Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৫৫)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৫৫)

পুপুর ডায়েরি 

একদিন বাবা এসে গেছেন অফিস থেকে, জগ এ জল ছিলো না। কী করে জল দেবো!? এতো বড়ো পেতলের কলসি, এতো ছোটো পুপু তো কাত করে ঢালতে পারবো না। ঘরের উঁচু টুলের ওপরে বসানো কলসি আমার মাথা সমান উঁচু প্রায়। আমি গ্লাস শুদ্ধু হাত কলসিতে ডুবিয়ে জল ভর্তি তুলে নিয়েছি…. মা রান্নাঘর থেকে দেখে, এসে কী ভীষণ বকছেন! এতো বকছেন!! বলছেন, পুরো জল ফেলে দিয়ে আবার জল ভরতে হবে রান্না ঘরে রাখা মস্ত জলের বালতি থেকে। নোংরা হাত কেউ কলসির জলে চোবায়? এমনি করেই কন্টামিনেশন হয়ে জল বাহিত রোগ ছড়ায় এ দেশে!! কোনো বোধ নেই??! … আরো কত কী… আসলে মা ঢাকা বোর্ডের বৃত্তি মানে স্কলারশিপ নিয়ে কলকাতার কলেজে পড়তে এসে, বড়ো হচ্ছিলেন বিখ্যাত ট্রপিক্যাল রোগের চিকিৎসক নবজীবন ব্যানার্জির বাড়িতে তাঁর মেয়ের মতই। তিনিই মাকে থিয়েটার রোডের বাড়িতে রেখে মেডিক্যাল কলেজে পড়ার জন্য প্রস্তুত করছিলেন। তাঁর তৈরী ক্লিনিকে চিকিৎসার করার কাজে হাতে খড়ি হয়েছিল মায়ের। ভীষণ ভালো ভাবে ইঞ্জেকশন দেয়া, স্যালাইন চালানো, ব্লাড প্রেশার দেখার মত কাজ করতে পারতেন। বাংলাদেশ থেকে আচমকা চলে আসতে বাধ্য হওয়া বাবা মা ভাইবোনদের প্রয়োজন মেটাতে, কলেজ ছেড়ে চাকরি করতে চুপিচুপি ঢুকে পড়ার আগে পর্যন্ত, ডক্টর ব্যানার্জির সাথে বিকেলে রোজ হাসপাতালে রুগী দেখতে রাউন্ড দেবার জীবন পিছনে রেখে এসেছিলেন মা। কলেরার মত জলবাহিত রোগের ওপরে গবেষণা করে ছিলেন নবজীবন ব্যানার্জি। কাজেই এ সম্বন্ধে মায়ের সচেতনতা ছিলো সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক অনেক বেশী।

কাজেই ভয়ানক বকুনি খাওয়া আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করবো। আমি তো একটু হেল্প করতেই চেয়েছিলাম। তার জন্য মাকে এই সন্ধ্যেবেলায় এত কষ্ট করতে হবে?!

কীরকম ভাবে টেনে নামিয়ে ছিলাম টুল থেকে এখন আর মনে নেই। গায়ের জামাটা পুরো ভিজে গেছিলো। তবে সব চেয়ে বেশী লেগেছিলো আঙুলের করগুলোতে। ছোট্ট হাত তো বয়েস আড়াই কি তিন। কলসির মুখের কাছে চওড়া কানায় আঙুল মুড়ে টেনে আনতে আঙুলের খাঁজ গুলোতে কেটে বসে যাচ্ছিলো।

দুই ধাপ সিঁড়ি তারপর রান্নাঘর। সামনে এক ফালি লাল টুকটুকে দাওয়া। কলসি টেনে নিয়ে গিয়ে কাত করে দাওয়ার পাসের নালিতে জল ফেলে দিলাম। মগে ভরে বালতি থেকে জল নিয়ে কলসি ভরে ফেললাম প্রায় আদ্ধেকটা। কিন্তু এবারে ফের টেনে ঘরে নিয়ে যাওয়াই মুশকিল। বড্ড কঠিন। একটা ধাপ সিঁড়ি তুলতে তুলতে, মা বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখতে পেয়ে গেলেন। আমায় সিঁড়িতে দেখে, আবার কী বকা, কী বকা।

এখনো বকুনির টোনটা শুনতে পাই… মর্মার্থ হলো, “ এই মেয়ে কোনো দিন মানুষ খুন করবে, এর এতো জিদ! বললেই হোতো যে মা এত বড়ো কলসির জলটা চেঞ্জ করতে পারবো না?! তা নয়, নি:শব্দে এই কাণ্ড করে চলেছে!! ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি…

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register