Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৬২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৬২)

পুপুর ডায়েরি

আমার ইস্কুল নব নালন্দা। আমার জন্মের কয়েক মাস আগে, ১৯৬৭র ফেব্রুয়ারিতে জন্মেছে। নন্দিতা দাশগুপ্ত, আমার নার্সারির বেস্ট ফ্রেন্ড। আমাদের নার্সারির ক্লাসটা, ২৫ সাদার্ন অ্যাভিনিউ থেকে সরিয়ে, দু তিনটে বাড়ি আগের একটা লাল টুকটুকে ডক্টর্স ক্লিনিকের পিছন দিকের দোতলা বাড়িতে শিফট করে নেয়া হল। আমরা তখন নার্সারি-টু তে উঠেছি। কাঠের গেটের পাশে একটা ছোটো দরজা দিয়ে ঢুকে, দোতলায় উঠে যেতে হত। সেই সিঁড়িতে ওঠার আগে, ঢুকেই ছোট্ট রুমালের মতো, ওকে ঠিক মাঠ বলা যায় না, একটু মাটির উঠোন মতো, খোলা জায়গা। সে টুকু পেরোলে তারপর, দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। সেই ক্ষুদ্র মাঠেও রেক্টর আন্টিরা সি-স, যাকে বাংলায় বলে ঢে-কুচকুচ, লাগিয়ে দিয়েছিলেন। আর ছোট্ট দোলনা। এ জায়গাটুকু পেরোলেই যে সাদা দেয়ালের সিঁড়ি, তার গায়ে সিন্ডারেলার ম্যাজিক পাম্পকিনের ছবি আঁকা। আরও আরও সব নার্সারি রাইমসের ও। তত দিনে, নার্সারি ওয়ানে ফার্স্ট হবার দৌলতে রবীন্দ্র সদনের কাঠের স্টেজকে চেনা হয়ে গেছে পুপুর। প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশন কাকে বলে সেও জানা হয়ে গেছে। আর তার সঙ্গে, ফাংশন কাকে বলে সেই মহাজ্ঞান লাভ করে ধন্য হয়ে গেছে ছোটো মাথা। সেই যে জীবনের প্রথম রিহার্সালের রোমাঞ্চ!!

তার খাতিরেই তো আমাদের সিন্ডারেলার বল- এ পার্টিসিপেট করা হয়ে গেছে। খাস রবীন্দ্র সদনের স্টেজেই। মাত্র তিন বছর বয়েসে। এখন লিখতে বসে পেছনে ফিরে ভাবছি, শৈশবের কী পরম আনন্দ। পুপুর প্রজন্মের কম শিশুই এত তাড়াতাড়ি, স্টেজ, আর রিহার্সাল, আর পার্টিসিপ্যান্ট, ইত্যাদি শব্দ এবং কনসেপ্টকে ছুঁয়ে আসত। আরও অনায়াসে আত্মসাৎ হয়ে গেছিলো, বল ডান্স, তার মহিলা অংশগ্রহণকারিণীদের গাউন, তাতে অংশ নেওয়া পুরুষদের পাফড ফুল স্লিভ শার্ট আর ব্রিচেস পরার কায়দা। পুপু সেই বল- এ অন্যতম বিজ্ঞ রাজপুরুষ নাচিয়ে হিসেবে নেচে ফেলেছে তত দিনে। আর হলুদ ফুল স্লিভ জামা আর হলুদ ফ্ল্যানেলের ফুল প্যান্ট, মাথায় মুখোশ, ওল্ড ম্যাকডোনাল্ড-এর ফার্মের চিকেন হয়ে, হিয়ার আ চিক,দেয়ার আ চিক ও বলে সমবেত নৃত্য সেরে নিয়েছে। সে যে কী উন্মাদনা, ছোটো পুপু, বাবা মা, মাসিরা, মানিক কাকু, সব্বার। সবার চাইতে মজা বলে শিখেছিল পুপু, যে রিহার্সালের সময় নিজের রোল ছাড়া বাকি সবার অংশটুকুও দেখা যায়, ফলতঃ শেখাও যায়। সেই অনুষ্ঠানে, নব নালন্দা তার প্রথম, যাকে বলে ডেবিউ আত্মপ্রকাশ করতে, ছোটোদের আরও একটি ইংরেজি নৃত্যনাট্য রেখেছিল, সেই যে, স্লিপিং বিউটি। তাতে ব্ল্যাক ব্যালের ড্রেস পরা দুষ্টু ডাইনি, সাদা পোশাকে ফেয়ারি গড মাদার, সবাই পা তুলে ব্যালেরিনার মতই নাচত তো। পুপু বাড়িতে সারা দিন প্র‍্যাকটিস করে দেখাতো মা, বাবা, কাজের মানুষ পতির-মা মাসিকে…. …দেয়ার ওয়াজ আ লিটিল প্রিনসেস দেয়ার ওয়াজ আ লিটিল প্রিনসেস..

লং টাইম অ্যাগোও ও ও…. সেই অ্যাগো বললেই ঘুরতে ঘুরতে এসে পা লম্বা করে তুলে দিতে হবে। ধপাস করে পড়ে গেলে হবে না।

হুঁ হুঁ বাবা, একে বলে ব্যালে। তিন বছরের পুপুর মতো এত জ্ঞান এত ক্ষুদ্র বয়সে, কম লোকেরই গজিয়েছিলো।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register