Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৬৫)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৬৫)

পুপুর ডায়েরি

বেশ পরিষ্কার মনে আছে বিশুদার মাকে। চেহারা। মুখে দাঁতের কিঞ্চিৎ অভাব। কথা বলার ভঙ্গী। কণ্ঠ স্বর। আর বিশুদার ভয়ানক উৎসাহে, “শোনো না দীপালিদি, আগে আমার কথাটা…”। বাবু আর আমি সুরুৎ করে পালিয়ে যাই অন্য ঘরে, এরা এইসব হইহই শুরু করলেই। আমাদের একটা নিজস্ব গল্পের বইপূর্ণ নরক গুলজার আছে। আর নানান ধরনের চিত্তাকর্ষক আড্ডা। এবং তর্ক। এবং সত্যজিৎ বাবু আর সন্দেশ পত্রিকার ভালোত্ব নিয়ে চর্চা। ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমাদের মত আঁতেল বইখোর বাচ্চা, এক আমাদের বাবা মায়েদের সংসারেই বোধহয় সম্ভব ছিলো। তার ফাঁকেই আমি যত প্রকার দিদিগিরি, মাঝেমধ্যে চাঁটি ইত্যাদি চালাবার চেষ্টা চালিয়েই গেছি। বাবু রেগে তিড়িং বিড়িং করলেও লক্ষ্মী ভাই হয়ে সহ্য করেছে সারাক্ষণ। একেবারে বড় হয়ে কলেজে ওঠা পর্যন্ত। অবশ্য ইন রিটার্ন, আমি ওর উর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত যাবতীয় মতবাদ শুনেছি এবং মতামত দিয়েছি অকৃপণ ভাবে। এবং সেটা বেশ কঠিন কাজ ছিল।

আর তার পরে ত বিশুদাদার বিয়ে হল। টুকটুকে বৌদি হল। বাবুদের বাড়ির নতুন দোতলায় যাওয়া আসা চলল। প্রমোদ কাকুর নিজের ঘর হল, যেখানে আমার বাবার মতে তিনি গানের, মানে উচ্চাঙ্গসংগীতের রেওয়াজ করতে পারবেন এত দিনে নিশ্চিন্ত নিরূপদ্রব হয়ে। এই রোগা, উজ্জ্বল দৃষ্টির মানুষটির যে এত গুণ, তাঁর সহজাত বিনয় তাকে সর্বদা ঢেকে রাখত। সরকারি দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ত তিনি হয়েই ছিলেন। কিন্তু সে ছাড়াও, এত ভালো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, এত গভীর মননশীলতা , এত ভালো ইংরেজি লেখা,( দা স্টেটসম্যান পত্রিকায় তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হত ছদ্মনামে), আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সম্বন্ধে তাঁর পড়াশোনা, এবং অবশ্যই সুকণ্ঠ আর তার কদর, অনেকেই জানতেন না। আমার বাবা মা, সব সময় মনে করতেন, আরে এমন গলা বলেই ত স্বয়ং সত্যজিৎ রায় বাবু ওর গলার সুর ব্যবহার করেছেন নিজের ফিলিমে। তিনি উত্তম জহুরী। গুণের কদর করতে জানেন। ওদিকে, বাড়ির নতুন ছাদে পায়চারী করা রমা কাকিমার কোলে এসে গেছে, বিশুদার কুচি ছেলে। বাবু তার নাম দিয়েছে, আলফা। পাশের পাশের বাড়িতে বাবুর বন্ধুদের দেখতে পায় আলফা। বাপ্পা, মহাবীর। তাদের মায়েদের ও সে দেখে। এবং তার নিজস্ব ভাষায় তাদের সম্বন্ধে মতামত দিতে ছাড়ে না!!

আমি গেলে, সেইসব বিস্তারিত বিবরণ পাই বাবুর মুখে।

তবে সবচেয়ে শেষ যে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজটি আমার ভাই, যাকে কিনা তত দিনে আমার ছানারা “পিকপিক মামা ” নামে ভূষিত করেছে, সে করেছিল, সেটি হচ্ছে, আমায় ইন্টারনেট নামক আশ্চর্য বস্তুটির সঙ্গে যুক্ত করা। সে নিজে তত দিনে, এ বিষয়ে এক্সপার্ট। আমায় একটা রাইটিং প্যাডে, তীর-চিহ্ন দিয়ে, ফ্লো চার্ট করে লিখে, বুঝিয়ে, এই ম্যাজিকের মতো কান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়াতে উৎসাহ না দিলে, এই লেখাটাও লেখা হত না। আর এই যে বাবা মা ঠাকুমারা চলে যাবার পরেও ছোটো বেলার সুতোটুকু ধরে নষ্টালজিয়ার ঘুড়ি ওড়াচ্ছি, সে হয়ে উঠত না এত সহজে।

এত বইপোকা ছিলাম দু জনে, এখন বই মেলার দু একটা দোকানে নিজের নাম লেখা বই দেখতে পেলে, তাই ওর কথাই আগে মনে পড়ে।

ছোটো পুপু ভেতর থেকে ডাক দেয়। “ বাবু রে, দ্যাখ দ্যাখ, বইয়ের তাকে আমার নাম লেখা বই!! এ ত ভারি মজার কাণ্ড!! ”

ছোটো বেলাটা এ রকম কিছু কৌটোতে থেকে যাওয়াটা বড়ো জরুরি। নইলে বুড়ো হতে হতে একেবারে ঝুনো নারকেল হয়ে যাবো যে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register