Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩৬)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩৬)

পদচিহ্ন

-- হ্যাঁ জেঠু। পড়লাম, তবে আমি একা নই। চায়নাও কী দেখে যে আমার প্রেমে পড়লো কে জানে। ঠারেঠোরে দুজনেই বিষয়টা একে অন্যকে জানানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে রয়েছি কিন্তু কিছুতেই সুযোগ পাচ্ছি না। মনোজ বলে যাচ্ছে আর আমার চোখে ভাসছে একটা দৃশ্য। এ যেন এক জেলখানায় দুজন কয়েদির একে অন্যকে ভালোবাসা। যেন একটা শুকনো দেওয়ালের কংক্রিটের গায়ে একটা মস ফুলের জীবনের অপ্রতিরোধ্যতার ঘোষণা। একেই বলে ভালোবাসা। সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে জীবনযৌবনের রঙিন পতাকা তুলে দেওয়া। --- আমাদের ব্যাপারটা যখন জানাজানি হয়ে গেলো সবার মধ্যে, তখন সে কী অবস্থা সে আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না। পরিষ্কারভাবে আমাদের জানিয়ে দেওয়া হলো, এ সম্পর্ককে কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না। আমরাও চোয়াল চেপে আমাদের জায়গায় স্থির রইলাম। বিশেষ করে চায়না, ঘাড় বেঁকিয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে জানিয়ে দিলো, বিয়ে আমরা করবই। যদি মেনে নেওয়া হয় তো ভালো, নইলে এ আশ্রম ছেড়ে ঘর ভাড়া করে থাকবো আমরা। ইতিমধ্যে পলিটেকনিকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা নিয়ে আমি ভর্তি হয়েছি টালিগঞ্জের সি,আই, ই, এ্যান্ড এম কলেজে বি টেক কোর্সে ভর্তি হয়েছি। আপনি তো টালিগঞ্জেই থাকেন, আপনি চিনবেন কলেজটা, টালিগঞ্জ আই টি আই কলেজের পাশে নবনির্মিত বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। এই যে খাওয়ারটা মনোজ খেয়ে নাও তাড়াতাড়ি। রোজরোজ এতো রাত করে খাওয়ার কোনো মানে হয়? আর জেঠু, তুমিইবা এতো রাত পর্যন্ত এখানে কী করছো? ঘুমটুম নেই? এখুনি ঘুমোতে যাও। সীমা। আর একজন চরিত্র। সকাল থেকে রাত একনাগাড়ে কাজ করে যায়। সীমা সম্পর্কে কিছু না জানালে অন্যায় করা হবে। আমি এখন মনোজের ভালোবাসার কাহিনীতে মজে আছি। পরে না হয় সীমাকে জানবো আমরা। -- যাচ্ছি রে। এখুনি যাবো। তোর খাওয়া হয়েছে? -- এই খাবো এইবারে। তোমার বিছানার চাদর পালটে দিয়েছি জেঠু, কাচা গামছাটাও তোমার ঘরের আলনায় রেখে দিয়েছি। -- বেশ, তুই এবেলা খেয়ে নে যা। -- খেয়ে নিয়ে, থালা বাটিগুলো টেবিলেই রেখে দিও, আমি পরে নিয়ে যাবো। সীমা চলে গেলো। মনোজ খাওয়ার থালাটা নিজের দিকে টেনে নিলো। -- সেটা কোন সাল হবে? দুহাজার চোদ্দ সাল । আমি বি টেক পাশ করে কলকাতাতেই একটা আইটি ফার্মে চাকরি নিলাম। কিন্তু চায়না সমানে বায়না ধরলো বিয়ে করবে বলে। আর ওর বাড়ির সবাই তখনও গোঁ ধরে বসে আছেন যে এ বিয়ে হবেনা। অবশেষে ঠিক হলো বিয়ে করে আশ্রমেই থাকতে হবে। ময়নাদি আর শুভাশিসদাও এখানেই থাকেন, কাজেই... অবশেষে দুহাজার চোদ্দ সালে আমাদের বিয়ে হলো। কিন্তু কী আশ্চর্য, আমাদের বিয়ের সাথে সাথে আরও দুজনেরও বিয়ে হলো। শ্বশুরমশাই তখন বীরভূমে আশ্রমের একটা শাখা খুলবেন বলে খুব দৌড়োদৌড়ি করছেন। ওখানকার একজন ছেলেকে বাবা রাজী করালেন আশ্রমের একজন আশ্রমিক কন্যাকে বিয়ে করানোর জন্য। ছেলেটিকে আর মেয়েটিকে আপনি চিনবেন, রথদা, রথ বৈদ্যের সাথে বিয়ে দিলেন বড় মণিদিকে। বড় মণিদি আশ্রমেই বড় হয়েছে। আমার শাশুড়িমায়ের দিদির ননদ। অসহায় বড় মণিদিকে আমার শ্বশুর মশাই নিয়ে এসে বড় করেছেন, এছাড়াও সহদেবদার সাথে বিয়ে দিলেন আরেক আশ্রমকন্যা কাজলের। -- সহদেব মানে আমাদের ছবি আঁকার শিক্ষক? -- হ্যাঁ, ওর দাদা অর্জুনদা ছিলেন একজন খুব বড় শিল্পী। তিনি মারা যাওয়ার পর বাবা সহদেবদাকে আশ্রমের আঁকার শিক্ষক করে নিয়ে আসেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমাদের বিয়ের সাথে ওই দুজনের বিয়ে দেওয়াটা কি খুবই জরুরী ছিলো? পরেও তো বাবা এই বিয়েটা দিতে পারতেন। আমার মনে হয় শুধুমাত্র প্রচারের আলো পাওয়ার জন্যই বাবা এটা করেছিলেন। --- প্রচারের আলো পাওয়ার জন্য মানে? একটু বুঝিয়ে বলো প্লিজ। ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register