Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ১১৯)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ১১৯)

রেকারিং ডেসিমাল

আতঙ্কে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া সদ্য তিরিশ পেরোনো ডাক্তার, নামজাদা হাসপাতালের একতলার মস্ত হলের দেওয়ালে রাখা টেলিফোনে পয়সা দিয়ে ডায়াল করে। অসহায় মুখে, চারপাশের সাধারণ রোগী আর তাদের দিশেহারা পরিবারের মতই আকুল হয়ে শোনে তারের অন্যপ্রান্তে ফোন বেজে চলেছে। একটু পরেই অতি পরিচিত গলার, হ্যালো শুনে, হাউমাউ করে ওঠে। মা, কি হবে?? বায়োপসিতে ক্যান্সার বলল। বললেন, ২০০% ক্যান্সার। এবারে কি হবে ? কি বলব উপরে গিয়ে? সে মানুষটা বাড়ি যাবে ভেবে উঠে বসে আছে যে!! আমি একা আর নিতে পারছি না। মাগো, অস্থির লাগছে মাথার মধ্যে। মা ফোনের ওদিকে কিছুক্ষণ চুপ করেই থাকলেন। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, কি সর্বনাশ। ঠাকুর। তুমি আগে জামাইকে জানাও। তার জানার দরকার সকলের আগে। সাবধানে বাড়ি এসো। মনে রেখো, আমি, বাবা, বাচ্চাদুটো তোমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকি। সাহস সঞ্চয় করে মেয়ে। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনে পয়সা ভরে, তারপর ডায়াল করে ননদের বাড়ির নম্বর। সেখানে ভাইফোঁটা মানে এলাহি কাণ্ড। ননদাই বাড়ির মধ্যে একটিই ছেলে। তার বোন তাকে ফোঁটা দেবে এসে। ননদাইয়ের তিন মামা, তিন মাসি, তাঁদের পরিবারের সবাই, ননদ ও তার নিজের দাদাকে ফোঁটা দেবে। বিরাট ফোঁটা উৎসব। নানা রকম মাছ, পোলাও, নিরামিষ আমিষ, চাটনি, মিষ্টির রাশি, পায়েস, খেতে খেতে হাঁসফাঁস হয়ে যায় সবাই। এই দুপুরে সবাই খেতে বসেছে, বা খেয়ে উঠছে কি? নানা কিছু মাথার মধ্যে ঘোরে টেলিফোনটা রিং হতে হতে। প্রথমেই কর্তার হ্যালো শুনে যেন একটু স্থির হয় ভেতরটা। তারপর, আটকে আসে গলাটা। শোনো… আমায় ডেকেছিলো, ছুটি না, বায়োপসি রেজাল্ট বলতে। দু মিনিট ঢোঁক গিলতে চুপ করে থাকতেই, ওদিক থেকে ধীর গলায় কর্তার প্রশ্ন আসে। কী? সি তো? হ্যাঁ বলে ভেজা গলায় চুপ করে থাকে বউ। তারপর দু জনে ঠিক করে, পেশেন্টকে কিছু বলা হবে না। কর্তা সাহস দিয়ে ফোন ছাড়ে, আস্তে-ধীরে ওপরে যাও। কিছু এখুনি ভয় পাবার নেই। পরে শুনেছিলাম, দাদা গিয়ে বোনকে জানাতেই দু জনে কেঁদেছিল। দাদা দ্বিতীয় পদের মাছ আর খেতে পারেনি। বোন মুখ কালো করে থাকায় তার কর্তা বলেছিলেন, কেন এই কাজের মধ্যে ওর মনটা খারাপ করে দিলে? এদিকে পুত্রবধূ চোখ মুছে হাসি মুখে রোগিণীকে গিয়ে জানিয়েছিলো,কোন ভয় নেই। রিপোর্ট ভালো। খালি ছোট্ট একটা অপারেশন হলেই পেটের ব্যথা কমে যাবে। বাড়ি নিয়ে যাবো। চিন্তা কোরো না।   কর্কট রোগ কেবলই বাধ্য করে কাছের মানুষকে দিন দিন মিথ্যা বলতে। ঘরের মানুষকে কি বলা যায়, কাল থেকে তুমি আর আমাদের মধ্যে থাকবে না গো। আর তোমায় দেখতে পাবো না আমরা। তুমি শুধুই গল্পকথা হয়ে থেকে যাবে। তুমি কি কেবলই ছবি… এ গান গাইতে ভালো লাগে না।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register