- 4
- 0
পরদিন খুব ভোরবেলায় ঘুম ভাঙলো তিনজনের। ব্যাগপত্র গুছিয়ে রাখাই ছিলো। আমি নীচে নামতেই দেখি এক ঝকঝকে ইনোভা নিয়ে এক সুদর্শন পাহাড়ী দাঁড়িয়ে। গুড মর্নিং স্যার। দিস ইস কর্মা হিয়ার। কিছু কিছু মানুষ হয় না, যাঁদের দেখলেই মনে হয় এঁকে ভরসা করা যায়? কর্মা ভাইকে দেখে ঠিক সেটাই মনে হয়েছিল। আর ভাইয়া যে কখন আমাদের অলিখিত গার্জেন হয়ে গেছিলেন, তা টের পাইনি পরে। ওনার সাথে ঐ কটা দিন বড়ো ভালো কেটেছিল। আজো চোখ বুজে তখনকার কথা মনে পড়লে সবচেয়ে আগে সেই হাসিমুখ লাদাখির চেহারাই মনে আসে। খানিক পরে দুই মহিলা নেমে গাড়িতে চড়লেন। তখনো সাতটা বাজেনি, আমরা শুরু করলাম। ফাঁকা রাস্তা, পাহাড়ি আঁক বাঁক নিয়ে চলতে চলতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি, খেয়াল নেই। ঘুম কাটলো কর্মা ভাইয়ার ডাকে। হামলোগ রোটাং আ গিয়া। আপলোগ উতারিয়ে গা? আমি আগে রোটাং এসেছি। তাই খুব একটা উৎসাহ ছিলো না। আর চারপাশে বরফ ও বেশি নেই। দলের বাকি সদস্য রা, তখনো ঢুলছেন। তারাঁও নামতে চাইলেন না। আবার গাড়ি ছুটলো।। একটা লাভ হলো কিন্তু। লাদাখ যাবার পথে মোটামুটি সব গাড়ি রোটাংয়ে দাঁড়ায়। সেগুলো এক সাথে ছাড়লে জ্যাম হয়। আমরা দাঁড়াইনি।তাই সামনের রাস্তা ফাঁকা পেলাম। আরো ঘন্টাখানেক গিয়ে চেকপোস্ট। জরুরি কাগজপত্র চেক করা হলো। সেসব মিটলে আরো একটু এগিয়ে একটা ঝুপড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করালেন কর্মা ভাই। আপলোগ নাস্তা কর লিজিয়ে। আপভি আইয়ে। আমি আর কর্মা ভাই ল্যাম্ব মোমো, আর অনিন্দিতা ভেজ মোমো। একমাত্র শতাব্দী কিছু খেলো না, বললো তার নাকি সকালে পেট পরিষ্কার হয়নি, শুধু চা খেলো। ল্যাম্ব মোমো তে একটা বোঁটকা গন্ধ থাকলেও খেতে বেশ ভালোই। সাথের স্যুপটাও বেশ আরাম দিলো। আবার পথ চলা। আরো অনেকক্ষণ যাওয়ার পর এক ছোট্ট শহর পড়লো। এটাই কেলং। কর্মা জানতে চাইলেন, হোটেল খুঁজব কিনা। বোধহয় শর্মাজী ওকেও বলেছেন। আমরা যথারীতি পাত্তা দিলাম না। শহরটা ছাড়িয়ে আরো চড়াই উঠছে গাড়ি। এটা ২০১৬,এখনি আসতে কতো কষ্ট, অথচ প্রায় আশি বছর আগে এখানে এসেছিলেন নেতাজি। না জানি তখন আরো কত কষ্ট ছিলো। মনে মনে প্রনাম জানাই সেই মহামানবের উদ্দেশ্যে। অত কিছুর পরও আজো কি সেই শ্রদ্ধা পান উনি, যাদের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করলেন???
0 Comments.