Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব - ১৩)

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব - ১৩)

সময়ের খরস্রোতে

ট্রেনে উঠেই ডানদিকের কোনের সীটটাতে গিয়ে বসল শ্রীতমা। পাশে নিজের সাইডব্যাগটা রেখে দিয়ে একটা জায়গা দখল করে রাখে। আশা করে আছে পরের স্টেশন থেকে নীল উঠবে। আজ প্রায় একমাস হয়ে গেল নীল'কে আটটা বারোর লোকালে কেউ দেখেনি।

পরিচিত সবার সাথেই কথা হয়। সবারই এক কথা-- নীলের কী খবর? দীর্ঘ বাইশ বছর ধরে একই ট্রেনে যাতায়াত করতে করতে কিছু লোকজনের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। লোকাল ট্রেনে ডেইলি প্যাসেঞ্জার দিদি- দাদা- ভাই -বন্ধুদের নিয়ে রীতিমতো একটা সংসার আছে শ্রীতমা'র। স্বপ্ননীল শ্রীতমার একজন বিশ্বস্ত বন্ধু । নীলের সাথে ট্রেনেই পরিচয় শ্রীতমার। সদ্য স্বামীহারা শ্রীতমা তখন প্রথম চাকরি করতে এসেছে। শহরের রাজপথে একলা যুবতীর বন্ধু হয়ে এসেছিল নীল। শ্রী'র নিজের জীবনে তখন তুফান উঠেছে। বয়স্ক বাবামায়ের মুখে সন্তান হারানোর শোকের ছায়া দেখে নিজের কষ্ট ভুলে গেছে। বৃদ্ধ শ্বশুর - শাশুড়ির জীবনের কষ্ট ভুলিয়ে দিতে নিজের দুবছরের ছেলেটাকে শাশুড়ির কোলে তুলে দিয়েছে।

শ্রী'র বাবা যখন মেয়েকে নিতে এসেছিলেন তখন ফিরে যেতে হয়েছিল তাকে। মেয়ের ইচ্ছেকে কুর্নিশ জানিয়েছিলেন ওর বাবা-মা। শ্রী'র এই নীরব প্রতিশ্রুতিকে সম্মান জানিয়েছেন এবাড়ির এই দুজন মানুষও । কখনও কেউ বুঝতে পারেনি যে শ্রী তাদের মেয়ে নয়, ছেলের বৌ।

শ্রীতমা বিয়ের আগেই বি.এড কমপ্লিট করে ছিল। কিন্তু ওর স্বামী যে অফিসে চাকরি করত সেখানে ওর শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো পোস্টে নেওয়া সম্ভব হয়নি। অন হিউম্যানিটি গ্রাউন্ড ওর স্বামীর অফিসেই গ্রুপ' ডি' তে এপয়েনমেন্ট পায়।

দুবছরের ছেলে আর তার ঠাকুর্দা-ঠাকুমার জীবনে একটাই আশ্রয়ের জায়গা ছিল, সেটা হলো- শ্রী। একটু একটু করে দিন কেটেছে ভালোমন্দ মিলিয়ে। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। বর্তমানে ছেলেটাও একটা সম্মানজনক চাকরি করে বলে সংসারের চাপ অনেক কমে গেছে।

শ্রী জানে সৌম্য খুবই দায়িত্ববান ছেলে। ছোটবেলা থেকে দাদু ঠাম্মির কাছে বড় হয়েছে বলে দাদা আর আম্মাকে ও ভীষণ ভালোবাসে। আর আছে সোহাগ যাকে সৌম্য খুবই ভালোবাসে।

আসলে পাশাপাশি দুই বাড়ির ছেলেমেয়েদুটো একসাথে খেলতে খেলতে বড়ো হয়েছে। মাঝারি গড়নের সোহাগের বড় বড় চোখ দুটোর দিকে যে' তাকাবে সে'ই ওকে ভালোবাসবে। ছোটবেলায় মাঝে মাঝে সোহাগ আর ওর ভাই সুতনু ওদের দাদুর সাথে যখন এবাড়িতে আসত তখন সৌম্য ওদের সাথে খেলত। ওদের দাদুভাই আকাশের তারা হয়ে যাবার পর আর আসে না। প্রতিবেশী হিসেবে ওরা খুবই ভালো মানুষ। অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। শ্রী'ও খুব পছন্দ করে সোহাগকে। সৌম্যর থেকে বছরখানেকের ছোট। সোহাগকে এবাড়ির সবারি পছন্দ। তবু সৌম্যর মনের খবরটা ঠিক করে বুঝে নিতে চায় শ্রী। আর এই কাজটার জন্যই নীলকে খুব প্রয়োজন। শ্রী ঠিক করেছে একটা ছুটির দিনে শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে নীলের বাড়িতে যাবে।

এই একমাস ধরে প্রতিদিন শ্রী' প্রতিদিন সময় করে ফোন করেছে নীলে'র মোবাইলে। কিন্তু কেউ ফোনটা রিসিভ করেনা। একটা মনখারাপি বাতাস নিঃশব্দে ছুঁয়ে থাকে শ্রীতমাকে। সাথে থাকে অনেক সংশয়। একটা অজানা ভয় নাড়া দিয়ে যায় মনের মধ্যে।

আচ্ছা, নীলের কোনো এক্সিডেন্ট হয়নিতো? হতে পারে তখন ফোনটা এমন কোথাও পরে গেছে যে কেউই খুঁজে পায় নি সেটা। তাই ওই নাম্বারটা বেজে গেলেও কেউ ধরেনা। এলোমেলো ভাবনার ভিড়ে শ্রী'র হারিয়ে যাওয়া মনটা যখন বাস্তবে ফিরে এলো ততক্ষণে ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছে গেছে। অন্যান্য যাত্রীদের সাথে শ্রী 'ও গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যায়।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register