Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন - ১০২

maro news
ধারাবাহিক ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন - ১০২

ফেরা

আমার ইচ্ছা ছিলো হোটেল বিয়াসে উঠবো। ১৯৯৬ সালে, যখন প্রথমবার মানালি আসি, তখনই মুগ্ধ হয়েছিলাম। নদীর ধারে কাঠের বাড়ি, ভোরবেলা ঘুম ভাঙলে কুলুকুলু শব্দে অভ্যর্থনা জানাবে সুন্দরী বিপাশা। গরম চায়ের পেয়ালা হাতে জানালার ধারে বসে নদীর দিকে তাকিয়ে সারাদিন কাটিয়ে দেওয়া যায়। আমাদের বাস যেখানে নামিয়েছিলো, তার সামনে, নদীর ধারে আমার সেই চির আকাঙ্খিত হোটেল। শতাব্দী, অনিন্দিতা মালপত্র নিয়ে দাঁড়ায়, আমি যাই ঘর বুক করতে। কিন্তু হা কপাল, একটা রুম ও খালি নেই। আরেকটা জিনিস জানতে পারি, সব হোটেলে চেক ইন বেলা এগারোটায়, আর তখন সবে পৌনে নটা। শরীর একটু হলেও বিছানা চাইছে, সারারাত ধকলের পর। কি করা যায়। শুকনো মুখে মেয়েদের কাছে ফিরি। নাহ, এবার ধারে কাছেই হোটেল খুঁজতে হবে। বাবুজী, আপকো কুলি লাগেগা? পিছনে তাকাই। এক বৃদ্ধ পাহাড়ী। সাগ্রহে আমাদের দিকে তাকিয়ে। নেহী লাগে গা। নেহী নেহী লাগেগা। আপ চলিয়ে হোটেল দিখাইয়ে হামলোগকো। ইয়ে লিজিয়ে সামান। শতাব্দী আমাকে আটকে একটা হাল্কা ব্যাগ ধরিয়ে দেয়। কেন কি বৃত্তান্ত জানতে চাইলে চোখের ইশারায় চুপ করায়। বাকি ব্যাগ গুলো নিয়ে আমরা ওনাকে ফলো করি। উনি হোটেল চেনাবেন আমাদের। এবং অবশ্যই উনি চেনান।নদীর পারেই আরেক হোটেল, রিভার ভিউ। তিনতলার প্রশস্ত ঘর মেলে। দৈনিক তিন হাজার। ঠিক হ্যায়, বাজেটে আছে। বড়ো কথা, জানালা খুললেই নদী। ম্যানেজার ভারী ভদ্রলোক, আমাদের দুই ঘন্টা আগেই বিনা ঝামেলায় ঘর দেন। টাকা নিয়ে বৃদ্ধ পাহাড়ী চলে যান, হাসিমুখে, আমাদের আশীর্বাদ করে। শতাব্দীকে জিজ্ঞাসা করি, কি ব্যাপার বলো তো? হঠাৎই কুলি নিলে? তোমার তো এসব ব্যাপারে চিরকাল আপত্তি। শতাব্দী চোখ তোলে, জল ভরা। ওনাকে দেখে বড্ডো বাবার কথা মনে পড়লো। আমি এমনিই টাকা দিতাম, কিন্তু জানি উনি নেবেন না। তাই একটা হাল্কা ব্যাগ বওয়ালাম। মনে হল, আজ বাবাকে কিছু দিলাম।। শতাব্দীর বাবা তার এক বছর আগে মারা যান। খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আমার নিজেরো হঠাৎই তাঁর কথাই মনে আসে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register