছেরা দল বেঁধে খেলে বেড়াচ্ছে। ক্রমে যখন অন্ধকার নেমে এলো, ক্ষয়াটে চাঁদের আলো সমস্ত নিসর্গকে গ্রাস করল।

এইসব ভালোবাসার নদীগুলোর তরস্থান ছিল না কোথাও। কারণ হাঁটুডোবা জলে , যেখানে খুশি পেরোনো যায় এই মার্চের শেষে। দুপারে ঋজুগাছের শ্রেণী, শাল সেগুন ধূপী আর অচেনা অজানা গাছ সব। আধো আলোতে নজরে এলো সবার, ফেরেশতা দূরে দাঁড়িয়ে, বড়- বড় পাথরের ঢালে একা হাসছে। আমাদের নিদ্রালুচোখ তখন, কিছুটা দূরে টের পাই গণেশবাবাদের পাহাড়ি জলের চুকচুক শব্দে জলপান। সবাই বলতে গেলে নিশ্চূপ নির্জীব হয়ে বসে আছি রেলব্রীজের তলায়।

এরকম ভয়ংকর রাত্রি জীবনের দুঃসাহসিক সম্পদ হয়ে আছে আজ । সবার জীবনে হয়ত এক বা দুবার আসে। তখন ডুয়ার্স ছিল ভার্জিন স্থান, অগম্য প্রায় প্রত্যেকের জায়গাগুলি। জলদাপাড়া আর কিছুটা গোরুমারা এই বোঝে পর্যটকরা। আমরা এক-একজন ভাস্কো- ডা- গামা হয়ে উঠেছিলাম তরাইয়ের শহরে। চা- বাগানের আর লিসের খুশবুর মোহকে সে রাতে বিপজ্জনক কাটিয়েছিলাম ঐ বালি পাথর নুড়ির সৈকতে। সময়ের রূপোলীরেখার নদী বেয়ে আজ সম্পদ আমার কাছে এ সব। সুযোগ পেলে একবারটি কাটিয়ে এলে মন্দ হয়না লিস বা ঘিস নদীর বিস্তীর্ণ বালুচরের রাত্রি!

ভৌতিক আলোর রাজ্য ছেড়ে আমরা বন্ধুরা সে রাতে ওদলাবাড়ি স্টেশনে এসেছিলাম পায়ে হেঁটেই, ভোরের ট্রেন চেপে শিলিগুড়ি ফিরে আসি।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register