- 4
- 0
পরদিন ইভান বিকেলে এসে ছুটিকে বলল - ছুটি তুই কার সঙ্গে খেলবি আজ? হীরা না কি আমি? দ্যাখ হীরা খেলতে চাইবে, কিন্তু পারবে না ছুটতে। আমার ছোটাছুটি ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা ভাল লাগে। বসে খেলা ভালো লাগে না। হীরা একদম ছুটতে পারে না। ওর সাথে খেলা যাবে না ব্যস। আর কোনও কথা না শুনেই ইভান ছুটির হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল। মা পেছন থেকে ডাক দিয়ে বললেন - এই ছুটি সন্ধের আগে ফিরবি। বাইরে এসে দেখল দাদিমা দাঁড়িয়ে, ইভান বলল- এইখানে একটু দাঁড়া, আমি আসছি। বলে ছুটে বাড়ির ভেতর গেল। ছুটি জিজ্ঞেস করে - দাদিমা, হীরা কোথায়? - ঘুমোচ্ছে ছুটি। ও ঘুমিয়ে পড়লে আমার য়্যায়সা লাগে যেন হামার কুনো কাম নাই আছে। -হীরার শরীর কি খারাপ থাকে দাদিমা? - হাঁ বেটা। বেটা ইয়ে ইভানকো মত কাহা করো। ও জানে না। হীরা জ্যাদা দিন জিন্দা নেহি রহেনেওয়ালা। ওর মাথায় জল আছে।- দাদিমা আঁচল দিয়ে চোখ মুছে। ছুটি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। - মাথায় জল? ওটা কিরকম অসুখ? -ক্যায়া জানে বেটা ডক্টর নে য়্যায়সা হি বতায়া। ছুটির খেলার ইচ্ছেটা মরে গেল। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। হীরার হাসিটা মনে পড়ল। ইতিমধ্যে ইভান এসেই হাত ধরে টান। - চল। দাদিমা বলল - তুমলোগ ইতনা তেজ মত ছুটো। ম্যানেজার লোগকো গাড়ি বহোত জোর সে আতা হ্যায়। কিন্তু কে কার কথা শোনে। ছুটিও ছুটল। কারখানার ভেতরে রাস্তার কোণ ঘেঁষে চা বাগানের অফিসঘর। বেশ সুন্দর একটু আলাদা রকমের ডিজাইনের অফিসঘরটি। ইভান দাঁড়িয়ে গেল। মুখে আঙ্গুল পুরে হাঁ করে তাকাতে তাকাতে আপনমনে বলল - উধর মে যানা হ্যায়। চলো ছুটি। বলেই দে ছুট। ইভানের দৌড়টা সত্যি দেখবার মতো। নিষেধ করার সময় পাওয়া গেল না। যাক ফিরে আসবে। দরোয়ান দাঁড়িয়ে। ইভান একছুটে একেবারে অফিসের বারান্দায়। দরোয়ান কিছু জিজ্ঞেস করছে মনে হলো। ইভান আবার উল্কার মত ছুটে এল। দরোয়ান তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে। ইভান এসে কোনও কিছু না বলেই ছুটিকে একরাশ কিল-ঘুষি দিতে শুরু করল। - আমার সঙ্গে গেলি না কেন? একলা আমি কেন গেছি? -আরে তুই থাম থাম। মরে যাব আমি। আমি তোকে যে বলব অফিসে ঢুকতে দেবে না তা বলার আগেই ছুটে গেলি উল্কার মত। - ও ক্যায়া হ্যায়? উল-কা? -উল্কা দেখিসনি? ফস করে আকাশ থেকে খসে পড়া তারা? তুই আকাশের দিকে তাকাস না? ইভান হাঁ করে শুনছে। ছুটি আকাশ দেখায়। এবার ইভান বলে - গগন? ছুটি বলে - খসে পড়া তারা দেখিসনি? ইভান এবার যেন কিছু বুঝল। বলল - টুটতা