Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব - ১২)

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব - ১২)

অবগাহন

এই যেএএএ, শুনছো ওওওও, আরে কোথায় গেলে? কি যে মুস্কিলে পরেছি আজকাল! ডাকলে শুনতে পায়না নাকি সারা দিতে ইচ্ছে করে না কে জানে! বুঝতে পারিনা আজকাল। আগে তো এরকম ছিল না। আমার অফিস যাবার সময়টাতে কাছে কাছেই থাকতো। ইদানিং দেখছি সবকিছু ভুলে সারাক্ষণ বসে থাকে।কারো সাথে কথা বলে না। হাবভাব দেখে মনে হয় কোনো কিছুতেই ওর কিছু যায় আসে না- আপন মনে কথাগুলো বলতে থাকে সুমন্ত।

সুমনার দীর্ঘ বিবাহিত জীবন, স্বামী পুত্র নিয়ে সুখের সংসার। কিন্তু তার মনে খুব দুঃখ। যে মেয়েরা চাকরি করে তারা নিজেদের ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায়। তাদের ভালোলাগা - মন্দলাগা ইচ্ছে - অনিচ্ছের দাম আছে। কিন্তু যারা হাউজ ওয়াইফ তাদের সবসময়ই বাড়ির লোকের ইচ্ছেতে চলতে হয়। অথচ তারা সারাদিন সংসার আগলে পড়ে থাকে। নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যর কথা ভুলে গিয়ে অন্য সবার মন যুগিয়ে চলে। অথচ তাদের কথা কেউ ভাবেনা- মনে মনে ভাবে সুমনা।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই স্বামীর অফিস, শ্বশুর -শাশুড়ির চা-জলখাবার, ছেলে-মেয়ের স্কুলের টিফিন - এসব করতে গিয়ে কতোদিন ঠিক সময়ে জলখাবারটুকু খাওয়া হয়না। কতোদিন এমন হয়েছে নিজের লাঞ্চ নিতে নিতে শ্বশুরমশাইয়ের বিকেলের চায়ের সময় হয়ে গেছে।

কিন্তু কেউ ওর এই পরিশ্রমের মূল্য দেয় না। ইদানিং সুমনার মনে হয়, ওদের বাড়ির কাজের মেয়েটারও পরিশ্রমের দাম আছে। অন্তত সুমনার থেকে বেশি। কাজের মেয়ের বাড়িতে কোন অসুবিধে হলে শাশুড়িমা ওকে ছুটি দিয়ে দেন। ও যাতে কাজটা ছেড়ে না দেয় সেদিকে সবাই খেয়াল রাখে। তাইতো কোনো বাড়তি কাজ ওকে দিয়ে করানো যায় না।

অথচ সুমনা সবার মুখের সামনে খাবার দিতে দিতে নিজের আশা আকাঙ্খারো জলাঞ্জলি দিয়ে দিয়েছে। তবুও কারোর কোনো কৃতজ্ঞতা বোধ নেই। আজকাল সুমনার মনেহয় ওর জীবনের কোন মূল্যই নেই। এই সংসারে ওর থাকা না থাকায় কারো কিছু যায় আসে না। এই রোবোটিক জীবনে বেঁচে থাকার মতো কোনো রসদ খুঁজে পায়না সুমনা। আজকাল তাই সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।

সুমন্ত সবকিছুই বুঝতে পারে কিন্তু বৌয়ের প্রতি মায়ের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে না। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সুমন্ত। বয়স্ক মানুষদুটোকে কিছু বলতে গেলে যদি ভুল বোঝে ? যদি দুঃখ পায়? তাই সুমন্ত চুপ করে থাকে।

তবে এইভাবে চলতে থাকলে সুমনা খুব শিগগিরই ডিপ্রেশনে চলে যাবে - বোঝে সুমন্ত। তাইতো ছেলেমেয়ে দুটোকে মায়ের কাছে রেখে সুমনাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে কটা দিনের একান্ত অবসরে।

কলকাতা থেকে ভূবনেশ্বর পৌঁছে দুদিন খুব ঘুরেছে দুজনে। মন্দিরের শহর বলে এখানে প্রচুর ফরেনার আসে। তাই এখানে হোটেলগুলো ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের। এমন হোটেলে একটাদিন সারাবেলা বিছানার সুখ ভোগ না করলে চলবে কি করে?

বহুবছর পর সুমনার চোখের তারায় তারায় সেদিন আগুন দেখা দিয়েছিল। অলস সময়ের হাত ধরে সে আগুনে ধীরে ধীরে জ্বলে উঠেছিল সুমন্ত। নীরব সমর্পণে নদী হয়ে যাওয়া সুমনার উথাল পাথাল স্রোতে অনন্ত অবগাহন করেছিল সুমন্ত। আবহমান কালের কূল ছাপানো জোয়ারে প্রতিটি অবগাহনে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিল নতুন করে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register