Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে বিজয়া দেব (পর্ব - ৩২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে বিজয়া দেব (পর্ব - ৩২)

গোপনে গড়েছে কত স্বপ্নিল সাঁকো

ওরা ছুটতে ছুটতে ছুটিদের কোয়ার্টারে এসে গেল। ছুটে ছুটে একে অপরকে ছোঁয়া, ব্যস, এই খেলা। এখন ছুটিদের উঠোনে চলছে খেলা। ছুটির বয়েসি ছেলেটির নাম ইভান। ওদের ঠাকুমা ওই ছেলেটির হাত ধরে পেছন পেছন ছুটিদের কোয়ার্টারে এলেন। ঠাকুমার হাত ধরে থাকা ছেলেটির নাম হীরা। ওর চাউনি দেখে মনে হল সে একটু কম দেখে চোখে। মা এগিয়ে এসে ঠাকুমাকে ঘরে নিয়ে বসালেন। ঠাকুমা খুব আলাপে মানুষ। মনেই হলো না এদেরকে ছুটিরা এই প্রথম দেখল। হীরা ঠাকুমার গা ঘেঁষে আছে। ছুটি খেলতে খেলতে হাঁফাতে হাঁফাতে একবার ঘরে ঢুকে হীরার হাত ধরে টান দিল। ঠাকুমা হা হা করে উঠলেন -যাবে যাবে। আজ নয়, ওর তবিয়তটা আজ ঠিক নাই ছুটি। বহোত আচ্ছা নাম হ্যায় তুমহারা - ছুটি। ঠাকুমা এরকমই হিন্দি বাংলা মিলিয়ে কথা বলে। এরমধ্যে নেহা ঘরে ঢুকে পড়েছে, তারপর ইভান।এখন চলছে ঘরের ভেতর দেখার পালা। ইভান ছুটির হাত ধরে আছে। নেহা ওদের থেকে খানিকটা বড়। এখন চলছে ছুটির তার যা কিছু সম্পদ আছে সব ইভানকে দেখানো। নেহার সেদিকে খুব নজর নেই, সে দেখছে কোয়ার্টারের জানালা দরজাগুলো। কোয়ার্টারটাতে কোনো জানালা খুব বড় তাতে গোলাকৃতি ডিজাইনের নেট লাগানো। কোনওটা মাঝারি আবার ওটা খোলা। নেট লাগানো নেই। মাঝের একখানা দরজা বিশাল আকারের। এরকম গরমিল দেখে নেহা অবাক। ঠাকুমাকে বলছে - দাদী, দেখা ? ইয়ে সব এক য্যায়সা নেহি। নেহা আসলে ছোটবেলাটা পেরিয়ে গেছে, একটু বেশি নজর অন্যদিকে, খেলাতে ততটা নয়।এদিকে ইভান আর ছুটি ছুটে বেরিয়ে গেল আবার। খুব হাওয়া চালিয়েছে হঠাৎ। হয়তো বৃষ্টি আসবে। ইভান আর ছুটি দু'দিকে হাত ছড়িয়ে ছুটছে। ৷ প্রথমদিনেই এত বন্ধু একসাথে পাওয়ার কী চমৎকার আনন্দ, কখন বিকেল হবে সেই অপেক্ষা শুধু। ইশকুল থেকে এসেই বইপত্র রাখতে না রাখতেই ইভান আর নেহার ডাক।

সেদিন বিকেলে হীরা এলো খেলতে। সে মোটাসোটা। ছুটতে গেলে পিছিয়ে পড়ে। বারবার বলতে থাকে - এ্যাই রুখো না। এ্যাই ছুটি, রুখো না। ছুটি দাঁড়িয়ে পড়ে। হীরা হাসে। হাত বাড়িয়ে বলে - পকড়ো। ছুটি হাত ধরে। কিন্তু হীরা ছুটির সাথে তাল মিলিয়ে ছুটতে পারে না। ছুটিকে গতি কমাতে হয়। তাতে ইভানের আপত্তি। -উসকো ছোড় দো। দাদী হীরাকো লে যাও। ছুটি বলে - এই ইভান, চল আমরা অন্য কিছু খেলি। ছোটাছুটি নয়। ইভান কি ভাবে। তারপর একটা চওড়া পাথর দু'হাতে তুলে বলে - ইয়ে হ্যায় শিবজী। তারপর হীরার সামনে পাথরটা রেখে একটা ভাঙা ছোট ইঁটের টুকরো এনে বলে - তুই এটা দিয়ে শিবজীর চোখ নাক মুখ আঁকতে থাক। আমরা ওই অফিস পর্যন্ত ছুটে আসব। হীরা কেমন ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল। -দাদী উসকো সমঝাও না! -হীরা বলে। -ঠিক আছে। আমাদের হীরা কত ভালো আঁকে। আমি আছি তো। লেকিন তুমলোগ ইতনা তেজসে মত দৌড়ো। ছুটি, তুমি কত ভাল মেয়ে আছো। এত না দৌড়ে হীরার কাছে বসো না। ও একা পড়ে গেছে। ছুটি ফিরে এসে বলল - ঠিক আছে দাদিমা, এই ইভান, আমি যাব না। হীরা হাসল। কেমন একটা হাসি। তখন সন্ধে নামছে। ছুটির কেন জানি মনে হলো হীরা বেশিদিন বাঁঁচবে না। বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠল। হীরা মন দিয়ে শিব আঁকছে। বাহ খুব সুন্দর আঁকল তো। -হীরা, খুব সুন্দর হয়েছে। হীরা হেসে বলে - ভালো ছুটি? - খুব খুব ভালো। এদিকে ইভানের মুখ ভার। ওদিকে মা ডাকছেন- ছুটি, সন্ধে হয়ে গেছে। শীগগির আয়।

ছুটির পড়তে বসে। পড়ায় মন বসে না। বাজে খাতায় লেখে -

" সন্ধের সময় দাদিমা, হীরা আর পাথরের গায়ে শিবের মুখ আঁকা, হীরার ওই কেমনতর হাসি, ইভানের রাগ -এই সময়টা কেমন লাগল। আমি লিখে বলতে পারব না। চোখে যা যা দেখি তার ভেতরেও আরও কী যেন আছে, কিছু একটা তো আছে। অন্যরকম, বোঝা যায় না। যা কলম দিয়ে লেখা যায় না। যার ছবিও আঁকা যায় না, যা মুখে বলেও বোঝা যায় না কিন্তু আমি ঠিক দেখতে পেয়েছি সেটা হীরার হাসিতে। "

ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register