হুয়া তারা? - হ্যাঁ তুই এইরকম জোরে দৌড়াস। ইভান খিলখিল করে হাসতে লাগল। ছুটি বলে - দরোয়ান কি বলছিল রে? - বলল, অফিস মে তুমহারা ক্যা কাম? তুম কিসকে সাথ আয়ে হো? বললাম - ছুটি। বল রহা থা, ক্যা তুমহারা ইসকুল ছুট্টি হো গ্যয়া? আমি তোকে দিখাতে গেলাম তো দেখি কেউ নাই। জোর ভয় পাইয়ে গেলাম। তু বহোত বদমাস। - আরে আমি যেতাম তো। তুই যে এমন ডরপোক কে জানে। ইভান সময় নষ্ট করতে বিলকুল রাজি নয়। বলে - চল চল। ছুটির হাত ধরে সেইরকম উল্কার গতিতে ছুটতে লাগল। আর সাথে মুখ দিয়ে হুউউরর আওয়াজ। ওরা চলে গেল বেশ খানিকটা দূরে, সন্ধে ঘনিয়ে আসছে, দুদিকে সবুজ চা গাছের সারির ওপারে দূর দিগন্তে কখন যেন আগুনভরা সূর্যটা আলতারঙা হয়ে টুপ করে ডুবে গেল। ছুটি ভয় পেয়ে বলল - ইভান, মা বকবেন রে, চল আজ আর যাবো না। ডানদিকে রাস্তাটা বেঁকে গেছে উইলসন ইশকুলের দিকে, আর সোজা রাস্তাটা গেছে ঘুমটি চা বাগানের দিকে। একেবারে নি:ঝুম নির্জন। ছুটির কেমন একটা ভয় এলো। একটা ছমছমে সন্ধে। এই ছোট্ট ইভান আর সে, বড়রা কেউ নেই। ইভানও মনে হয় ভয় পেয়েছে। এইসময় সরসর শব্দ হলো, একটা কালো মিশমিশে লোক, হাতে একটা ছিংলা ( ভাঙাচোরা গাছের ডালের ছড়ি) চা গাছের সারির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। ইভান চিৎকার করে "ভূত" " ভূত "বলে তিরের গতিতে ছুটতে লাগল। ছুটি আর যেন পারছে না ইভানের সাথে পাল্লা হলো। মনে হলো পেছনে কেউ ছুটছে, তাকিয়ে দেখল লোকটা ছুটছে। একটা দমবন্ধ করা অবস্থা। তারা ছুটতে ছুটতে কখন যেন এসে গেছে বাড়ির সামনে। পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখল কেউ নেই। কোথায় গেল লোকটা? সদর গেটের সামনে মা, দাদিমা, হীরা, নেহা ও ইভানের মা দাঁড়িয়ে। মা বলে উঠলেন - কোথায় গিয়েছিলি? রাত হয়ে গেছে প্রায়, এরকম করলে আর তুই খেলতে যেতে পারবি না ছুটি। ইভান চিৎকার করে উঠল - নেহি। য়্যায়সা নেহি বলো। মা হেসে ইভানের চুল নেড়ে দিয়ে বললেন - তাহলে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। নেহা বলে উঠল - মাসিমা, এদিকে ভূত আছে? ইভান চেঁচিয়ে উঠল - ভূউউউত, বলে তার মা-কে জড়িয়ে ধরল। ইভানের মা উফফ করে একটা যন্ত্রণার আওয়াজ করে উঠল। দাদিমা তাড়াতাড়ি ইভানকে ছাড়িয়ে আনল। ছুটি বলল - কি হয়েছে? পাকা নেহা ছুটির কানে কানে ফিসফিস করে বলে - আমাদের আরেকটা ভাই নাহয় বোন হবে। ওটা মায়ের পেটে আছে এখন। খুব দুষ্টু। খুব হাত পা ছুঁড়ে। আমি মায়ের পেটে কান রেখে শুনেছি। লাল মত একটা সরু কাস্তের চাঁদ উঠল আকাশে। মা বললেন - ছুটি যা, হাতপা ধুয়ে পড়তে বোস।
ক্রমশ
0 Comments.