Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (অন্তিম পর্ব)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (অন্তিম পর্ব)

পদাতিক

একজন ডাক্তারের ভুলে মনোজের জীবনমরণের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। ওকে যে ফের বাঁচিয়ে আনা যাবে সেটা অনেকেই চিন্তা করতে পারেনি। কোভিডকাল হওয়ায় সমস্যা বহুগুণ বেড়ে গেছিলো। ওর সাথে কথা শেষ করে আমি যখন ঘরে যাবো বলে পা বাড়িয়েছি, তখনও রান্নাঘরের কাজ চলছে, থালাবাসন পরিষ্কার করে ধুয়েমুছে আগামীকালের সকাল আর দুপুরের সবজি কেটে রেখে, নিজেরা নিজেদের খাবার খেয়ে পানের ডিবে খুলে বসেছে সীমা। মণিকরণ ইতস্তত ছড়িয়ে থাকা চেয়ার টেবিলগুলোকে ঠিকঠাক করে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। -- এতো রাত কেন করো জেঠু। বয়েসের কথা ভাবো না কেন? ঘরে জলের বোতল আছে তো? ময়নার কথা বলেছি, চায়নার কথাও বলা হয়েছে কিন্তু এই মণিকরণের কথা বুঝি বলিনি এতোটুকুও। এই যে এতোবড় হেঁসেল। যেখানে চারবেলা উনুনে রোজের একদেড়শো জনের হাঁড়ি চাপে, সেই রান্না করা, সবাইকে খাবার পরিবেশন করে খাওয়ানো থেকে শুরু করে উনোকুটি চুনের পাট সামলাতে হয়, সারাদিনের সেসব কাজ সামলেও অতিথি অভ্যাগতদের টিফিনের প্লেট সাজিয়ে দেওয়া, এরকম আরো হাজারো কাজকে যে কী নিপুণ দক্ষতায় সামলে নেয় মণিকরণ সেটা যারা দেখেননি তারা বুঝবেন না। এরওপর একটা বছর তিনেকের মেয়েকে বড় করে তোলার সাথেসাথে স্বামী অশ্বিনীর মন যুগিয়ে চলা যে কী কঠিন কাজ সে বুঝি একমাত্র মণিই বোঝে। আর সীমা! সম্পন্ন বাড়ির গৃহবধূ সে। মদ্যপ স্বামীর অত্যাচারে দুই মেয়েকে দুই হাতে ধরে এসে উঠেছিলো বলরামবাবুর ছত্রছায়ায়। যে উপকার সীমা পেয়েছে বলরামবাবুর কাছে সেজন্য অশেষ কৃতজ্ঞ সীমা চেষ্টা করে দিনরাত একাকার করে আশ্রমের সেবা করতে। অথচ এই এতো পরিশ্রমকে হাসিমুখে বরণ করে সীমা। কাউকে বুঝতে দেয় না ওর পরিশ্রমের কথা। একমুখ হাসি নিয়ে সবার মন জয় করে নেয় নিমেষেই। এমনকি গেস্টদের ঘর ঝাড় দেওয়া, মোছা, বিছানাপত্র ঝাড় দিয়ে, চাদরকে টানটান করে যখন সে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ায়, তখন ওর দাঁড়ানোর ভঙ্গী দেখে গেস্টরাও মুচকি হাসেন। ছোটছোট মেয়েদুটোর বড়টাকে নার্সিং ট্রেনিং পড়িয়ে সে এখন একটা বেসরকারি হাসপাতালের নার্স। আর ছোটটা নাচ আবৃত্তি আর পড়াশুনোকে সমানতালে শেখে। মোটকথা দুই সন্তানের মা সীমা এখন স্বপ্ন দেখছে সুন্দর ভবিষ্যতের। সবকাজ সেরে আমি দোতলার বারান্দায় রাখা একটা সোফায় গা এলিয়ে সারাদিনের কাজের হিসেব মেলাচ্ছি। আর অন্ধকারের শরীরে ভেসে উঠলো এক সুন্দর আলোকবর্তিকা। সেই আলোকবর্তিকার কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে আছেন একজন সত্যিকারের পদাতিক মানুষ, ধুলিধুসরিত দুটো নগ্ন পায়ের হাঁটু পর্যন্ত পড়া ধুতি আর শার্ট গায়ে যিনি হেঁটে চলেছেন এক ঊষালগ্ন থেকে পরের ঊষালগ্ন পর্যন্ত। তার কাঁধে, কোলে, বুকে ঝুলে রয়েছে অসংখ্য শিশু। আর সেই শিশুগুলোর মুখে ছড়িয়ে পড়া আলোয় ভেসে যাচ্ছে চরাচর। আর দিগন্তরেখায় ফুটে উঠছে একটা বাগানের ছবি। যে বাগানে ফুটে থাকা ফুলেরা যেন সেই আলোকবর্তিকার সাতরঙা রঙে দোল খাচ্ছে আর গান গাইছে -- বিশ্বপিতা তুমি হে প্রভু, আমাদের প্রার্থনা এই শুধু, তোমারই করুণা হতে বঞ্চিত না হই কভু... ইতি -- সমাপ্ত পদাতিক
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register