Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে সুদীপা বর্মণ রায়

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে সুদীপা বর্মণ রায়

শৌখিনতা বনাম মানবিকতা

রায় বাড়ির গিন্নিমা সৌদামিনী দেবীর বয়স হলেও দাপট আর শৌখিনতা কমেনি। এখনও বাড়িতে তারই কথা চলে।সবাই তার কথা মত চলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।সকাল সকাল উঠে নিজের ঘরদোর নিজেই পরিষ্কার করেন।জরুরি দরকার ছাড়া কারুর সাহায্য নিয়ে কাজ করা উনি পছন্দ করেন না।নিজে খাটেন আর অন্যদের সবার দিকে চোখ রাখেন ,সবকিছু ঠিকঠাক চলছে কিনা। সারাক্ষন ধবধবে সাদা থান পরে ঘুরে ঘুরে সব কাজ করে চলেছেন, অথচ এতটুকু দাগ লাগে না শাড়িতে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কিভাবে থাকতে হয় ওনাকে দেখে লোকে দশবার শিখতে পারে।সেই যবে থেকে কত্তাবাবু গত হয়েছেন, গিন্নিমা সাদা থানই নিজ অঙ্গে একমাত্র পরিধান করেছেন। নাতি নাত্নীরা বড্ড প্রিয় গিন্নিমার।তাদের জন্য রকমারি খাবার বানানো ওনার আরো একটা শৌখিনতা। কিন্তু বাইরের খাবার বাড়িতে এনে খাওয়া বারণ। বাচ্চারা বলে ,ঠাম,তোমার নিমকি,ঘুঘনী, নাড়ু ভালো।কিন্তু তুমি যদি একবার পিৎজা খাও না ,, উনি বলেন--ম্যা গো, রোককে করো,ও তোমরা বাইরেই খাও। নাতি নাত্নীরা সারাক্ষণ চটকাচ্ছে ঠামকে,কিন্তু,বাইরে থেকে এসে হাত পা ধুয়ে, তবেই তেনার পালঙ্ক জুড়ে জমে আসর। কিছুটা গল্পের পর যে যার পড়াশোনা করতে ধরে নিয়ে যায় বাবা মা রা।তাও "বাবা বাছা" করে,ঠামের সামনে বাচ্চাদের বকা মারা নিষিদ্ধ। ঠাম শান্ত হয়ে বাচ্চাদের বুঝিয়ে এমনভাবে বলেন যে ,কেউ অমান্য করার কথা ভাবতেও পারেন না। সেদিন ,সকাল থেকেই ঝোড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। সবার জন্য নিজের হাতে খিচুড়ি রাঁধছেন সৌদামিনী দেবী। দুপুরে সবাইকে খেতে বসিয়ে ,পিছনের বাগানে গেছেন একটা গন্ধরাজ লেবু তুলতে। হঠাৎ গেটের কাছে গোলমাল শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখেন, সর্ব অঙ্গে কালি মাখা পাড়ার ছেলে রাধু। অসুখে ভুগে মাথায় গোলমাল দেখা দেওয়ায় বাপ -মা মরা ছেলেটার বাড়িতে ঠাঁই হয় না আর। ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু কোনো ক্ষতি করে না কারুর। কিকরে কিজানি, আজ মস্ত বড় সদর দরজা খোলা পেয়ে দারোয়ানের চোখ এড়িয়ে ঢুকে পড়েছে।তাকে ধরার জন্য চাকর-বাকর, দারোয়ান ছুটছে,সে ও বাড়ির সামনের বিরাট গাড়িবারান্দা,চাতাল জুড়ে ছুটছে। সৌদামিনী দেবী কে দেখতে পেয়ে ছুটে এসে,মা ,,,,,,বলে জড়িয়ে ধরে। সবাই তো ভয়ে কাঁটা। সৌদামিনী দেবী একটু চমকে গেলেও শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। একটু হেসে বলেন, "কি রে , খাবিনা দুপুরে?রান্না করেছি তো ,চ "। শান্ত হয়ে রাধু বলে,"মা খেতে দে, খিদা পাইসে,খিচুড়ি করসিস,গন্ধ পাইসি"। নিজে হাতে রাধুকে পেট ভরে খাওয়ান তিনি। শান্ত রাধু চলে যায়। হঠাৎ এক নাতি,অর্পণ বলে,"ঠাম তোমার সাদা শাড়ি কাদা মাখামাখি হয়ে গেছে"। ঠাম হেসে বলেন,"সাদা ধবধবে শাড়ি আমার শৌখিনতা ভাই, আর আজকে কাদা মেখেছি মানবিকতার জন্য । শৌখিনতা যেন মানবিকতার ওপরে না যায় ভাই,সেটা দেখো"।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register