Wed 24 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || ১লা বৈশাখ || 26য় রণিত ভৌমিক

maro news
T3 || ১লা বৈশাখ || 26য় রণিত ভৌমিক

উড়ে যাওয়া সেই বেনামী চিঠি

প্রেমিকার কপালে একটা ছোট্ট চুমু এঁকে দিয়ে তার সুন্দর মুখটা দেখছিল প্রেমিক। প্রেমিকা মিষ্টি হেসে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। অদ্ভুত এক মায়াবী, গভীর দৃষ্টি নিয়ে। ছবিটা পাশের টেবিলে রেখে চোখ বন্ধ করল মলয়, আবার দেখা হলো তার শ্রেয়ার সঙ্গে। তবে, এতবছর পর দেখা তাও বৃষ্টির দিনে। যেই বৃষ্টি ওদের দুজনকেই ভিজিয়েছিল জীবনের প্রথম প্রেমে। অফিস থেকে ফেরার সময় সেদিন অনেকক্ষণ ধরে একনাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছিল। সেইসঙ্গে বাড়িয়ে চলেছিল মানুষের বিরক্তি। তাই লঞ্চে না ফিরে শেষমেশ মলয়কে শরণাপন্ন হতে হল বাসের। একদল লোকের ভীড়ে ঠাসা ওই বাসের মধ্যে বসে ওর প্রায় দমবন্ধ হয়ে আসছিল। ঘুম চোখ ও ঢুলতে থাকে। সামনের লোহার শিকটায় মাথা ঢুলে পড়তে যাবে, এমন সময় হঠাৎ ওর চোখ দুটো ক্ষণিকের জন্য গেল থমকে। বাসে উঠে ঠিক ডানদিকের দরজার কোণটায় যে এসে দাঁড়িয়েছিল, সে আর কেউ নয়। সে শ্রেয়া, ওর প্রাক্তন। জীবনের প্রথম এবং শেষ প্রেম। তার জন্য এককালে বহুবার বৃষ্টিতে সাইকেল চালাতে হয়েছে। তফাৎ বলতে তখন এই অসময়ের বৃষ্টিটা ওর বড্ড প্রিয় ছিল। দশ বছরের ব্যবধানে অনেক কিছু পাল্টেছে। সরকার বদলে গেছে। থিয়েটার রোড নাম পাল্টে শেক্সপীয়ার সরণী হয়েছে। পুজোর জামার জন্য আবদার করা ছেলেটা এখন পুজোয় বাড়ি ফেরার জন্য দিন গোনা শিখেছে। পাড়ায় একটা টেলিফোন থেকে একটা ঘরে চারটে সেলফোন এসেছে। এসবের মাঝে শুধু পাড়াটা মরে গেছে। আর পাল্টে গেছে তিনটে সিটের ব্যবধানে থাকা দুটো মানুষের জীবন। কয়েক মুহূর্ত অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর যখন জ্ঞান ফেরে, তখন মলয়ের খানিক লজ্জা বোধ হয়। অবশ্য পরমুহূর্তে ওর উপলব্ধি হল যে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির আদতে কিছুই এসে যাচ্ছে না। সে শাড়ির আঁচল দিয়ে গলার ঘাম মুছছে। তখন মুখ নীচু করে লোহার শিকের ফাঁক দিয়ে তাই চেয়ে থাকাটাই শ্রেয় বলে মনে করল মলয়। সামনের জনের চোখেমুখে আর আগের মতো জেল্লা নেই। চেহারাও অনেকটা ভেঙেছে। তাহলে কি 'অনেক বেতন পাওয়া' স্বামীর বাড়িতে গিয়ে তার যত্ন নেই? শরীর খারাপ নয় তো? এদিকে, সামনে দাঁড়ানো মধ্যবয়স্ক দুটো লোক শ্রেয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছে। শাড়িটা একেবারে ভিজে গেছে। দরজায় দাঁড়ানো ভিজে যাওয়া মানুষটাকে অনেকটা ভেতর পর্যন্ত দেখতে চাইছে লোক দুটো। আরও অনেকে যেমনটা চায়। শুধু কেউ দেখতে পাচ্ছে না ওর চোখের নীচের কালো দাগগুলো। হ্যাঁ, ওখানে যে অনেক না ঘুমোনো স্বপ্ন বাসা বেঁধে আছে। চোখদুটোয় আগের মতো প্রাণোচ্ছলতা নেই। মলয়ের আজও মানিব্যাগে থাকা সেই ছবির মালকিনের সঙ্গে শ্রেয়ার শুধু মুখের মিলটুকুই যা রয়েছে। আদপে দুটো ভিন্ন মানুষ। শিয়ালদাহ স্টেশনের আগে বাসটা থামলো। দরজায় দাঁড়ানো যাত্রীটি নেমে গেলেন। নামার সময় চোখে পড়ল শ্রেয়ার কপালে সিঁদুর নেই। হাতে লোহার বালা। আর তাতেই মলয়ের সব কীরকম ঘেঁটে গেল। দশ বছর ধরে যাকে দেখার কথা মনে পড়লে ঘুম আসতো না, আজ সে তিনটে সিটের দূরত্বে দাঁড়িয়ে রইল, অথচ মলয়ের একবারও সাহস হল না গিয়ে সামনে দাঁড়ানোর। শ্রেয়া নাহয় চিনতে নাই পারলো, তাও একবার অপরিচিতর মতো গিয়েও তো দেখা করা যেত। কিন্তু আবারও সেই 'অভিমান' জিতে গেল। বাস এসে দাঁড়ালো চেনা গন্তব্যের সামনে। নিজের ঘোর কাটিয়ে ওকে উঠে দাঁড়াতে হল। সামনের ওই মধ্যবয়স্ক লোক দুটো একবার তাকালো। বিরক্তি চেপে এগিয়ে গিয়ে কুড়িটা টাকা দিয়ে নামতে গিয়ে কন্ডাক্টার ব্যস্ত স্বরে বলল - - আপনার তো হয়ে গেছে। - মানে? - আরে দাদা, ওই মহিলা তো নামার সময় আপনারটাও করে দিয়েছে। এই নিন আপনার টিকিট৷ নামুন, নামুন...।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register