Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পে সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী

maro news
গল্পে সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী

রোজনামচা

আটপৌরে সকালটি চোখ মেলতেই শুনতে পায় পাঁচিলের ওপর পাখিরা রাগরাগ গলাতে বিস্তর ক্যাচোর ম্যাচোর করছে। ভাবখানা এমন, দেবে তো চাট্টি বাসী রুটির টুকরো... তাতেও এতো বেলা! চোখেমুখে জল ছিটিয়ে সে রুটির সন্ধানে ক্যাসারোল হাতড়ায়। হুড়োহুড়িতে বেসিনের কল থেকে জল পড়তে থাকে টিপটিপিয়ে। গতকালের রোদে সারাদিন ঝামড়ে যাওয়া বারান্দার গাছগুলো কান পেতে শোনে সেই শব্দ, স্বস্তি পায় খুব... জানে এরপর তারা! পাখিদের রুটিতে ভাগ বসায় কয়েকটা কাঠবেড়ালি, বিনে পয়সার নাচ দেখিয়ে যায় লেজ তুলে!

মুখে ব্রাশ নিয়ে চায়ের জল ফোটার বুদ্বুদগুলি দেখে এই সময় তার খুব কবিতা পায়। কিন্তু গতরাতের বন্ধ অ্যান্ড্রয়েডটি সচল হতে যা সময় নেয় তাতে লাইনগুলো মগজের ভেতর বদলে যেতে থাকে ক্রমাগত। তারফলে নিশপিশে আঙুলগুলোকে স্বস্তি দিতে সে ভেজানো চাল গরম জলের ডেকচিতে দেয়, আজকে রান্না করার যাবতীয় উপকরণগুলি যথাসম্ভব সাজিয়ে ফেলে কিচেন স্ল্যাবে। এইসময় তার চায়ের সঙ্গীটি বিদ্রোহ ঘোষণা করে, "এরপর আর চা খাওয়ার কোনও মানে হয়!" হায় রে... কে যে কবে মানে বুঝতে চেয়ে চা খেয়েছে?

সে বাসী চুলের গার্টার খুলতে খুলতে ভাবে একফাঁকে ঠিক বসিয়ে দেবে আঙুলের চাপে সুপ্রভাতের কথাগুলি। রোজ ঠিক এইসময় তার দশটা হাত আর পঞ্চাশটা আঙুল না থাকার অভাব পীড়া দেয় খুব। একই সঙ্গে মগজে ধাক্কা দেয় পাশের কারখানায় বাজা আটটার সাইরেণ, না লেখা কবিতা আর ফুটে ওঠা ভাতের গন্ধ। ত্রস্তহাতে সে ওয়াশিং মেশিনে জল ভরতে ভরতে ভাবে দুধ না ডাল, কে তাকে বেশী সময় দেবে যাতে সে অন্ততঃ চারটে লাইন পোস্ট করে ফেলতে পারে! আসলে কবিতা লেখাটা না হওয়া পর্যন্ত তার মনে হয় না পুরোপুরি ঘুম ভেঙেছে তার!

আটপৌরে সকালটি এভাবেই গড়াতে গড়াতে দুপুর হয়। গেরস্থালির একরাশ অভিমান আর অভিযোগের বোঝা কাঁধে নিয়ে একসময় সন্ধ্যে, তারপর রাতও। মাত্রই দুটো হাত আর দশটা আঙুল নিয়ে সারাজীবন দ্বিধায় ভোগে... ঝাঁটা না ফোন কোনটার এখন অগ্রাধিকার। হৃদয় না মগজ কার দাবী আগে। নাহ্... এসব সত্যি কাউকে বলা যায়না। অনেক অপারগতা পীড়া দেয় তাকেও, অনেক মনখারাপি আঁচল টেনে রাখে। বয়েস হতে চলা সাড়ে সাতান্ন বছরের শরীরটা এক এক সময় জবাব দিয়ে দেয়... আর পারবো না। কিন্তু তার লজ্জা করে এ সব বলতে। তাই সে খুশিখুশি লেখাতে সুপ্রভাতটি সাজায়, চেষ্টা করে ছোঁয়াচে মনখারাপটি আরো জমিয়ে না বসে। সে নিজের কাছে কবে যেন‌ প্রতিজ্ঞা করেছে খুশিতে থাকার, আনন্দে থাকার আর আনন্দে রাখার।

মাথার ভেতরে ক্রমাগত বাজতে থাকা মাইগ্রেণের টরেটক্কাটিকে স্রেফ উপেক্ষা করে আঙুলে বৃষ্টিছন্দ আনার জাদু সে বহুদিন শিখে গেছে!

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register