- 4
- 0
ট্যাক্সি করে দুই ছেলে মেয়ে বর আর শ্বশুর সমেত টালিগঞ্জ যাচ্ছিল বউ সকাল সকাল। কত জিনিস গুছিয়ে নিতে হয়েছে সঙ্গে। আসন, কাপড়জামা, নতুন শাড়ি ধুতি আরও কত কিছু। এখানে ফ্ল্যাটে হবিষ্যি করা হয়েছে রোজ, সেই মাটির মালসা সব। সেগুলি নাকি ঘাটের কাজ হবে যখন গঙ্গা জলে দিয়ে দিতে হবে। কত ফলটল। আত্মীয় প্রতিবেশী দিয়ে গেছেন এসে হররোজ। কে আর কয়টা খেয়ে শেষ করে সে সব। টালিগঞ্জের বাড়িতে অন্তত লোকজন তো আছে। খাদ্য অপচয় হবে না।
অস্থির লাগে বউয়ের। কত ছবি, ভিডিও মাথার পর্দায় চলে বেড়ায়।
লম্বা ঘরের একদিকে ছোটোদের পড়ার টেবিল। ঘরের তিন দিক ঘিরে মস্ত মস্ত জানালা। মাঝামাঝিতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুল। তার আরেক পাশে খুব বড় বিছানা জুড়ে দুই ছানা আর বাবা মায়ের বালিশ বিছানা। ঘর অন্ধকার করে বাবা বাচ্চাদের নিয়ে শুয়ে। মা এঁটো তুলে ফ্রিজে খাবার গুছিয়ে রেখে শুতে আসবে বলে তৈরী হচ্ছে। বাচ্চাদের ঠাকুমা এসে গ্যাঁট হয়ে বসলেন চিরুনি হাতে খাটের পাশের টুলে। পাতলা হয়ে আসা চুলে চিরুনি চালিয়ে সরু বিনুনি বেঁধে তবে শুতে যাবেন। মা ঘরে ঢুকতেই গলা তোলেন, এইবারে কি দেখলাম টিভিতে জানিস। তাঁর ছেলে খ্যাঁক করে। মা, শুতে যাও। আমার সকালে অফিস। ঘুমোবে সবাই। মা ও ফিরে খ্যাঁক করেন। বাবু থাম দেখি। আলো ত নেবানো। বাচ্চাগুলোকে নিয়ে চুপ করে শো। আমি আগে সোনালিকে বলি, সিনেমাটায় কি হল। গত সপ্তাহের পর ত ওর সাথে গল্পই হয়নি। ওকে বলে আমি ও ঘরে চলে যাব শুতে। বাচ্চাদের মা মিটিমিটি হাসে অন্ধকারে মুখে ক্রিম মাখতে মাখতে। দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকীতে সাধ ভক্ষণ ছিলো মেয়ে হবার আগে। সেই থেকে এই ছেলে হয়ে ইস্কুলে দুই বাচ্চা ভর্তি হওয়া পর্যন্ত, প্রায় সাত বছর সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়া আর কোথাও ত যাওয়া যায় না বিশেষ। সিনেমা থিয়েটার ত নয়ই। কাজেই, এই গপ্পো সেশানটা তার ভালই লাগে। এমনি করেই শোনা হয়েছিল অস্তিত্ব সিনেমার গল্প। আর তার সাথে, খুব আপাত-সাবেকি শ্বাশুড়ির মুখে বৈপ্লবিক স্টেটমেন্ট। দ্যাখ, বললেই ত তোরা খারাপ বলবি, কিন্তু আমরাই বা কবে কি পেয়েছি রে, সিবায়ে বলাৎকার? কে কবে মতামত চেয়েছে হ্যাঁ? সেই মুহূর্ত গুলোতেই এই মহিলাকে বন্ধু বলে মনে করে ফেলেছে বউমার মস্তিষ্ক। মনে হয়েছে একটা আধা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি দেখতে পাচ্ছে সামনে। বাইরে শান্ত, শুকিয়ে যাওয়া লাভা, আধমরা ঘাস। ভিতরে টগবগ করে ফুটছে আগুন।
কত কত টুকরো টুকরো ছবি।
0 Comments.