Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

প্রবন্ধে রতন বসাক

maro news
প্রবন্ধে রতন বসাক

 বাবার কথা কম বলা হয়

মায়ের অবদানের কথা একটুও ছোট না করে একটা কথা বলতে চাই, সেটা হল বাবার অবদানের কথা। সত্যি খুব কম বলা হয়, বাবা যতটা করে থাকেন সেটা কোন সাহিত্য বা চর্চায় খুব একটা শোনা যায় না। বাবা অনেক কিছু করলেও তাঁর অবদান ঢাকাই পড়ে থাকে। বাবা মুখ বুজে চুপচাপ নিজের কর্তব্য পালন করতে থাকেন। কে, কী বলল না বলল, তার উপর বাবার কর্তব্য কম কিংবা বেশি হয় না।

বাবা, মা ও সন্তান নিয়ে আমাদের সমাজে একটা পরিবার গঠিত হয়। সেই পরিবারের সমস্ত রকম দায়দায়িত্ব বাবার ওপর থাকে। সুখে-দুখে বাধা-বিপদে বাবা সব সময় পরিবারের সাথেই থেকে হাল ধরে রাখেন। যাতে করে পরিবারটি ঠিকমতো এগিয়ে যেতে পারে। ভয় পেয়ে কিংবা নিজের স্বার্থের কথা ভেবে বাবা কোন সময়ই সরে থাকেন না। নিজের থেকে পরিবারের প্রতি বাবা কর্তব্য ঠিকঠাক পালন করে থাকেন।

বাবা সন্তানের মধ্যে নিজের স্বরূপ দেখতে পান। তাঁর অপূর্ণ স্বপ্নগুলো যাতে সন্তান পুরণ করতে পারে, তার চেষ্টা করতে থাকেন। সন্তান কোন কাজে সফল হলে বাবা মনে করেন, আমি সফল হয়েছি। সন্তানের খুশিতেই বাবার খুশি। অনেক চেষ্টা করার পর সন্তান যদি অসফল হয় তখন বাবা সব থেকে বেশি কষ্ট পান। প্রত্যেকটি বাবাই চান যে, সে নিজে যতটা না উন্নতি করতে পেরেছে, তার থেকে বেশি উন্নতি যেন তাঁর সন্তান করতে পারে।

একটা পরিবার চলাতে গেলে অর্থের প্রয়োজন হয়, আর সেই অর্থের যোগান ব্যবসা কিংবা চাকরি করে বাবা করে থাকেন। তার জন্য যত কষ্টই করতে হোক না কেন, বাবা কখনই পিছে সরে আসেন না। পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে বাবা সবার আগে এগিয়ে যাবেন। তাঁর সাধ্যের বাইরে গিয়েও অর্থের জোগানোর ব্যবস্থা করেন। প্রয়োজন হলে এমনকি নিজের খরচার পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে, প্রয়োজনীয় অর্থ যোগান দেবার চেষ্টা করেন।

বাবা নিজের ভাঙা চশমা পুরনো চটি কিংবা গায়ের ছেঁড়া ফাটা গেঞ্জিটা খুব সহজে বদলান না। এমনকি নিজের অসুস্থতার জন্য ওষুধও কিনতে চান না। সেই অর্থ দিয়ে সন্তানের বই ও শখের জিনিস কিনে দিতে বেশি তৎপর থাকেন। সন্তানের খুশি বাবার কাছে সবচেয়ে আগে। বাবা নিজে কষ্ট করতে পারেন কিন্তু সন্তানের কষ্ট দেখতে চান না। সন্তানকে ভালো রাখা বাবা নিজের কর্তব্য মনে করেন।

সন্তান মানুষের মতো মানুষ হয়ে যখন অর্থ উপার্জন করে বাবার হাতে এনে দেয়। তখন বাবা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান আর তাঁর চোখে জল ভরে আসে। বলেন এই অর্থ আমি কী করবো? বরঞ্চ তোর কাছে রেখে দে, তোর ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। বাবা সারাজীবন সন্তানের পিছনে অর্থ খরচা করেও, এক পয়সাও নিতে চান না তেমন কোন বিশেষ প্রয়োজন না হলে। সন্তানের মধ্যেই তাঁর সুখ লুকিয়ে থাকে।

সন্তান বিপথে গেলে কিংবা নেশার কবলে পড়লে। বাবা ক্রুদ্ধ হয়ে অনেক সময় প্রহার করেন ও অপ্রিয় কথা বলেন। এটা সন্তানকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করার জন্য। সাময়িকভাবে সন্তানের বাবার এই ব্যবহার ভালো না লাগলেও, তার বোঝা উচিত বাবা তার ভালোর জন্যই এসব করে থাকেন। বাবা কোন সময় চান না যে, তাঁর কষ্টের ফসল ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে যাক। বাবা হওয়া সত্যিই মুখের কথা নয়। অনেক রকম ত্যাগ স্বীকার করে পরিবার ও সন্তানদের সব রকম সুখ সুবিধার ব্যবস্থা করতে হয়। এসব করতে গিয়ে বাবাকে নিজের সুখের কথা ভুলে যেতে হয়। আর্থিক ও অন্যান্য ঘর ও বাইরের সমস্যাগুলো বাবাকেই সমাধান করতে হয়। বাবা নিজের কোন কষ্টের কথা কাউকেই বলতে পারেন না। কেননা পরিবারের সবাই যে তাঁর থেকে অনেক ছোট। তাই নিজের কষ্ট নিজেই হাসি মুখে সব মানিয়ে কম করেন।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register